নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় অবস্থিত ঘোষগ্রাম কফিলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়টি দীর্ঘদিন ধরে নানা সমস্যায় জর্জরিত। আশানুরূপ সংখ্যায় ছাত্র-ছাত্রী উপস্থিত থাকলেও শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, শ্রেণিকক্ষ সংকট, বৈদ্যুতিক ফ্যান না থাকাসহ অন্তহীন সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পাঠদান ব্যবস্থা দিনদিন মুখ থুবড়ে পড়ছে। পাঠদান চলমান রাখতে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের শিক্ষকমণ্ডলী শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে বাধ্য হয়ে খোলা আকাশের নিচে আশ্বিন মাসের কখনো বৃষ্টি কখনো কাঠফাটা রোদ আর ভ্যাপসা গরমের মধ্যে তিরপল টাঙিয়ে শিক্ষার্থীদের গাদাগাদি করে বসিয়ে পাঠদান কার্যক্রম কোনো রকমে চালিয়ে নিচ্ছেন।
জানা গেছে, উপজেলার গোনা ইউনিয়নের ঘোষগ্রাম, বেতগাড়ী, ভবানীপুর, লক্ষীপুর, পীরেরা, মালঞ্চী, কৃষ্ণপুর, আন্ধার কোটা, কালিকাপুর, আতাইকুলা, চাপড়া গ্রামসহ আশপাশের বিভিন্ন গ্রামের ছেলে-মেয়েদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করার লক্ষ্যে স্থানীয় বেশ কয়েকজন শিক্ষানুরাগীর পরামর্শে কফিল উদ্দিন খন্দকার পীর সাহেব (কালিগ্রাম) প্রায় ৩ একর ৯৭ শতক জমি দিয়ে ১৯৪৫ সালে জানুয়ারি মাসে ঘোষগ্রাম কফিলিয়া উচ্চ বিদ্যালয় নামে স্কুলটি নির্মাণ করা হয়। সেই সময় ইট ও টিনের ছাউনি দিয়ে ৪টি কক্ষ তৈরি করে পাঠদান কার্যক্রম শুরু করা হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে শিক্ষার গুণগত মান ভালো হওয়ায় প্রায় প্রতিবছরই এই বিদ্যালয়ে শতভাগ পাসের হারসহ একাধিক মেধাবী শিক্ষার্থী বৃত্তি পেয়েছে। তার ধারাবাহিকতায় ১৯৮৫ সালে জুন মাসে বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত করা হয়।
১৯৯৩-১৯৯৪ অর্থবছরে সরকারি বরাদ্দে একটি দ্বিতল ভবন নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে ৭টি শ্রেণিকক্ষ, ১টি ছাত্রীকক্ষ, ১টি খেলার মাঠ, ৬৪ শতাংশ আবাদি জমিসহ ৩টি মার্কেট রয়েছে। পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী ও মানসম্পন্ন পাঠদানের মাধ্যমে সুনাম আর গৌরব নিয়ে দীর্ঘ ৭৪ বছর অতিবাহিত হলেও আধুনিকতার ছোঁয়া থেকে আজও বঞ্চিত। বর্তমানে এই বিদ্যালয়টি শ্রেণিকক্ষ সংকট, বৈদ্যুতিক ফ্যান, শিক্ষার্থীদের বসার বেঞ্চ, প্রয়োজনীয় আসবাবপত্রসহ নানা অবকাঠামোগত সমস্যায় জর্জরিত। সুষ্ঠুভাবে পাঠদান ও পাঠ গ্রহণে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে শ্রেণিকক্ষ সংকট। আর শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে বাধ্য হয়ে খোলা আকাশের নিচে তিরপল টাঙিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের গাদাগাদি করে বসিয়ে কোনো রকম পাঠদান কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। শিক্ষকদের দাপ্তরিক কাজ ও বসার জন্য নেই কোনো আলাদা কক্ষ। ঝড়-বৃষ্টির সময় ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপত্তাসহ নানান বিরম্বনার সম্মুখীন হতে হয়। তারপরও এলাকার ছেলে-মেয়েরা শিক্ষা গ্রহণের অদম্য আগ্রহ শক্তি ও জীবন ঝুঁকির আতঙ্ক মাথায় রেখে প্রতিনিয়ত পাঠগ্রহণ করছে।
বর্তমানে বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণি হতে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ৯০৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। প্রতিদিন প্রায় ৮ শ'র বেশি শিক্ষার্থী পাঠদান গ্রহণ করে বলে অত্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোজাহার হোসেন বলেন। চলতি বছরে শিক্ষা সপ্তাহে উপজেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচিত হন।
ঘোষগ্রাম কফিলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নবম শ্রেণির পলক পারভেজ, অমিত হাসান, সুমাইয়া আকতার দশম শ্রেণির তানিয়া আকতার ও সজিব আহমেদসহ অনেকেই বলেন, শ্রেণিকক্ষের অভাবে আমরা খোলা আকাশের নিচে রোদ গরম ও বৃষ্টি বাদল উপেক্ষা করে অনেক কষ্টের মধ্য দিয়ে গাদাগাদি করে বসে পাঠ গ্রহণ করছি। রোদ-বৃষ্টি আর গরমে পরিপূর্ণ বা সুষ্ঠুভাবে পাঠ গ্রহণ করাও সম্ভব হয় না। মেয়েদের কমন রুম, কম্পিউটার ল্যাব ও গ্রন্থাগার না থাকার কারণে আমরা আধুনিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবুল হাসনাত খান হাসান বলেন, বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ সংকটসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে পরিত্যক্ত ভবনগুলো ভেঙে আধুনিক মানের নতুন ভবন নির্মাণ এবং শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য সকল সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় তাহলে সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে শিক্ষার্থীরা পাঠ গ্রহণ করতে পারবে।
রাণীনগর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল জলিল বলেন, ঘোষগ্রাম কফিলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়সহ আরো কয়েকটি বিদ্যালয়ের সমস্যা চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে জানানো হয়েছে। সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য কর্তৃপক্ষ দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে আশা করছি। এর মধ্যে ওই বিদ্যালয়ে একটি নতুন ভবন বরাদ্দ হয়েছে। আশা করছি খুব শিগগিরই নির্মাণ কাজ শুরু হবে।