গাঁটের পয়সা খরচ করে ৩৫ লাখ শিক্ষার্থীর উপবৃত্তি পৌঁছে দিচ্ছে বিকাশ

শেখ নজরুল ইসলাম |

ছাত্রীদের ঝরে পড়া ও বাল্যবিয়ে রোধ করাসহ নারী শিক্ষার সার্বিক উন্নয়নে সিকি শতাব্দীরও বেশি সময়  ধরে উপবৃত্তি দিয়ে আসছে সরকার। শিক্ষাবান্ধব আওয়ামী লীগ সরকার গত এক দশকে এই উপবৃত্তির আকার-পরিধি ও টাকার পরিমাণ বহুগুণ বৃদ্ধি করেছে।

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় উপবৃত্তির উপকারভোগীদের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি, উপবৃত্তি বিতরণের  পদ্ধতি পরিবর্তন করে সরাসরি সরকার থেকে শিক্ষার্থীর হাতে মোবাইলের মাধ্যমে  টাকা পৌঁছানো হচ্ছে।  ডিজিটালাইজেশনের কল্যাণে উপবৃত্তি বিতরণে স্বচ্ছতা, দ্রুততা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে।

২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের জুলাইয়ের পর থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত উপবৃত্তির টাকা মোবাইলের মাধ্যমে দেয়া হচ্ছে। ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দ থেকে বাড়তি কোন খরচ ছাড়াই এবং স্বচ্ছতার সাথে অগ্রণী ব্যাংক ও বিকাশের যৌথ উদ্যোগে মাধ্যমিক স্তরের উপবৃত্তি বিতরণ শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্ট সবার মধ্যে স্বস্তি নিয়ে এসেছে।

প্রকল্প কর্মকর্তারা দৈনিক শিক্ষাকে জানান, মাধ্যমিক পর্যায়ের উপবৃত্তির সুবিধাভোগী শিক্ষার্থীর বড় অংশই ছাত্রী। প্রায় ৩৫ লাখ উবৃত্তিভোগী শিক্ষার্থীর নির্ভুল ডাটাবেজ তৈরি করে একটি বড় সাফল্য দেখিয়েছে বিকাশ। ডাটাবেজটি তৈরি করতে এই প্রকল্পে নিজেদের গাঁট থেকে ইতিমধ্যে ২৩ কোটি টাকাও ব্যয় করেছে বিকাশ। সরাসরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে নিজেদের তত্বাবধানে ডাটাবেজ তৈরি হওয়ায় উপবৃত্তি নিয়ে দুর্নীতির সুযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। যথাযথ তালিকা তৈরি হওয়ায় ভুয়া শিক্ষার্থী দেখিয়ে অন্য কারো মোবাইলে উপবৃত্তির টাকা নেয়া বা মধ্যসত্বভোগীদের কাছে টাকা চলে যাওয়া বন্ধ হয়েছে। ৩৫ লাখ শিক্ষার্থীর অভিভাবকের মোবাইলে টাকা পৌঁছে যাওয়ার সাথে সাথেই তারা হাঁটা পথের দুরত্বে এজেন্টের কাছে গিয়ে বাড়তি কোন খরচ ছাড়াই উপবৃত্তির টাকা তুলতে পারছেন। সারাদেশে বিকাশের ২ লাখ ৪০ হাজার নেটওয়ার্কের কারণে টাকা তোলায় কোনো ভোগান্তি নেই। এমনকি সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি বিতরণের ক্যাশআউট চার্জটি বিকাশ নিজেই বহন করছে।  

কর্মকর্তারা বলেন,  ১৯৯৪ থেকে ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের জুন পর্যন্ত মাধ্যমিক উপবৃত্তির টাকা বিতরণ করা হতো ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে সরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে। ব্যাংকগুলো সার্ভিস চার্জ নেয়ায় উপবৃ্ত্তির  অর্থ বিতরণে সরকারের খরচ বাড়তো। পরবর্তীতে ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস রকেট এর মাধ্যমে বিতরণ শুরু হয়। ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের জুন পর্যন্ত উপবৃত্তি বিতরণ করে ডাচবাংলার মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস রকেট। এ সময়ে রকেটকেও সার্ভিস চার্জ দিতে হতো।

২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে অগ্রণী ব্যাংক-বিকাশ এর মাধ্যমে উপবৃত্তি বিতরণ শুরু হলে বিকাশ নিজেই ক্যাশআউট চার্জ বহন করা শুরু করে। ফলে সরকারের খরচ যেমন কমেছে তেমন শিক্ষার্থীদেরও কোন বাড়তি অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে না। 

বিকাশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কামাল কাদীর দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, “আমাদের নিরবিচ্ছিন্ন এজেন্ট নেটওয়ার্কের কল্যাণে সারাদেশের সব শিক্ষার্থী বন্ধের দিনে, এমনকি গভীর রাত পর্যন্ত উপবৃত্তির টাকা ক্যাশ আউট করতে পারছেন কোনোরকম বাড়তি খরচ ছাড়াই।

তিনি আরও বলেন, “মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা যেন খুব সহজেই সবচেয়ে কম সময়ে উপবৃত্তির অর্থ পেয়ে তা যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারেন সেই লক্ষ্যেই কাজ করছে বিকাশ। কোভিড-১৯ এর মত বিশেষ পরিস্থিতিতেও দ্রুততা, স্বচ্ছতা এবং যথাযথভাবে উপবৃত্তির টাকা শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দেওয়া নিশ্চিত করেছি। বাংলাদেশ সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশের উদ্যোগের পথ ধরেই শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে এই উপবৃত্তি প্রকল্পের অংশ হতে পেরে আমরা গর্বিত।”

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের হারমোনাইজড স্টাইপেন্ড প্রোগ্রামের প্রকল্প পরিচালক শরীফ মুর্তজা মামুন বলেন, দেশব্যাপী ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে উপবৃত্তির টাকা পৌছে দেয়ার ব্যাপারটি বিকাশের মাধ্যমে এখন সহজ হয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীদেরও সুবিধা হয়েছে অনেক। এর মাধ্যমে লাভবান হচ্ছে সরকারও। মূল্যবান সময় ও রাষ্ট্রীয় অর্থের সাশ্রয় হয়েছে। বিভিন্ন দপ্তরের জটিলতা কমে পুরো প্রক্রিয়াটি হয়েছে আরো দ্রত ও নিরাপদ।

তিনি বলেন, “যখন উপবৃত্তির টাকা ম্যানুয়ালি দেওয়া হতো, তখন অনেক কিছু করার সুযোগ ছিল। শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবকদেরও বেশ সমস্যায় পড়তে হতো। কিন্তু এখন বিকাশের মাধ্যমে উপবৃত্তি দেওয়ায় ঝামেলাবিহীনভাবে সব কিছু স্বচ্ছতার সঙ্গে করা সম্ভব হচ্ছে।”


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ - dainik shiksha এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0041780471801758