গাইবান্ধার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক নানা রকম তদবিরের কাজে ব্যস্ত থাকায় নিয়মিত শ্রেণিকক্ষে উপস্থিত থাকছেন না। সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এ ব্যাপারে ভূমিকা রাখার ক্ষেত্রেও বিভিন্নভাবে বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন। ফলে জেলার সার্বিক প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, জেলার বিভিন্ন উপজেলায় এক শ্র্রেণির শিক্ষক অন্য শিক্ষকদের বিভিন্ন কাজের দালালি নিয়ে প্রতিনিয়ত নিজের স্কুল ফাঁকি দিয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়, জেলা ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস, এমপিসহ সরকারি রাজনৈতিক দলের নেতাদের বাসা ও চেম্বারে সময় কাটান। দিনের পর দিন স্কুলে উপস্থিত না থেকে অনেক ক্ষেত্রে বদলি শিক্ষকের মাধ্যমে ক্লাসের ব্যবস্থা করে থাকেন ওইসব শিক্ষক নামধারীরা। ফলে সংশ্লিষ্ট স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। সদর উপজেলার সাবেক এক শিক্ষা কর্মকর্তার সময়ে ওই চক্রটি বেপরোয়া হয়ে ওঠে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। সম্প্রতি মো. আব্দুস সালাম সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার হিসেবে যোগদান করার পর ওই চক্রটি কিছুদিন নিষ্ক্রিয় থাকলেও কয়েকদিনের ব্যবধানে আবারও দালালির কাজে নেমে পড়েন। অনুমোদনহীনভাবে অর্থাৎ ছুটি ছাড়াই তারা অন্য শিক্ষকের জিপিএফ-এর কাজ, বদলির ব্যাপারে তবিরের কাজে ব্যস্ত থাকেন। তারা শিক্ষা কর্মকর্তাদের নামে বিভিন্ন শিক্ষকের কাছ থেকে অর্থ আদায় কার্যক্রম অব্যাহত রাখেন।
স্কুল ফাঁকি দিয়ে উপজেলা অফিসে এসে তদবির করার প্রেক্ষিতে সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. আব্দুস সালাম বিষয়টি বুঝতে পেরে সম্প্রতি সদর উপজেলার ধুতিচোরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হান্নানের বিরুদ্ধে কৈফিয়ত তলবের নোটিশ দেন। কিন্তু তাতেও দালাল শিক্ষকদের কার্যক্রম কমেনি। তারা সংঘবদ্ধ হয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. আব্দুস সালামের অপসারণ দাবি করে বিক্ষোভ করেন।
এ ব্যাপারে সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. আব্দুস সালাম বলেন, প্রধান শিক্ষক আব্দুল হান্নান বিভিন্ন সময়ে একাধিক ক্লাস্টার অফিসারের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন। এ কারণে কোন কর্মকর্তাই তাকে ক্লাস্টারে রাখতে চান না। শুধু তাই নয় একাধিকবার তাকে মৌখিকভাবে সতর্ক করা হলেও তার মাত্রা আরও চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। ওই শিক্ষক সম্পর্কে গোটা উপজেলায় নেতিবাচক মন্তব্য রয়েছে। সম্প্রতি নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই বিনা অনুমতিতে কর্মস্থল ত্যাগ করে উপজেলা শিক্ষা অফিসে এসে জিপিএফ কাজের কথা বলে তিনি অফিস সহকারী অহিদুল ইসলামকে মারপিট করেন এবং তাকে টেনে হিঁচড়ে শিক্ষা কর্মকর্তার কক্ষে নিয়ে উভয়ের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ করে হুমকি দেন।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল হান্নান তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, নিজের জিপিএফ কাজের জন্য তিনি উপজেলা শিক্ষা অফিসে যান। সেখানে অসৌজন্যমূলক আচরণ, অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ এবং হুমকি দেয়ার কথা অস্বীকার করেন তিনি।
জেলা শিক্ষক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি প্রধান শিক্ষক মো. জহুরুল ইসলাম এবং সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ারুল ইসলাম বাবু বলেন, আব্দুল হান্নান উপজেলা শিক্ষা অফিসের কর্মচারীর সঙ্গে যে আচরণ করেছে, তা গোটা শিক্ষক সমাজের জন্য নিন্দনীয়। এটি শিক্ষকসূলভ আচরণের পরিপন্থী।