গায়ের চামড়া কামড়ে মাটির দিকে তাকিয়ে লড়েছি, নুসরাতের আইনজীবী

ফেনী প্রতিনিধি |

ফেনীর আলোচিত নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার শুরু থেকে রায়ের দিন পর্যন্ত ঘটনাপ্রবাহ ও মামলার বাঁকে যে নামটি সবচেয়ে বেশি এসেছে সেটি হলো বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট ও ফেনী জজকোর্টের আইনজীবী এ্যাডভোকেট শাহজাহান সাজু।

এ মামলার প্রভাবশালী আসামিদের লোভনীয় প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে বিনা পারিশ্রমিকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত লড়ে যাওয়ায় ফেনীসহ দেশবাসীর প্রশংসাও কুড়িয়েছেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে সব মাধ্যমে সর্বমহলের প্রশংসায় ভাসছেন সাজু।

আলোচিত চাঞ্চল্যকর এ মামলাটি পরিচালনা নিয়ে কথা হয় শাহজাহান সাজুর সঙ্গে। তিনি বলেন, চলতি বছরের ২৮ মার্চ থেকে যে লড়াই শুরু করেছিলাম অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়প্রতিষ্ঠার জন্য ছয় মাস ১৭ দিন পর সে আইনী লড়াইয়ে জয়যুক্ত হয়েছি। নুসরাতের হত্যাকারীরা সর্বোচ্চ দণ্ডে দণ্ডিত হয়েছে।

‘এ মামলায় লড়ার কারণে আমার সহকর্মীরাই আমাকে টিপ্পনি কেটেছেন, অশোভন ভাষায় কথা বলেছেন এবং অনেকে মিথ্যাচার করেছেন। সেসব বিষয় তোয়াক্কা করিনি। সত্য প্রতিষ্ঠাদীপ্ত পায়ে এগিয়ে গিয়েছি। এ লড়াই সহজ ছিল না, অনেক কষ্ট শিকার করতে হয়েছে, গায়ের চামড়া কামড়ে মাটির দিকে তাকিয়ে আইনী লড়াই লড়েছি।’

এ লড়াইয়ে জয়ী হওয়ার জন্য সাজু প্রথমেই কৃতজ্ঞতা জানান সৃষ্টিকর্তা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি। কৃতজ্ঞতা জানান ফেনীর নারী ও শিশু আদালতের বিচারক, সব কর্মকর্তা-কর্মচারী, জেলা জজ বাহাদুরের আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারী, পিবিআই কর্তৃপক্ষ, ফেনীর পুলিশ সুপারসহ পুলিশ প্রশাসন, জেলা প্রশাসকসহ জেলা প্রশাসন, প্রিন্ট মিডিয়া, ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক ও সর্বোপরি দেশবাসীর প্রতি।

দীর্ঘ প্রায় সাড়ে ছয় মাস মামলা পরিচালনার বিষয়ে শাহজাহান সাজু বলেন, এই মামলায় বাদীর আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা আমার জীবনের এক বিরল অভিজ্ঞতা। প্রধানমন্ত্রীর একান্ত আন্তরিকতা ও সার্বিক তত্ত্বাবধানের কারণে মাত্র ৬১ কার্যদিবসেই মামলাটি নিষ্পত্তি হয়েছে।

শাহজাহান সাজু বলেন, এই রায়ের মধ্যদিয়ে প্রমাণ হয়েছে যে, দেশে বর্তমান সময়ে আইনের শাসন আছে। অপরাধ করলে অপরাধী যত বড়ই হোক না কেন শাস্তি পায়।

নুসরাতের পরিবারের বিষয়ে সাজু বলেন, নুসরাতের পরিবারকে আমি নিজের পরিবার করে নিয়েছি, শুধু মামলা চালাকালীন নয়, বাকি জীবনটাও এ পরিবারটির সঙ্গে থাকার চেষ্টা করব। মাত্র ছয় মাস ১৭ দিনের মাথায় রায় পেয়েছে। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের বিরল ঘটনা।

রায়ের পর এ্যাডভোকেট সাজুকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন নুসরাতের ভাই রায়হান।

রায়ের ব্যাপারে শাহজাহান সাজু বলেন, বর্তমান সময়ে কোন খুনী বা অপরাধীকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়া হয় না। আইন করে খুনের বিচার বন্ধ করা হয় না। রাষ্ট্র কোন অপরাধীকে রাজনৈতিক পরিচয়ে রক্ষা করে না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তাঁর পরিবারের ১৭ জন সদস্যকে খুন করার পর যেই খুনীরা রাষ্ট্রীয় বেতার ও টেলিভিশনে খুন করেছে বলে নিজেরা স্বীকারোক্তি দেয়ার পরও বিচার পেতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৪০ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে।

আইন করে সামরিক শাসক জিয়া বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বন্ধ করেছিলেন। খুনীদের ইনডেমনিটি দিয়েছেন। জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা বানানো হয়েছে। বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছে। আজ সেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হয়েছে। খুনীরা শাস্তি পাচ্ছে, অল্প সময়ে নুসরাতের পরিবার বিচার পেয়েছে।

মামলা পরিচালনার ব্যাপারে সাজু বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এই মামলায় বিচার পেতে নুসরাতের পরিবারের এক টাকার কাগজও কিনতে হয়নি। সরকার পক্ষের সহায়তার পাশাপাশি নিজের পকেট থেকে মামলার সব খরচ বহন করেছি।

‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে নুসরাতের ভাই মামলার বাদী ব্যাংকে চাকরি পেয়েছে। সরকারী সাক্ষীরা যথাসময়ে আদালতে এসে সাক্ষ্য দিয়েছেন। নুসরাতের গ্রামের বাড়িতে সার্বক্ষণিক পুলিশ পাহারা দেয়া হয়েছে।’

আলোচিত এ মামলাটির রায়ের ব্যাপারে সাজু বলেন, দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলতে চাই, নুসরাতের মামলাটি দেশে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এর ধারাবাহিকতায় বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার বিচারও বর্তমান সরকারের আমলে অতি অল্পসময়ে নিষ্পত্তি হবে।

মামলার দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা ও অকুণ্ঠ সমর্থনের জন্য শাহজাহান সাজু কৃতজ্ঞতা জানান ফেনী জজ কোর্টের পিপি হাফেজ আহম্মদ, প্রবীণ আইনজীবী ও আওয়ামী লীগ নেতা আক্রামুজ্জামানসহ নুসরাতের পক্ষে অবস্থান নেয়া সব আইনজীবী ও মামলার বাদীসহ সাজু এ্যান্ড এ্যাসোসিয়েটসের সদস্যদের।

সবার কাছে দোয়া চেয়ে এ্যাডভোকেট শাহজাহান সাজু বলেন, সবাই দোয়া করবেন যেন ভবিষ্যতে এই দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার প্রতিটি সংগ্রামে লড়াই করতে পারি।

এ্যাডভোকেট সাজুর বিষয়ে নুসরাতের ভাই রাশেদুল হাসান রায়হান বলেন, শাহজাহান সাজু শুধু বিনা পয়সায় আমার বোনের মামলাটি লড়েননি, বিপদে-আপদে আমাদের পরিবারের ওপর ছায়া হয়ে রয়েছেন। শাহজাহান সাজু সারাজীবন আমাদের পরিবারের অভিভাবক হয়ে থাকবেন।

বৃৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) বেলা সোয়া ১১টায় ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোঃ মামুনুর রশিদ নুসরাত হত্যা মামলায় ১৬ আসামির ফাঁসির রায় ঘোষণা করেন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন কলেজ পরিচালনা পর্ষদ থেকে ঘুষে অভিযুক্ত সাংবাদিককে বাদ দেওয়ার দাবি - dainik shiksha কলেজ পরিচালনা পর্ষদ থেকে ঘুষে অভিযুক্ত সাংবাদিককে বাদ দেওয়ার দাবি পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0050921440124512