দৈনিক শিক্ষাডটকমসহ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানতে পারলাম, সম্প্রতি সোসাল মিডিয়ায় গুজব ছড়ানোর অভিযোগে শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে বেশ কয়েকজন শিক্ষককে। এটি পুরো শিক্ষক সমাজের জন্যই অত্যন্ত লজ্জাকর ও পরিতাপের বিষয়। গুজব ছড়ানো রাষ্ট্রীয় এবং ধর্মীয় কোন দিক থেকেই সমর্থনযোগ্য নয়। কোন সাধারণ বিবেকবান মানুষও এটি করতে পারেন না। যারা প্রকৃত ধর্মপ্রাণ, দেশপ্রেমিক ও মানবপ্রেমিক তারাতো কখনোই এটি করবেন না। গুজব ছড়ানো বা অপপ্রচার করা মানেই মিথ্যা বলা। ইসলাম ধর্মে বলা আছে, তোমরা নিশ্চিত না হয়ে কিছুই বলবে না এবং কোন কিছুকে এক রত্তিও কমিয়ে বা বাড়িয়ে বলবে না। অন্যান্য ধর্মও সমর্থন করে এই বক্তব্য। কেননা সকল ধর্ম মতেই মিথ্যা বলা মহাপাপ।
যারা ধরা পড়েছে, পড়ছে, তাদের অপকর্মের কথা আমরা সবাই জেনেছি, জানছি। এমন আরও লোক আছে যারা উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে প্রতিনিয়ত ফেসবুকসহ বিভিন্ন সোসাল মিডিয়াতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে চালাচ্ছে অনেক অপপ্রচার, ছড়াচ্ছে নানান গুজব। তারা আসল তথ্য গোপন ও বিকৃত করে; সময়, স্থান ও উপলক্ষ বদল করে; বিভিন্ন রঙ্গরস, ধর্মীয় ও কর্মীয় অনূভুতি যুক্ত করে; কাট-পেস্ট ও এডিট করে তৈরি এবং প্রচার করছে অনেক কিছুই।
সেগুলোকে দ্রুত লাইক ও শেয়ার দিচ্ছে তাদের গ্রুপভুক্ত সমমনারা। আর তা দেখে হুজুগে পড়ে, গভীরভাবে চিন্তাভাবনা না করে, ভালো মন্দ বিবেচনা না করে, সেগুলোকে লাইক ও শেয়ার করছেন অনেক সাধারণ শিক্ষক। এভাবে না বুঝেই তারা বাস্তবায়ন করছেন দুষ্টু লোকদের এজেন্ডা। এক্ষেত্রে অত্যন্ত সজাগ ও সতর্ক থাকা উচিত সব শিক্ষকের। ফেসবুক-মেসেঞ্জারসহ বিভিন্ন সোসাল মিডিয়াতে যা পাওয়া যায় তার সবই অন্ধের মত বিশ্বাস করা, লাইক করা, শেয়ার করা কোন বিবেকবান ও দায়িত্বশীল মানুষের তথা শিক্ষকের কর্ম হতে পারে না। ধর্মও এটি সমর্থন করে না। শিক্ষকের সদাই মনে রাখতে হবে, তিনি একজন শিক্ষক। সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি তাঁর দায়িত্ব-কর্তব্য সচেয়ে বেশি। শুধু আইনের কাছে নয়, নিজের বিবেকের কাছেও তাঁর জবাবদিহিতা অপরিসীম। তাই এমন কোন কিছুকেই তিনি পোস্ট, লাইক ও শেয়ার দিতে পারেন না যার দ্বারা সমাজে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে এবং যা আইনসিদ্ধ নয়। তদুপরি যার তথ্যসূত্র অস্বীকৃত, অনিশ্চিত ও বিতর্কিত তাও তিনি প্রচার করতে পারেন না। বরং পেশাদার সাংবাদিক কর্তৃক পরিচালিত ও গ্রহণযোগ্য মিডিয়া ও প্রকাশনার সঠিক তথ্য প্রচার করে তাঁকেই মোকাবেলা করতে হবে অপেশাদার লোক পরিচালিত ও সোসাল মিডিয়ার অপপ্রচার বা গুজব।
যিনি মনেপ্রাণে শিক্ষক তিনি কোনভাবেই কোন অবস্থাতেই ছড়াতে পারেন না কোন রকম অপপ্রচার বা গুজব। অন্যভাবে বলা যায় যিনি গুজব ছড়ান তিনি প্রকৃতপক্ষে শিক্ষকই নন। নিয়োগপত্র পেলেই, ছাত্রছাত্রী পড়ালেই, বেতনভাতা পেলেই শিক্ষক হওয়া যায় না; শিক্ষক হয়ে উঠতে হয়। শিক্ষকতা শুধু চাকরি নয়, মহান ব্রত। অনেক কিছু পাওয়ার মধ্যে নয়, ভালো কিছু দেওয়ার মধ্যেই শিক্ষকতার আনন্দ ও সফলতা। শিক্ষকের থাকতে হয় সর্বোচ্চ সম্মানবোধ, ন্যায়নীতিবোধ ও সতাদর্শ। শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আমরা অনেকে শিক্ষক হয়ে উঠতে পারিনি বলেই আমাদের শিক্ষক সমাজের অধিকাংশ আজ বিতর্কিত, অপমানিত, অসম্মানিত, লজ্জিত ও মর্মাহত। শুধু গুজব ছড়ানো নয়, আরও অনেক ধরনের অপকর্ম ও দুর্নীতির সাথে যুক্ত বলে জানা যায় বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পরিচয়ধারী কিছু লোক। তাদের অপকর্মের দায়ে বার বার খাটো হচ্ছে পুরো শিক্ষক সমাজ। এতে ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকসহ সর্বস্তরের মানুষের কাছে হ্রাস পাচ্ছে সকল শিক্ষকের মর্যাদা। তাই এদের বিরুদ্ধে এখনই সোচ্চার হওয়া উচিত সব শিক্ষকের।
লেখক : মো. রহমত উল্লাহ্: অধ্যক্ষ, কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।
[এই মতামতের সাথে দৈনিক শিক্ষার সম্পাদকীয় নীতির মিল নাও থাকতে পারে। এই মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন]