গোদাগাড়ীতে অবাধে চলছে কোচিং বাণিজ্য

গোদাগাড়ী (রাজশাহী) প্রতিনিধিঃ |

সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেও রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে চলছে রমরমা কোচিং ও প্রাইভেট বাণিজ্য। পুরানো কৌশল পরিবর্তন করে শিক্ষকরা নতুনভাবে শিক্ষা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। 

উপজেলার সরকারি স্কুল কলেজ ও এমপিওভুক্ত বিভিন্ন শিক্ষা  প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা বাসা ভাড়া নিয়ে বেনামে চালাচ্ছেন এই কোচিং বাণিজ্য। গোদাগাড়ী সদরে আফজি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক আমিনুল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম, আব্দুল বারি, মহিশালবাড়ী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক মনিরুল ইসলাম, ইকবাল হোসেন, আফরাফুল ইসলাম, আবজাল হোসেন, ইউসুফ আলী, মহিশালবাড়ী শাহ সুলতান কামিল মাদ্রাসার শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ, আল-ইসলাহ ইসলামি একাডেমির কুরবান আলী, নাজমুল ইসলাম, গোদাগাড়ী সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুল মালেক, মেসহাব উদ্দীন সিয়াম, রাজাবাড়ী হাট উচ্চ বিদ্যালয়ের মোঃ বিউটি, সৈবুর রহমান সোনাদিঘি উচ্চ বিদ্যালয়ের জিয়াউলহকসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক নিজের বাড়ীতে ৩০/৩৫ জোড়া  বেঞ্চ তৈরী করে প্রতি ব্যাচে ৫০ থেকে ৬০ শিক্ষার্থী নিয়ে চালাচ্ছে কোচিং ও প্রাইভেট বাণিজ্য। একদিন পর পর এক এক ব্যাচকে পড়ানো হয়। একজিন শিক্ষক মোট ৭/৮টি ব্যাচ পড়ান। অনেক শিক্ষক নিজের স্কুলে বিভিন্ন অজুহাতে অনুপস্থিত থেকেও কোচিং ও প্রাইভেট চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

শুক্রবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে গোদাগাড়ী সদরে জিনিয়াস কোচিং সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, কোচিংয়ে ক্লাসি নিচ্ছেন আফজি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের গণিতের শিক্ষক মোঃ আমিনুল ইসলাম। দৈনিক শিক্ষা.কম এর গোদাগাড়ী প্রতিনিধি আব্দুল বাতেন এসময় ছবি ছবি তোলেন। ছবি তোলার বিষয়টি শিক্ষক মোঃ আমিনুল ইসলাম জানতে মোবাইল ফোনে প্রতিবেদককে গালি-গালাজ করে এবং প্রাণনাশের হুমকি দেয়। এই ঘটনায় তার বিরুদ্ধে গোদাগাড়ী মডেল থানায় নিরাপত্তা চেয়ে সাংবাদিক আব্দুল বাতেন সাধারণ ডায়েরী করেন।

প্রশাসনের চোখের সামনে কোচিং ও প্রাইভেট বাণিজ্য চললেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। শিক্ষকদের এসব অবৈধ কার্যক্রমে হতাশা প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থী, অভিাবক, সচেতন মহল।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলা সদরেই রয়েছে প্রায় অর্ধশতাধিক কোচিং সেন্টার। এর মধ্যে উপজেলার পশু হাসপাতাল রোডে জিনিয়াস কোচিং সেন্টার, কনফিডেন্স কোচিং সেন্টার,  ডাইং পাড়া বিদ্যুৎ অফিসে পাশে শহিদুল কোচিং সেন্টার , আফজাল ইংলিশ প্রাইভেট হোম, হাফিজ প্রাইভেট হোম, উচ্ছাস কোচিং সেন্টার, জিয়া কোচিং হাউস, সুলতানগঞ্জের গোল্ডেন কোচিং সেন্টার,এ প্লাস কোচিং সেন্টার, ডায়নামিক কোচিং সেন্টার, মহিশালবাড়ীর নিশান কোচিং সেন্টার, সাফল্য কোচিং সেন্টার, আইডিয়াল কোচিং সেন্টারসহ উপজেলার শিবসাগর, পিরিজপুর, বিদিরপুর, প্রেমতলী, রাজাবাড়ী, বাসুদেবপুর, ফরিদপুর, কাশিমপুর, কাঁকনহাটসহ পাড়া মহল্লায়  বিভিন্ন স্থানে শিক্ষকরা গড়ে তুলেছেন তাদের বাণিজ্য প্রাইভেট কেন্দ্র। এসব কোচিং সেন্টারে সকাল সাড়ে ৫টা থেকে দুপুর ও বিকালে এমন কি সন্ধ্যা পর্যন্ত চলেছে পাঠদান। 

গোদাগাড়ী পৌরসভা, কাঁকনহাট পৌরসভা ও উপজেলায় রয়েছে দেড় শাতাধিক কোচিং ও প্রাইভেট কেন্দ্র। আইনের প্রয়োগ না থাকায় দিনে দিনে কোচিং ও প্রাইভেট পড়ানো বেড়েই চলছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার প্রায় সব বিদ্যালয়ের কোনো না কোনো শিক্ষক কোচিং, প্রাইভেট বানিজ্যের সাথে জড়িত রয়েছেন। দেখা গেছে, ছোট্ট একটি ঘরে বেঞ্চে বসিয়ে  ১ ঘণ্টার কোচিংয়ে ৪০ থেকে ৫৫ জন শিক্ষার্থীকে একত্রে পড়ানো হচ্ছে। এতে দায়সারা পাঠদান হলেও শিক্ষার কোনো পরিবেশ নেই।  শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ১ ঘণ্টা করে মাসে ১২ দিন তাদের পড়ানো হয়। তাদের কোচিং ফি বাবদ মাসে পাঁচ’শ থেকে ১৯’শ টাকা করে দিতে হচ্ছে। কোচিংয়ের বিষয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে জানতে চাইলে গোদাগাড়ী স্কুল এ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী নাইম, আশহাব  তানিম, ইউসুফ সহ অন্যানরা বলেন, ‘কি করবো, কোচিংয়ে না পড়লে পরীক্ষায় পাস করবো কিভাবে? ক্লাসে তো আর সব কিছু শেখানো হয় না। 

মহিশালবাড়ী গ্রামের অভিভাবক কামাল হোসেন ও সিএনবি আচুয়া গ্রামের এমএ শাহিন বলেন, ‘স্কুল কলেজ মাদ্রাসা গুলিতে ঠিকভাবে ক্লাস হয় না। বছরের শুরুতে বিনামূল্যে বই সরকার দেন, শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য কিন্তু ঠিকমত ক্লাস হয় না। বিভিন্ন অজুহাতে জানুয়ারী মাস পার করে ফেব্রুয়ারী মাসেও অনেক স্কুল-কলেজে পুরোপুরি ক্লাস শুরু হয়নি। কলেজগুলিতে ‘অফডে’ দেখিয়ে সপ্তাহের ৩/৪ দিন পালা করে শিক্ষকগন প্রতিষ্ঠানে আসেন না। ৯ টায় ক্লাস শুরু হয়ে দুপুরের আগে শেষ হয়। আর বেশীরভাগ স্কুল, কলেজ ও মাদরাসায় সরকারী নির্দেশ মানা হয়না। সরকারী নির্দেশমত ৬ ঘন্টা ক্লাস না চালিয়ে ৩/৫ ঘন্টা করা হয়। আর বৃহস্পতিবারে হাফডে’র নামে ২ থেকে ৩ ঘন্টা ক্লাস হয়। ফলে সিলেবাস শেষ না। বাধ্য হয়েই ছেলে মেয়েদের কোচিং, প্রাইভেট বানিজ্যে পড়তে দিতে হচ্ছে। এমনও শিক্ষক রয়েছে তার কাছে  প্রাইভেট না পড়লে পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়া যায় না বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

নিষেধ সত্ত্বেও কেন কোচিং কেন করাচ্ছেন তা জানতে শিক্ষকদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা কোন মন্তব্য করতে রাজি হন নি। তবে কোচিংয়ে পড়ানোর বিষয়ে একাধিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছে জানতে চাওয়া হলে তারা বিষয়টি স্বীকার করেন। গোদাগাড়ী আফজি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল রহমান বলেন, আমার স্কুলের কিছু শিক্ষক আমাকে না জানিয়ে এসব করছে। তবে যাতে আর না করে সে বিষয়ে তাদের সতর্ক করব।

কোচিং সেন্টার চালানো ও সাংবাদিককে হুমকির বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ শিমুল আকতারকে জানালে তিনি বলেন, বিষয়টি আমি দেখছি। এব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য - dainik shiksha হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা - dainik shiksha ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক - dainik shiksha সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি - dainik shiksha ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার - dainik shiksha রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0047471523284912