চট্টগ্রামে পুলিশকে না জানিয়ে গোপনে দাফনের চেষ্টার সময় পঞ্চম শ্রেণীর এক ছাত্রীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে নগরের ডবলমুরিং থানার ডিটি রোডের ১ নম্বর সুপারিওয়ালা পাড়ার রফিক সওদাগরের বাড়ি থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। নিহত আকিলা ওসমান ইকরা (১৩) ওসমান ফারুক বিপলুর মেয়ে। ইকরা পোস্তারপাড় আসমা খাতুন সিটি করপোরেশন বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী। শুক্রবার (১০ জুলাই) সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, তার বাবা ও সৎ মায়ের দাবি, মেয়েটি জানলার গ্রিলের সঙ্গে ওড়না দিয়ে দোলনা বানিয়ে খেলতে গিয়ে ফাঁস লেগে মৃত্যু হয়েছে। তবে মেয়েটির নানার অভিযোগ, তার বাবা ও সৎ মা মেয়েটিকে বিভিন্ন সময় নির্যাতন করতেন। এবারও নির্যাতন করে হত্যা করেছে। তবে ঘটনার পর মেয়েটির সৎ মাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যাওয়া হলেও বিষয়টি স্বীকার করেনি পুলিশ।
ডবলমুরিং থানার উপ পরিদর্শক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার রাতে এক কিশোরীর মৃত্যুর খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। গিয়ে দেখেন মেয়েটিকে দাফনের জন্য কাফন পড়িয়ে ফেলা হয়েছে। মেয়েটির বাবা ও সৎ মা পুলিশকে জানায়, গ্রিলের সঙ্গে সিল্কের একটি ওড়না দিয়ে দোলনা বানিয়ে খেলতে গিয়ে ফাঁস লেগে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে মেয়েটি। তাকে তারা উদ্ধার করে আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। বিষয়টি পুলিশের কাছে বিশ্বাসযোগ্য না হওয়ায় রাত ২টার দিকে মেয়েটির লাশ উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়। শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে ময়নাতদন্ত শেষে লাশটি পরিবারকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ডবলমুরিং থানার পরিদর্শক জহির হোসেন বলেন, ‘আপাতত অপমৃত্যু মামলা নেয়া হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে হত্যার আলামত পাওয়া গেলে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
মেয়েটির নানা নুর মোহাম্মদ বলেন, ‘আমার ভাগ্নির সঙ্গে ওসমান ফারুকের বিয়ে হয়। মেয়েটির জন্মের পর ওসমান ফারুকের সঙ্গে ভাগ্নির বিচ্ছেদ হয়ে যায়। পরে ওসমান আরেকটি বিয়ে করে। আমার ভাগ্নিরও অন্যত্র বিয়ে হয়। সে এখন তার স্বামীর সঙ্গে সৌদি প্রবাসী। মেয়েটি তার বাবার কাছে ছিল। বিভিন্ন সময় তার সৌদি প্রবাসী মা তাকে ফোন করলে সৎ মা ও বাবার শারীরিক নির্যাতনের কথা জানাতেন। তার দাদী সৎ মা ও বাবার নির্যাতন থেকে নাতনিকে আগলে রাখার চেষ্টা করতেন। কিন্তু তিনিও বয়স্ক হওয়ায় নাতনিকে বাঁচাতে পারেননি। মেয়েটিকে তার সৎ মা ও বাবা মিলে মেরে ফেলেছে। আমার বোন বৃদ্ধ। আমি থানায় মামলা করতে গিয়েছিলাম। ওসি শুক্রবার রাতে থানায় যেতে বলেছেন। আমরা সৎ মা ও তার বাবার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করবো।’