১১ থেকে ১৬ গ্রেডভুক্ত কর্মচারীদের প্রশাসনিক ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা পদে পদোন্নতি এবং বেতন গ্রেড উন্নয়ন ও গৃহঋণ প্রদানের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ আন্ত: শিক্ষা বোর্ড কর্মচারী ফেডারেশন। রোববার (১১ নভেম্বর) ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ফেডারেশনের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় এ দাবি জানানো হয়।
সভা শেষে কর্মচারীদের দাবি বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে স্মারকলিপি দেন ফেডারেশনের নেতারা। এ সময় আন্ত: শিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব কমিটি ও ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান মু. জিয়াউল হক কর্মচারী নেতাদের আশ্বস্থ করে বলেন, খুব শিগগিরই সাব কমিটির বৈঠক ডাকা হবে। ওই বৈঠকে কর্মচারীদের দাবি নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
সভায় ফেডারেশনের নেতারা বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে একাধিকবার তাগিদ দেয়া হলেও বোর্ড কর্তৃপক্ষ তা আমলে নিচ্ছেন না। দ্রুত কর্মচারীদের পদমর্যাদা উন্নয়ন ও গৃহঋণ প্রদান করা না হলে আন্দোলন কর্মসূচির অংশ হিসেবে প্রথমে কর্মবিরতিতে যাবেন। দাবি আদায়ের কৌশলের অংশ হিসেবে পদমর্যাদা উন্নীত করে ঋণ প্রদানের দাবিতে সব শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করেছেন কর্মচারী ফেডারেশনের নেতারা।
সভাপতির বক্তব্যে আন্ত: শিক্ষা বোর্ড কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি মো. বাবুল আকন বলেন, বোর্ডের এক কর্মকর্তার নাম উল্লেখ না করে বলেন, এক ব্যক্তির কারণে আমরা এগুতে পারছি না। তবে দাবি আদায়ে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন চালিয়ে যাবো। সরকার কর্মচারীদের জীবনমান উন্নয়ন ও জনপ্রশাসনে গতিশীলতা আনতে সব মন্ত্রণালয় এবং এর অধীনস্থ বিভাগ, অধিদপ্তর, পরিদপ্তর এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর ১১-১৬ গ্রেডভুক্ত কর্মচারীদের পদের নাম ও বেতন গ্রেড উন্নীতকরণের পদক্ষেপ নেয়া হলেও শিক্ষা বোর্ডগুলোতে এটি চালু না হওয়ায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন কর্মচারী ফেডারেশনের এ নেতা।
সভায় বক্তব্য দেন, বাংলাদেশ আন্তঃশিক্ষা বোর্ড কর্মচারী ফেডারেশনের মহাসচিব জাহাঙ্গীর আলম, সিনিয়র সহ সভাপতি সৈয়দ মকবুল আহমদ, সহ সভাপতি মো. আব্দুল মান্নান ও মোস্তাফিজুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব যথাক্রমে মোঃ হুমায়ুন কবির লালু, মো. জাহেদ হোসেন, মো. জালাল উদ্দিন, এমরান হোসেন ও আবু জাফর, অর্থ সম্পাদক আবুল কামাল আজাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল বাছেত ও আব্দুল খালেক, আর্ন্তজাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহবুব আলী, দপ্তর সম্পাদক নাসির উদ্দিন মোল্লা, প্রচার সম্পাদক আজিজুল হক, শিক্ষা, সাংস্কৃতি ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক তাজুল ইসলাম, আইন ও দরকষাকষি বিষয়ক সম্পাদক মনির আহম্মদ, নির্বাহী সদস্য যথাক্রমে মো. সরোয়ার কায়সার, নাসির উদ্দিন, গোলাম রব্বানী, মো. রজব আলী ও মো. আনোয়ার হোসেন।
উল্লেখ্য গত ৩০ জুলাই সরকারি কর্মচারীদের গৃহঋণ প্রদান সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করে অর্থ মন্ত্রণালয়। নীতিমালা অনুযায়ী একজন কর্মচারী সর্বনিম্ন ২০ লাখ টাকা থেকে ৭৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ গ্রহণ করতে পারবেন। বর্তমানে বিভিন্ন শিক্ষাবোর্ডে গৃহঋণ চালু থাকলেও একেক বোর্ড এককে ধরণের নীতিমালা অনুসরণ করে। বোর্ডগুলো একই অর্ডিন্যান্স দ্বারা পরিচালিত হওয়ায় গৃহঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে অভিন্ন নীতিমালা অনুসরণ করা প্রয়োজন।
ফেডারেশনের নেতারা বলেন, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী ইতিপূর্বে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের সিস্টেম এনালিস্ট পদটি সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্ট পদে, নিম্নমান সহকারী পদটি অফিস সহকারী কাম সাঁট মুদ্রাক্ষরিক এবং পরে অফিস সহকারী কাম সাঁট মুদ্রাক্ষরিক পদটি অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে, পিয়ন পদটি এমএলএসএস পদে এবং পরে এমএলএসএস পদটি অফিস সহায়ক পদে, ঝাড়ুদার পদবি পরিচ্ছন্নতা কর্মী পদে পরিবর্তন করা হয়েছে। বর্তমানে কিছু পদ বিদ্যমান আছে যা বোর্ডের জনবল কাঠামোতে ছিল না এবং বর্তমানেও নেই। কিন্তু বিভিন্ন সময় সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী পদগুলো পরিবর্তন করা হয়।
শিক্ষা বোর্ড কর্মচারী ইউনিয়নের নেতারা জানান, ২০১৭ খ্রিস্টাব্দের ২৯ আগস্ট জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে ১১-১৬ গ্রেডভুক্ত যেসব পদের পদমর্যাদা উন্নীতকরণে করা হয়েছে সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রদান এবং প্রস্তাবিত পদসমূহের বিকল্প পদের নামের তথ্য সংগ্রহ করতে বলা হয়েছিলো। সে প্রেক্ষিতে গত ১৯ জুলাই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে গত তিন বছরে ১১-১৬ গ্রেডভুক্ত যেসব পদের পদমর্যাদা উন্নীতকরণ করা হয়েছে সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য এবং প্রস্তাবিত পদনাম সমূহের বিকল্প পদনামের তথ্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে জানাতে বলা হয়েছিলো। গত ২৪ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে শিক্ষা বোর্ডগুলোকে পাঠানো চিঠিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চিঠির চাহিদা অনুযায়ী তথ্য ৩ কর্মদিবসের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে বলা হয়েছিলো।
ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বোর্ড ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দের অর্ডিন্যান্স দ্বারা পরিচালিত একটি স্বশাসিত প্রতিষ্ঠান। ধারা অনুযায়ী বোর্ডের পদের সংখ্যা, পদের নাম এবং বেতন ভাতাদি নির্ধারণের ক্ষমতা বোর্ডের ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে। বোর্ড অর্ডিন্যান্সের ক্ষমতাবলে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে ১১-১৬ গ্রেডভুক্ত কর্মচারীদের পদমর্যাদা প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা পদে বেতনগ্রেডসহ উন্নীত করা হয়েছে।
নবগঠিত ময়মনসিংহসহ সারাদেশে শিক্ষাবোর্ডের সংখ্যা ১১টি। তবে, রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডে ইতিমধ্যে এ/ও এবং পি/ওর দাবি বাস্তবায়িত হয়েছে বলে ফেডারেশন নেতারা জানিয়েছেন।
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্থাপনের প্রাথমিক অনুমতি, পাঠদানের অনুমতি, একাডেমিক স্বীকৃতি, ম্যানেজিং কমিটি ও গভর্নিংবডির দেখভাল, পাবলিক পরীক্ষা নেয়া ও ফল প্রকাশের কাজ করে শিক্ষাবোর্ডগুলো।