কাগজপত্রে ক্রুটি না থাকলেও ত্রুটি আছে জানিয়ে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ না দেওয়ায় ভিয়েতনামগামী যাত্রীর বোর্ডিং পাস দেয়নি মালিন্দ্রো এয়ার লাইন্স। এর ফলে পাপপোর্ট ও ভিসা ঠিক থাকা সত্বেও টিকেট কেটেও ভিয়েতনাম যেতে পারেনি ওখানকার কলেজে ভর্তি হওয়া বাংলাদেশী এক ছাত্র (পাসপোর্ট নম্বর বিএক্স০৩৮৬১৩৬)। এর আগেও মালিন্দ্রো এয়ার লাইন্সে ১৩ ছাত্রের কাছ থেকে ঘুষ না পেয়ে কাগজপত্রে ত্রুটি থাকার কথা জানিয়ে ফ্লাইট মিস করানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এভাবে প্রায় যাত্রীদের হয়রানীর অভিযোগ রয়েছে মালিন্দ্রো এয়ার লাইন্সের বিরুদ্ধে। অভিযোগ উঠেছে মালিন্দ্রো এয়ার লাইন্সের কতিপয় স্টাফ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে যাত্রীদের প্রতারনায় ফেলে অর্থ হাতিয়ে নেয়।
ভুক্তভোগী মোঃ মিঠুন ইসলাম জানান, রাজশাহীর চারঘাট উপজেলায় তার বাড়ি। তার বাবা গ্রাম পুলিশে চাকুরী করেন। স্থানীয় কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচ এসসি পাস করে ভিয়েতনামের একটি কলেজে ভর্তি হওয়ার আবেদন করেন। অনলাইনে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র উপস্থাপনের পর ভিয়েনামের ব্যাক নিন কলেজ কর্তৃপক্ষ তার ভর্তি নেন। এরপর তাকে ভিয়েতনামের ভিসা দেওয়ার জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশে নিযুক্ত ভিয়েতনাম এম্ব্যাসির কাছে আমন্ত্রনপত্র পাঠান গত ৫ জুলাই। ভিয়েতনামের ব্যাকনিন কলেজের আমন্ত্রনপত্রের প্রেক্ষিতে ভিসার আবেদন করার পর গত ২৮ আগষ্ট তিনি ভিসা পান ভিয়েতনাম এম্ব্যাসি থেকে।
ভিসা পাওয়ার পর গত ২৭ নভেম্বর ভিয়েতনামে যাওয়ার জন্য মালিদ্রো এয়ার লাইন্সের টিকেট সংগ্রহ করেন। গত বৃহস্পতিবার দিনগত রাত দেরটার দিকে মিঠুনের ফ্লাইট ছিলো। রাত ৮ টায় তিনি শাহজালাল বিমানবন্দরে যান। এয়ারপোর্টে মালিন্দ্রো এয়ার লাইন্সে রাত ৯ টায় বোর্ডিং পাসের কার্যক্রম শুরু হলে প্রথমে মিঠুন লাইনে দাড়ান। পরে সেখানকার স্টাফ শুভ্র নামের এক ব্যক্তি মিঠুনের কাগজপত্র নিয়ে পাশে যান। মিঠুনকে বোর্ডিং পাস না দিয়ে কাগজপত্রে ক্রটি আছে জানিয়ে বলেন, সরাসরি ভিয়েতনাম যাওয়া যায়না।
এ জন্য ৫০ হাজার টাকা খরচ করতে হবে। মিঠুন কাগজপত্রে কি সমস্যা আছে চ্যালেঞ্জ করলে মালিন্দ্রো এয়ার লাইন্সের স্টাফ শুভ্র কাজগপত্রে সমস্যা আছে জানিয়ে ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে দেয়। পরে রাত ১ টা পর্যন্ত মিঠুন ইমিগ্রেশন পুলিশের হেফাজতে থাকার পর তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয় কাগজপত্রে কোন ক্রুটি নেই। মিঠুন ভিয়েতনাম যেতে পারবে। এদিকে রাত ১২ টায় বোর্ডিং পাসের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে মিঠুনের ফ্লাইট মিস হয়। মিঠুনের পাসপোর্ট নম্বর বিএক্স০৩৮৬১৩৬। ভিয়েতনাম এম্ব্যাসী থেকে ১৪ আগস্ট ২০২০ সাল পর্যণ তাকে ভিসা দেওয়া হয়েছে। ভিয়েতনাম ব্যাকনিন কলেজে তার আইডি নাম্বার ৮৪২১১৯।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে মালিন্দ্রো এয়ার লাইন্সের বিমানবন্দর স্টেশন ম্যানেজার বলেন, কোন যাত্রীরই বোর্ডিং পাসে কোন টাকা পয়সা লাগে না। এমন কোন ঘটনা ঘটে থাকলে সংশ্লিস্ট স্টাফের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবে। তিনি বলেন, বোর্ডিং পাসের সময় কোন যাত্রীর ভিসা বা পাসপোর্ট নিয়ে সন্দেহ তৈরী হলে তা ইমিগ্রেশনে পাঠানো হয়।
মালিন্দ্র এয়ার লাইন্সের হেড অফিসের কর্মকর্তা সেলিম জানান, ওই যাত্রীর স্বজনদের কাছ থেকে তারা এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছেন। তারা যাত্রীর কাগজপত্র দেখে বিষয়টি তদন্ত করবেন। ফ্লাইট মিস হওয়ার কারণে যাত্রীর যে ক্ষতি হয়েছে সেটিও তারা বহন করবেন। পরবর্তী ফ্লাইটে যাত্রীকে পাঠানোর ব্যবস্থা করবেন।
ভিয়েতনামে এম্ব্যাসির সঙ্গে কাজ করা বর্ণালী এডুকেশন কলসালটেন্ট নামে একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা জানান, তারা ভিয়েতনাম এম্বাসির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় কাজ করেন। বাংলাদেশ থেকে যেসব ছাত্র ভিয়েতনামের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হন তাদের ভিসা প্রসেসিং, কলেজে ভর্তি এবং ভিয়েতনামে যাওয়ার জন্য বিমান টিকেট সংগ্রহ থেকে শুরু করে যাবতীয় বিষয়ে তারা সহযোগিতা করেন। মিঠুনের বিষয়েও তারা একইভাবে সহযোগিতা করেছেন। গতকাল তারা মিঠুনকে নিয়ে বোর্ডিং পাসের জন্য গেলে তার কাছে ৫০ হাজার টাকা চান মালিন্দ্রো এয়ার লাইন্সের স্টাফ শুভ্র। তিনি একজন ব্যক্তির মোবাইল নাম্বার দিয়ে যোগাযোগ করতে বলেন।
পরে তারা ইমিগ্রেশনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বিমানবন্দরে দায়িত্বরত একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে ইমিগ্রেশন থেকে জানানো হয় মিঠুনের সব কাগজপত্র ঠিক আছে। ভিয়েতনাম যেতে কোন বাধা নেই। তিনি বলেন, মালিন্দ্রে এয়ার লাইন্সে এ ধরনের ঘটনা নতুন নয়। এর আগে তাদের মাধ্যমে ভিয়েতনামের স্টুডেন্ট ভিসা প্রাপ্ত ১৩ জন ছাত্রের কাছ থেকেও বোর্ডিং পাসের জন্য ৫০ হাজার টাকা করে চাওয়া হয়েছিলো গত জানুয়ারী মাসে। সে সময় তাদেরকে টাকা না দেওয়া মালিন্দ্রো এয়ার লাইন্স এবং থাই এয়ার লাইন্স কর্তৃপক্ষ বোর্ডি পাস দিলেও ওই ১৩ ছাত্রের কাগজপত্র ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে দেয়। পরে ইমিগ্রেশন পুলিশ ১৩ ছাত্রের ভিসা ও পাসপোর্ট অপলোড করে দেয়। ফলে ওই ১৩ ছাত্র এখনো ভিয়েতনামে যেতে পারেনি। এতে ওই ১৩ ছাত্রের শিক্ষা জীবন চরম হুমকির মধ্যে পড়েছে।
সূত্র জানায়, বোর্ডি পাস দেওয়ার ক্ষেত্রে মোটা অঙ্কের ঘুষ দাবী করা এবং ঘুষ না দিলে ভিসা ও পাসপোর্ট অপলোড করার নেপথ্যে বিমান বন্দর ইমিগ্রেশনের কিছু কর্মকর্তাও জড়িত রয়েছে। এয়ার লাইন্স কর্তৃপক্ষ ও বিমানবন্দর ইমিগ্রেশনে কিছু অসাধু কর্মকর্তা যোগাসাজগে বোডির্ং পাস দেওয়ার ক্ষেত্রে ঘুষ দাবীর কারণে যেমন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বিদেশী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা তেমনি এসকল ছাত্রদের ভিসা প্রসেসিং এ জড়িত এজেন্সিগুলো।
ওই প্রতিষ্ঠান জানায়, ভিয়েতনামের শিক্ষা ব্যবস্থা খুবই উন্নতমানের। সমাজতান্ত্রিক দেশ হওয়ার কারণে ভিয়েতনামের শিক্ষা খরচ অত্যণÍ কম। ভিয়েতনামের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ঘনিস্ট হচ্ছে। প্রতিবছরই ভিয়েতনামের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশ থেকে প্রচুর ছাত্র ভর্তি হয়। ভর্তির পর তার সংশ্লিস্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আমন্ত্রনের পেক্ষিতে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভিয়েতনাম হাই কমিশন থেকে বৈধ ভিসা পেলেও বর্ডি পাস নেওয়ার সময় নানা হয়রানীর শিকার হয়। ঘুষের চেয়ে না পেলে অনেক শিক্ষার্থীদের ভিসা অপলোড করে দেওয়া হয়। এরফলে শিক্ষার্থীরা সময়মতো ভিয়েতনাম যেতে পারে এবং ক্লাসে অংশ নিতে পারে না। এরফলে শিক্ষাথীদের জীবন যেমন বিপন্ন হয় তেমনি বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরী হয় ভিয়েতনামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে।