শিক্ষা প্রশাসনের কুখ্যাত বাড়ৈ সিন্ডিকেটের সদস্য হিসেবে শিক্ষা প্রশাসনে পরিচিত চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মাহবুব হোসেনকে ওএসডি করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার (৬ নভেম্বর) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে এ তথ্য জানা গেছে। মাহবুবের বিরুদ্ধে পদোন্নতি বাণিজ্য, পাবলিক পরীক্ষায় পরীক্ষার কেন্দ্র ও কর্মচারীদের দিয়ে ভিজিল্যান্স টিম গঠন করে ঘুষ নেয়া এবং ওএমআরশিটের টেন্ডার বাণিজ্যসহ কয়েকডজন অভিযোগ রয়েছে।
জানা যায়, বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা মাহবুবের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের বিষয় দুর্নীতি দমন কমিশনেও তদন্তাধীন রয়েছে। সাবেক শিক্ষামন্ত্রীর সাবেক এপিএস মন্মথ রঞ্জন বাড়ৈ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পদায়ন টানা দশ বছর ধরে বোর্ডে কর্মরত ছিলেন মাহবুব। বোর্ডের লিফট কেনায় দুর্নীতি, টাকার বিনিময়ে সাবেক শিক্ষার্থীদের নাম ও বয়স সংশোধন করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ মাহবুবের বিরুদ্ধে।
মন্ত্রণালয়ের একই আদেশে বোর্ডের উপপরিচালক (হিসাব ও নিরীক্ষা)নারায়ণ চন্দ্র নাথকে মাহবুবের স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে। এছাড়া বোর্ডের উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তাওয়ারিক আলমকে উপপরিচালক (হিসাব ও নিরীক্ষা) পদে বদলি করা হয়েছে। তারা সবাই শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা এবং বোর্ডে তারা প্রেষণে আসেন। মাহবুবের প্রেষণ প্রত্যাহারপূর্বক ওএসডি করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে রাখা হয়েছে।
২ নভেম্বর থেকে চলমান জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায় চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের ২৩১টি কেন্দ্র পরিদর্শনে ৫০ সদস্যের ১০টি ভিজিল্যান্স টিম গঠন করা হয়েছে। এরমধ্যে ২৫ জনই বোর্ডের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী। তারা প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদমর্যাদার শিক্ষকদের তদারকি করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
ক্ষুব্ধ শিক্ষক নেতারা বলেন, এটা অনিয়ম এবং অন্যায়। এর ফলে কেন্দ্রে দায়িত্ব পালনকারী শিক্ষকরা বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হবেন।
জানা গেছে, অতীতে ভিজিল্যান্স টিমে এত সংখ্যক তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী দায়িত্ব পাননি। বোর্ডের প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাদের পাশাপাশি বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের ভিজিল্যান্স টিমে রাখা হতো। এবার এ ধারা থেকে বেরিয়ে বোর্ডের সর্বোচ্চ সংখ্যক কর্মচারীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অভিযোগ ওঠেছে, বর্তমান চেয়ারম্যান অবসরে যাওয়ার আগে কর্মচারীদের খুশি করতে এবং বোর্ডের টাকা তছরুপে কর্মচারীদের মুখ বন্ধ রাখতে তাদের টিমে রাখা হয়েছে। এ জন্য তারা প্রতিদিন ৭০০ টাকা করে সম্মানি পাবেন।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি চট্টগ্রাম অঞ্চলের সাধারণ সম্পাদক অঞ্চল চৌধুরী বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘আগে তো এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। কমপক্ষে সরকারি স্কুলের সিনিয়র শিক্ষকদের নিতে পারত। এটা বোর্ড কর্তৃপক্ষের অন্যায় এবং অনিয়ম।’ তিনি বলেন, যেখানে আমরা শিক্ষকদের মর্যাদার লড়াই করছি, সেখানে একজন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী তদারকি করবেন এটা মানা যায় না। কয়দিন পর তাহলে নিরাপত্তারক্ষী নিয়ে যাবে পরীক্ষার হলে।
অনেক কেন্দ্র স্কুল অ্যান্ড কলেজে। সেখানে একজন অধ্যক্ষ আছেন, তাকে যদি তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী নির্দেশনা দেন তখন ওই শিক্ষকের ইগোতে লাগবে।
ইংরেজি বর্ণমালা (এ-বি-সি-ডি) অনুসারে করা তালিকায় দেখা গেছে, ‘এ’ টিমে আছেন বোর্ডের সচিব অধ্যাপক মো. আবদুল আলীম। এরপর পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. মাহাবুব হাসান, কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক মো. জাহেহুল হক, বিদ্যালয় পরিদর্শক ড. বিপ্লব গ্যাঙ্গুলী। এ কর্মকর্তাদের তালিকা গেছে জে ক্যাটাগরি পর্যন্ত। তালিকায় থাকা ‘ই’ ক্যাটাগরিতে আছেন সেকশন অফিসার বিমল কান্তি চাকমা, মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, হিসাব রক্ষক মো. মশিউর রহমান, স্টেনোগ্রাফার মো. নাসির উদ্দিন, সেকশন অফিসার মো. আবু তাহের নিজামীসহ ২০ জন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী।
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শাহেদা ইসলাম বলেন, যে দশটি দল গঠন করা হয়েছে সেগুলোতে সম্মিলিতভাবে কাজের জন্য সেকশন অফিসাদের (তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী) রাখা হয়েছে। যার যেটা কাজ সেটা করার নিদের্শনা দেয়া আছে। সুতরাং এই বিষয়ে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না। তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীরা শিক্ষকদের ওপর তদারকির বিষয়ে চেয়ারম্যান বলেন, এখানে তদারকি কিংবা সম্মানহানির কোনো বিষয় নেই। যার যেটা কাজ সেটাই পালন করবেন।
এদিকে, চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মাহবুব হাসান জানিয়েছিলেন, চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এবার জেএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে এক হাজার ২৭৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ২ লাখ ৮ হাজার ৯৮৮ জন পরীক্ষার্থী। এর মধ্যে ছাত্র ৯২ হাজার ৫৫৯ জন, ছাত্রী এক লাখ ১৬ হাজার ৪২৯ জন। এসব শিক্ষার্থী ও পরীক্ষাকেন্দ্রে দায়িত্বে থাকা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের তদারকির পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত দেবেন দশটি ভিজিল্যান্স টিমের ৫০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী।