চবি প্রশাসনের বিরুদ্ধে হল কক্ষ বরাদ্দে টালবাহানার অভিযোগ

চবি প্রতিনিধি |

আবাসন সংকটে জর্জরিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) হলগুলোতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে আবাসিক কক্ষ বরাদ্দের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল বছরখানেক আগে। তবে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগকে খুশি রাখতে এ প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে কর্তৃপক্ষ টালবাহানা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

অবশ্য কক্ষ বরাদ্দে কোনো ধরনের বাধা দেওয়া হচ্ছে না বলে দাবি করেছে ছাত্রলীগ। চবি কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, ব্যস্ততার কারণে সময়মতো আসন বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব হয়নি।

সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, চবি হলগুলোতে রয়েছে ছাত্রলীগের বিভিন্ন গ্রুপের নেতাকর্মীদের অবৈধ বসবাস। বৈধ আবাসিক শিক্ষার্থীদের থেকে বের করে দিয়ে কক্ষ দখল করা হয়েছে।

এরই মধ্যে হলের কক্ষ বরাদ্দের ঘোষণা সাধারণ শিক্ষার্থীদের মনে আশার সঞ্চার হয়। কিন্তু অদৃশ্য কারণে আবেদনের প্রায় এক বছরেও কক্ষ বরাদ্দ দেয়নি চবি কর্তৃপক্ষ।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ছাত্রলীগকে খুশি রাখতেই আসন বরাদ্দ দিতে এমন টালবাহানা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। আবেদন করে দীর্ঘ সময় পরেও আসন বরাদ্দ না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা জানানা, হলে কক্ষ বরাদ্দ না পাওয়ায় ক্যাম্পাসের আশপাশের কটেজগুলোতে উচ্চ ভাড়া, নোংরা পরিবেশ, গ্যাস, পানি ও বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করতে হচ্ছে তাদের।

সবচেয়ে বেশি কষ্টে রয়েছেন আর্থিকভাবে অসচ্ছল পরিবারের শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি, দ্রুত কক্ষ বরাদ্দ দেওয়াসহ হলগুলোতে বৈধ শিক্ষার্থীদের আবাসন নিশ্চিত করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হোক। খ্রিষ্টাব্দের

জানা গেছে, সর্বশেষ ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের জুনে আবাসিক হলে কক্ষ বরাদ্দ দেয় তৎকালীন উপাচার্য প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী ও প্রক্টর আলী আজগর চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন প্রশাসন।

অভিযোগ রয়েছে, ওই সময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের কক্ষ বরাদ্দ না দিয়ে নিয়মবহির্ভূতভাবে গণহারে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের কক্ষ বরাদ্দ দেন তারা।

দুই বছর পর মেয়াদের শেষ সময়ে এসে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ মার্চ হলগুলোতে কক্ষ বরাদ্দের বিজ্ঞপ্তি দেয় প্রশাসন। এতে আবেদন ফরম কেনেন প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী।

তবে বিজ্ঞপ্তির তিন মাস পরে ওই বছর ১৪ জুন ইফতেখার উদ্দিনের উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হওয়ায় রুটিন দায়িত্ব পান বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার। তিনি দায়িত্ব পাওয়ার পর হলগুলোতে কক্ষ বরাদ্দের পূর্বনির্ধারিত গত ২৩ ও ২৪ জুনের ভাইভা কোনো কারণ উল্লেখ না করেই স্থগিত ঘোষণা করা হয়।

পরে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে গত ৩ ও ৪ জুলাই পুনরায় ভাইভা নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হলেও গত ১ জুলাই আবারও তা স্থগিত ঘোষণা করে চবি প্রশাসন। দ্বিতীয়বারের মতো ভাইভা স্থগিত ঘোষণার প্রায় ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও কক্ষ বরাদ্দের বিষয়ে তেমন কোনো অগ্রগতি চোখে পড়েনি।

ক্ষোভ প্রকাশ করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন আবেদনকারী শিক্ষার্থী বলেন, অনেক কষ্ট করে আমাদের বিভিন্ন কটেজে থাকতে হচ্ছে। ভাড়ার টাকাসহ অন্যান্য খরচ সামলানো কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে। ভেবেছিলাম হয়তো হলে সিট পেলে কিছুটা স্বস্তি পাব। কিন্তু প্রশাসন শুধু ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদেরই সুবিধা দিতে পছন্দ করে। আমাদের দুর্ভোগ নিয়ে তাদের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।

তারা বলেন, আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে ভাইভার মাধ্যমে কক্ষ বরাদ্দসহ হলগুলোতে যাতে কোনো অবৈধ আবাসিক শিক্ষার্থী না থাকতে পারে সে বিষয়টিও প্রশাসন নিশ্চিত করবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বলেন, ‘আমরা সব সময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের পক্ষে কাজ করছি। আমরা আসন বরাদ্দে কোনো ধরনের বাধা দিচ্ছি না। বরং হলগুলো আসন বরাদ্দের বিষয়ে আমরা কয়েক দফা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বলেছি। এত দিনেও আসন বরাদ্দ না দেওয়াকে আমরা মনে করি প্রশাসনের গাফিলতি।’

তার মতে, বগি-ভিত্তিক গ্রুপগুলোর কাছে প্রশাসন অসহায়। বগি রাজনীতিকে বাঁচিয়ে রাখতেই মনে হয় প্রশাসন হলগুলোর কক্ষ বরাদ্দ দিচ্ছে না।

একই সুরে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু বলেন, আমরা অনেক আগে থেকেই হলগুলোতে কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া বিষয়ে বলে আসছি। আসন বরাদ্দ দিতে দেরি হচ্ছে বিধায় আমরা আমাদের কমিটিগুলো করতে পারছি না। আর তারা হলগুলোতে আসন বরাদ্দ দিলেই তো বোঝা যাবে আমরা অবৈধভাবে দখল করে রেখেছি কিনা?

কেন কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে না- জানতে চাইলে চবি সোহরাওয়ার্দী হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক মোহাম্মদ বশির আহামদ ‘প্রশাসনের সিদ্ধান্ত লাগবে বলে ফোন কেটে দেন।

জানতে চাইলে চবি উপাচার্য অধ্যাপক শিরীণ আখতার বলেন, ভর্তি পরীক্ষা, অন্যান্য কাজ থাকায় এত দিন কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। আর এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলা চলছে তাই প্রভোস্টরা ব্যস্ত আছেন। খেলার পরে কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ - dainik shiksha এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0036220550537109