চবির ওশানোগ্রাফি বিভাগে বছর হয় ৩৬ মাসে

চবি প্রতিনিধি |

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ওশানোগ্রাফি বিভাগে তীব্র সেশনজটের কবলে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। ২০১৩-১৪ সেশনের চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে হওয়ার কথা থাকলেও, হয়েছে চলতি ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বরে। তবে এখনও পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়নি। অন্য সেশনেও এক থেকে আড়াই বছর পর্যন্ত সেশনজট রয়েছে।

মূলত শিক্ষক সংকটের কারণে তীব্র সেশনজট হচ্ছে বলে সংশ্নিষ্টরা জানান। বিভাগে ছয়টি ব্যাচে শিক্ষার্থী আছেন ১৫০ জন। শিক্ষার্থী অনুপাতে বিভাগে শিক্ষক দরকার ২২ জন, অথচ আছেন মাত্র ৩ জন।

জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আমীর মোহাম্মদ মুছা বলেন, 'বিষয়টি নিয়ে বিভাগ থেকে আমাকে কিছু জানানো হয়নি। তারপরও চেষ্টা করব বিভাগের শিক্ষকদের সঙ্গে বসে সমস্যার সমাধান করার।'

শিক্ষার্থীরা জানান, নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষা না হওয়ায় পড়াশোনায় মনোযোগ হারিয়ে ফেলছেন শিক্ষার্থীরা। অনেকে শিক্ষাবৃত্তি পেয়ে উচ্চতর শিক্ষার সুযোগ পেলেও সময়মতো ফলাফল প্রকাশ না হওয়ায় এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। শিক্ষক সংকট, অপর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ, ল্যাব ও সেমিনার কক্ষ না থাকা বিভাগের অন্যতম সমস্যা। মাত্র দু'জন কর্মী দিয়ে কোনো রকমে জোড়াতালি দিয়ে চলছে বিভাগটির প্রশাসনিক কার্যক্রম। জানা যায়, ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজের একটি ডিসিপ্লিন হিসেবে ওশানোগ্রাফি বিষয়ে স্নাতকোত্তর খোলা হয়। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ মাসে ফ্যাকাল্টি অব মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ অনুষদ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এরপর মাত্র তিনজন শিক্ষক নিয়ে স্বতন্ত্র বিভাগ হিসেবে কার্যক্রম শুরু করে ওশানোগ্রফি বিভাগ। শুরু থেকে বিভাগটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দীন চৌধুরী। বর্তমানেও উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার বিভাগটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। শিক্ষক সংকটের কারণে প্রতি বর্ষে ৫ থেকে ৭টি কোর্সের জন্য খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ করতে হয়।

শিক্ষার্থীরা জানান, ২০১৩-১৪ সেশনের চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে হওয়ার কথা থাকলেও সেটি চলতি বছর অনুষ্ঠিত হয়। তবে এখনও ফল প্রকাশ করা হয়নি। ২০১৪-২০১৫ সেশনের তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও হয়েছে চলতি বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে। ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও ফল প্রকাশ করা হয়নি।

২০১৫-২০১৬ সেশনের তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে হওয়ার কথা থাকলেও তা এখনও শুরুই হয়নি। ২০১৬-১৭ সেশনের ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা প্রায় ১৬ মাস পর গত এপ্রিলে অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে এখনও ফল প্রকাশিত হয়নি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সিনিয়র ব্যাচের ফলাফল প্রকাশিত না হওয়ায় জুনিয়র ব্যাচের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারছেন না। ২০১৮-১৯ সেশনের প্রথম বর্ষ পরীক্ষা গত নভেম্বরে শুরু হয়েছে। ভর্তি প্রক্রিয়া চলছে ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থীদের। পাঁচ বছরের স্নাতক-স্নাতকোত্তর শেষ করতেই বিভাগটির লাগছে প্রায় ৭ বছর।

সেশনজটের তিক্ত অভিজ্ঞতা সম্পর্কে ২০১৩-১৪ সেশনের একজন শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করে বলেন, 'আমাদের ব্যাচের অন্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা শেষ করে চাকরি-বাকরি করছেন। আর আমরা এখনও বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস করে যাচ্ছি। সেশনজটের কবলে পড়ে আমরা দিন দিন পিছিয়ে পড়ছি। সঠিক সময়ে পরীক্ষা না নেয়া এবং ফলাফল দ্রুত প্রকাশ না হওয়ায় আমরা চাকরিতে আবেদন করতে পারছি না। সঠিক সময়ে ক্লাস-পরীক্ষা নিলে এবং ঠিক সময়ে ফল প্রকাশ করলে আমরা সেশনজটে আটকে থাকতাম না। আমরা এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চাই।'

২০১৪-১৫ সেশনের একজন শিক্ষার্থী বলেন, 'অনেক স্বপ্ন নিয়ে এই বিভাগে ভর্তি হয়েছিলাম। সেশনজটের ধকল পোহাতে গিয়ে স্বপ্ন জলাঞ্জলি দিতে হচ্ছে। ঠিক সময়ে ক্লাস ও পরীক্ষা নেয়া হয় না বিভাগে। মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় পড়াশোনা ছেড়ে দিই। উপাচার্য মহাদয়ের কাছে আমাদের আকুল আবেদন তিনি যেন এই সমস্যার দ্রুত সমাধান করেন।'

এসব বিষয়ে উপাচার্য ও ওশানোগ্রাফি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার বলেন, 'সেশনজট তো থাকবেই। ওশানোগ্রাফিতে শিক্ষক নেই, প্রয়োজনীয় শ্রেণিকক্ষ নেই, কর্মচারী-কর্মকর্তা নেই, শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ অথচ প্রাক্তন উপাচার্য এগুলো ছাড়াই বিভাগ খুলে বসলেন। আমি তবুও এখান থেকে, ওখান থেকে খণ্ডকালীন শিক্ষক এনে বিভাগটি চালিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছি।' তিনি আরও বলেন, 'ওখানে আবার শিক্ষকদের মধ্যে কোনো মিল নেই। একজন শিক্ষক কয়েক মাস পরীক্ষার খাতা আটকে রেখেছিল। আমি তাকে অনুরোধ করার পর সে খাতা জমা দিয়েছে। কিছু শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার জন্য আমি চেষ্টা করছি। ইউজিসির সঙ্গে কথা বলব এই বিষয়ে। হয়তো জানুয়ারি থেকে আমরা পজিটিভ কিছু পাব।'

উপাচার্য আরও বলেন, 'এগুলোয় আমার কোনো দায় নেই। এগুলোর দায় আগের উপাচার্যের।'


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0027048587799072