চবির ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের বিরুদ্ধে বিলাসবহুল গাড়ি ব্যবহারের অভিযোগ

চবি প্রতিনিধি |

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের জন্য বরাদ্দ রয়েছে চার হাজার সিসির কোটি টাকা মূল্যের দুটি পাজেরো ব্র্যান্ডের জিপ। উপ-উপাচার্যের জন্য বরাদ্দ রয়েছে এফপ্রিমিও ব্র্যান্ডের দামি একটি কার। চবিতে উপাচার্য না থাকায় এ তিনটি গাড়িই বর্তমানে ব্যবহার করছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় রুটিন দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য ড. শিরীন আখতার। এরপরও প্রায় এক কোটি টাকা দিয়ে সম্প্রতি উপ-উপাচার্যের নামে কেনা হয়েছে পাজেরো ব্র্যান্ডের আরেকটি জিপ।

জানা গেছে, দায়িত্বগ্রহণের প্রথম দিনই রুটিন দায়িত্বপ্রাপ্ত এ উপাচার্যের বিরুদ্ধে ‘গাড়ির বিলাসের’ অভিযোগ রয়েছে। চলতি বছরের ১৪ জুন প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীর উপাচার্যের মেয়াদকাল পূর্ণ হলেও ১৩ জুনই তিনি উপাচার্য হিসেবে নজিরবিহীনভাবে যোগদান করেন এবং ওইদিনই তিনি উপাচার্যের গাড়ি ব্যবহার শুরু করেন। অথচ তাকে তখন উপাচার্য কিংবা ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেয়নি সরকার।

জানা গেছে, চবি উপাচার্যের জন্য গত বছরের জুলাইয়ে এক কোটি টাকা দিয়ে গাড়ি কেনা হয় পাজেরো ব্র্যান্ডের। আগে থেকেই উপাচার্যের জন্য আরও একটি পাজেরো ব্র্যান্ডের গাড়ি বরাদ্দ ছিল। উপ-উপাচার্যের জন্যও বরাদ্দ ছিল এফপ্রিমিও ব্র্যান্ডের দামি কার। বর্তমান রুটিন দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-উপাচার্য ড. শিরীন আখতার এ তিনটিই গাড়ি ব্যবহার করছেন। 

এতগুলো দামি গাড়ি সক্রিয় থাকার পরও উপ-উপাচার্যের নামে প্রায় কোটি টাকা দিয়ে নতুন আরও একটি গাড়ি কেনা হয়েছে। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে চলছে সমালোচনা। নতুন গাড়ি কেনার বিষয়টি স্বীকার করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) নুর আহমদ বলেন, উপ-উপাচার্যের জন্য একটি গাড়ি কিনতে বিগত প্রশাসনের সময়েই অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

তবে গাড়িটি কত টাকা দিয়ে কেনা হয়েছে সে বিষয়ে তার কাছে তথ্য নেই বলে জানান তিনি। গাড়ি কেনার বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান হিসাব নিয়ামক ফরিদুল আলম বলেন, একটি গাড়ি কেনা হয়েছে। কত টাকা দিয়ে গাড়িটি কেনা হয়েছে তা জানা নেই। এ বিষয়ে পরিবহন দফতরের প্রশাসক আবু তাহের চৌধুরী বলেন, ‘পরিবহন দফতর সংক্রান্ত কোনো বিষয়ে আমাকে সাংবাদিকদের কোনো মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন উপাচার্য ম্যাডাম।’

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর অভিযোগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত বিভাগগুলোর ল্যাব চালানোর জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অবৈধভাবে আদায় করা হয় টাকা। বিভাগগুলোতে বই কেনার টাকা থাকে না। হলগুলোর সংস্কারের জন্য থাকে না বাজেট।

বিভাগগুলো পরিচালনার জন্য প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হয় লাখ লাখ টাকা। শিক্ষার্থীদের গবেষণার জন্য কোনো টাকা বরাদ্দ থাকে না। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তাব্যক্তিদের ভোগ-বিলাসের জন্য কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ থাকে। এ বিষয়ে চবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু বলেন, শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় গবেষণা, ল্যাব, হল সংস্কারসহ নানা সংকটের সমাধান জরুরি।

অর্থ সংকটের কারণ দেখিয়ে সময়মতো এসব সমস্যার সমাধান হয় না বলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়ে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বিষয় সমাধানের মতো এগুলোও যদি নিয়মিত সমাধান হতো তাহলে কোনো আপত্তি ছিল না। এ বিষয়ে চবি ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি গৌরচাঁদ ঠাকুর বলেন, আমরা অতীত থেকে এসব বিলাসিতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছি। যতদিন পর্যন্ত এসব সংস্কৃতির পরিবর্তন আসবে না ততদিন উচ্চশিক্ষায় এ দেশ পেছাবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য - dainik shiksha হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা - dainik shiksha ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক - dainik shiksha সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি - dainik shiksha ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার - dainik shiksha রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0030648708343506