সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়া বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই মধ্যবিত্ত পরিবারের। বিভিন্ন দামি বই কেনার পর শিক্ষার্থীদের বড় বোঝা হয়ে দাঁড়ায় অন্যতম শিক্ষা উপকরণ ‘মানব হাড়’ (বোন) সংগ্রহ করা। ২০৬টির এক সেট হাড়ের দাম বর্তমানে ৩০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত পড়ে। চলতি বছর জানুয়ারিতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে (চমেক) ক্লাস শুরু করে আগামি বছর জুলাইতে প্রথম চূড়ান্ত পরীক্ষা দেবে প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা।
কিন্তু অর্থাভাবে এখনো তাদের অনেকে হাড়ের সেট কিনতে পারেনি। এককভাবে কিনেছে এ রকম শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৬০ শতাংশ বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানায়। অনেকে যৌথভাবে কিনে পড়ছে। চলতি সপ্তাহে চমেকে বোনস লাইব্রেরি চালু হওয়ায় উল্লসিত শিক্ষার্থীরা। তারা লাইব্রেরিতে বসেই হাড় নিয়ে পড়াশোনার সুযোগ পাচ্ছে। চাইলে বইয়ের মতো হাড়ও তারা বাসা বা হলে নিয়ে পড়তে পারবে।
গত রোববার চমেক বোনস লাইব্রেরি উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, এই প্রথম বাংলাদেশের কোনো মেডিকেল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বোনস লাইব্রেরি গড়া হলো, বিশ্বে এমন নজির দুর্লভ। লাইব্রেরির নাম দেওয়া হয়েছে প্রফেসর ডা. মনসুর খলিল স্মৃতি বোনস লাইব্রেরি। প্রয়াত এই খ্যাতিমান চিকিৎসক চমেক অ্যানাটমি বিভাগের প্রধান ছিলেন।
মঙ্গলবার দুপুরে এই লাইব্রেরিতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের নানা ধরনের মানব হাড় খতিয়ে দেখতে দেখা যায়। ৬০তম ব্যাচের এক শিক্ষর্থী বলেন, ‘আগামি বছরের জুলাই মাসে প্রথম পেশাগত চূড়ান্ত পরীক্ষা হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু আমি এখনো টাকার জন্য হাড় কিনতে পারিনি। এই লাইব্রেরি হওয়ায় আমার জন্য অনেক ভালো হয়েছে।’ এ সময় তাঁর দুই সহপাঠী জানান, তাঁরা দুজনে ৪০ হাজার টাকায় এক সেট বোন কিনেছেন। তবে প্রতিজনের জন্য এক সেট লাগে। অ্যানাটমিতে লিখিত, মৌখিক ও ব্যাবহারিকে হাড় অপরিহার্য। শিক্ষার্থী মনীষা ঘোষ বলেন, ‘বোনস লাইব্রেরি আমাদের অনেক উপকারে আসছে।’
চমেক ছাত্রসংসদের ভিপি ও ইন্টার্ন চিকিৎসক সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘১৫ সেট দিয়ে শুরু হয়েছে লাইব্রেরি। আরো হাড় সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। ১০০টি সেট হয়ে গেলে দেখা যাবে এই কলেজে আর কোনো শিক্ষার্থীকে হাড় সেট কিনতে হবে না।’ বিভিন্ন কলেজে হাড় সেট বিক্রির সিন্ডিকেট লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি নিজে এক সেট হাড় কিনেছিলাম (২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষ) ১৯ হাজার টাকা দিয়ে।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা অনুষদের ডিন ও চমেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি মানবদেহের বোনস লাইব্রেরি বিশ্বে আর কোথাও নেই। আমরা চিন্তা করছি লাইব্রেরির পরিসর আরো বাড়াতে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৩ খ্রিস্টাব্দের ২৯ আগস্ট চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের নতুন একাডেমিক ভবন উদ্বোধন করেন। ভবনের দ্বিতীয় তলায় কলেজের প্রধান লাইব্রেরি। তার পাশেই এক হাজার বর্গফুটের বোনস লাইব্রেরি গড়া হযেছে। একসঙ্গে ৪৫ জন শিক্ষার্থীর এতে পড়ার সুযোগ রয়েছে। লাইব্রেরির হাড়গুলোর সঙ্গে বৈজ্ঞানিক নাম, হাড়ের শারীরিক অবস্থান, হাড়ের নম্বর, হাড়ের কোন অংশের কী নাম সেসবও রাখা হয়েছে। চমেকে চলতি শিক্ষাবর্ষে (২০১৭-১৮) এমবিবিএস (ব্যাচেলর অব মেডিসিন ও ব্যাচেলর অব সার্জারি) কোর্সে ১৯৭ জন এবং বিডিএস (ব্যাচেলর অব ডেন্টাল সার্জন) কোর্সে ৫৯ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়।