চরফ্যাশনে স্কুল ফিডিং প্রকল্পের আওয়াতাধীন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা প্রত্যাশা বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক শাহনাজ পারভীনের বিরুদ্ধে সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় চাকরি হারিয়েছেন বেশকিছু কর্মী। সম্প্রতি চরফ্যাশন উপজেলায় স্কুল ফিডিং কার্যক্রমে কর্মরত প্রত্যাশা বাংলাদেশের ১৭ জন কর্মীর কয়েক মাসের বেতন বন্ধ করে দেয়া হয়। পরে গোপনে কর্মীদের স্বাক্ষর জাল করে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনের চেষ্টা করা হয়। এজন্য গত ২৩ অক্টোবর শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে সহকারী প্রকল্প পরিচালকের স্বাক্ষরিত চিঠিতে প্রত্যাশা বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক শাহনাজ পারভীনকে কারণ দর্শানোর পাশাপাশি সংশোধনপূর্বক বিল দাখিলের জন্য বলা হয়েছে। গত বুধবার শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী প্রকল্প পরিচালক একেএম রেজাউল করিম স্বাক্ষরিত চিঠি সূত্রে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
জানা যায়, চরফ্যাশন উপজেলা স্কুল ফিডিং প্রকল্পের আওয়াতাধীন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা প্রত্যাশা বাংলাদেশের ১৭ জন কর্মী কর্মরত আছেন। ফিল্ড মনিটরিং অফিসার ৯ জন, স্টোর কিপার একজন, টালি ক্লার্ক একজন, মনিটরিং রির্পোর্টিং অফিসার একজন, হিসাব সহকারী একজন ও সিকিউরিটিগার্ড তিনজন। প্রত্যাশা বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক শাহনাজ পারভীন এসব নিয়োগ প্রাপ্ত কর্মিদের বেতন বন্ধ করে জাল স্বাক্ষর করে বিল উত্তোলনের জন্য চেষ্টা করেছেন। এছাড়াও এসব কর্মীদের ১ বছর মেয়াদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সময় প্রতিকর্মীদের থেকে ৪ হাজার টাকা করে উৎকোচ আদায় করেন। এছাড়াও কর্মরত কর্মীদের প্রতি মাসের বেতন থেকে ১০ হারে টাকা আদায় করে আত্মসাৎ করেন নেন। কোনো কারণ ছাড়াই একাধিক নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মীকে চাকরি থেকে বাদ দিয়ে টাকার বিনিয়য়ে নতুন কর্মী নিয়েগের অভিযোগ আছে।
মনিটরিং ও রিপোটিং অফিসার মাসুদ রানা জানান, প্রত্যাশা বাংলাদেশের নিয়োগ শর্ত অনুযায়ী তার বেতন ধরা আছে মাসে ২৩ হাজার টাকা। কিন্ত মাসে তাকে দেয়া হচ্ছে ১৩ হাজার টাকা। এই ১৩ হাজার টাকা থেকেও ১০ ভাগ টাকা কর্তন করে রাখা হয়। নিয়োগ শর্ত অনুযায়ী কর্মরত কর্মীরা মোবাইল ও যাতায়ত ভাতা পাওয়ার কথা। কিন্তু সংস্থার নিয়ন্ত্রকরা এসব ভাতা উত্তোলন করে নিজেরাই আত্মসাৎ করছেন। এসব কিছুর পরও গত ৪ মাস ধরে তার বেতন বন্ধ করে রাখা হয়েছে। স্টোর কিপার অলিউর রহমান জানান, স্টোরের ভাড়া মাসে ৩৬ হাজার টাকা করে ধরা আছে। কিন্ত স্টোর ভাড়া বাবদ মাসে ২৬ হাজার টাকা পরিশোধ করে বাকী টাকা নির্বাহী পরিচালক আত্মসাৎ করছেন। স্টোরে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা নেই। নেই কোন পরিবহন ঠিকাদার। পরিবহন ঠিকাদারের কাজ সংস্থার কর্মরত কর্মীদের নিয়ে করিয়ে নেয়া হচ্ছে।
প্রত্যাশা বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালকের এসব দুর্নীতি ও অনিয়মের প্রতিবাদ করায় বেশকিছু কর্মচারীকে কোনো কারণ দর্শানো ছাড়াই চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়েছে। চাকরি থেকে অপসারণিত প্রকল্প সমন্বয়কারী কামাল হোসেন বলেছেন, নির্বাহী পরিচালকের অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় আমাকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়েছে। যে কোনো কর্মী তার অনিয়মের প্রতিবাদ করলে তাকেই চাকরি থেকে অপসারণ করে দেন ওই কর্মকর্তা।
অভিযোগ প্রসঙ্গে স্কুল ফির্ডিং প্রকল্পের সহকারী পরিচালক একেএম রেজাউল করিম জানান, সংস্থার কর্মীদের পূর্বের যে বিল স্টেটমেন্ট জমা দেয়া হয়েছে, সেগুলোর সঙ্গে এখন জমাকৃত বিলস্টেটমেন্টের কোনো মিল নেই। তাই এই বিষয়ে কারণ দর্শানোর পাশাপাশি বিলস্টেটমেন্ট সংশোধন করে জমা দিতে বলা হয়েছে।
প্রত্যাশা বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক শাহনাজ পারভীন অভিযোগ অস্বীকার করেন বলেছেন, কাজ বেশি করলে বদনামও বেশি হবে।