গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলায় চলন্ত বাস থেকে ফেলে এক স্কুলছাত্রকে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৭ জানুয়ারি) দুপুরে উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় আজমেরী পরিবহন নামের একটি যাত্রীবাহী বাস থেকে তাকে ফেলে দেওয়া হয়।
নিহত শিক্ষার্থীর নাম হযরত ওমর (১৩)। একই ঘটনায় হযরত ওমরের সহপাঠী কামরুল ইসলাম ও শাওন আহত হয়েছে। ওমর চন্দ্রা এলাকায় অবস্থিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সরকারি স্কুলের সপ্তম শ্রেণিতে পড়ত।
ওমর চন্দ্রা পল্লীবিদ্যুৎ এলাকার শিমুল হোসেনের ছেলে। তার বাবা-মা স্থানীয় একটি তৈরি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। ওমর পরিবারের একমাত্র সন্তান ছিল বলে বাবা শিমুল হোসেন জানান।
এদিকে ঘটনার পর চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় পরিবহন শ্রমিক ও স্কুলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা শুরু হয়। এরপর দ্রুত সেখানে হাজির হয় ওই স্কুলের শিক্ষক ও পুলিশ প্রশাসন। তারা উত্তেজিত শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। পরে কালিয়াকৈর থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে ঘটনাস্থলে অবস্থান নেয়।
প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও ওমরের সহপাঠীরা জানায়, গতকাল দুপুর সোয়া ১টার দিকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সরকারি স্কুল ছুটি হয়ে যায়। স্কুল ছুটি হওয়ার পরপরই সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ওমরসহ ৫-৬ সহপাঠী পল্লীবিদ্যুৎ এলাকার ভাঙ্গা মসজিদের বাসায় আসার জন্য রওনা হয়। তারা গাজীপুরগামী আজমেরী পরিবহনের কাউন্টারের সামনে এসে দাঁড়ায়। এ সময় ওই পরিবহনের ঢাকা মেট্রো-ব-১৪-২৬৭৭ নম্বরের একটি বাসে ওঠার চেষ্টা করে ওমর। তবে বাসের হেলপার তাকে দরজার কাছেই সজোরে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। বাসের বডির সঙ্গে মাথা ও বুকে ধাক্কা খেয়ে গুরুতর আহত হয় সে। তখন সহপাঠীরা দ্রুত তাকে উদ্ধার করে পল্লীবিদ্যুৎ এলাকার জীবন নামের একটি ক্লিনিকে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক আহত ওমরকে উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
এরপর সহপাঠীরা কিছু বুঝে উঠতে না পেরে স্কুলের প্রধান শিক্ষক আনন্দ কুমার দাসকে ফোনে ঘটনাটি জানালে তিনি অন্য শিক্ষকদের নিয়ে দ্রুত সেই হাসপাতালে ছুটে যান। পরে ওমরকে কালিয়াকৈর উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
তাকে বাঁচাতে ব্যর্থ হয়ে সহপাঠীরা কান্নায় ভেঙে পড়ে। ছুটে আসেন ওমরের বাবা শিমুল হোসেন। অপরদিকে উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় গিয়ে আজমেরী পরিবহন আটকের চেষ্টা করলেও ওই পরিবহনের কোনো বাস তারা পায়নি। তবে ওই বাসের চালক আক্তার হোসেনের নাম জানতে পারলেও হেলপারের নাম জানা যায়নি।
সহপাঠী কামরুল ইসলাম ও শাওন জানায়, তারা স্কুল ছুটির পর চন্দ্রা কালামপুর মোড় এলাকার আজমেরী পরিবহনের কাউন্টারের সামনে বাসে ওঠার সময় চলন্ত অবস্থায় ওমরকে হেলপার ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। চোখের সামনে বাসের বডির সঙ্গে জোরে আঘাত পেয়ে সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। বাসের চালক তখন বাসটি দ্রুত চালিয়ে ঢাকার দিকে নিয়ে যায়। পরে তারা ওমরকে উদ্ধার করে একটি ক্লিনিকে নিয়ে যায়।
নিহত ওমরের বাবা শিমুল হোসেন বলেন, 'হেলপার আমার বুকের মানিককে ফেলে দিয়ে হত্যা করেছে। সন্তানের হত্যাকারীর বিচার চাই।'
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনন্দ কুমার দাস জানান, বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে বিদ্যালয় ছুটি হয়। বিদ্যালয় থেকে বের হয়ে ওমর চন্দ্রা ত্রিমোড় বাসস্ট্যান্ড থেকে আজমেরী পরিবহনের বাসে ওঠার চেষ্টা করে। এ সময় তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়। খবর পেয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ওমরকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
সালনা কোনাবাড়ী হাইওয়ে পুলিশের ওসি মজিবুর রহমান বলেন, ঘাতক বাসটি আটক করেছি। মামলা ছাড়াই নিহত শিক্ষার্থীকে নেওয়ার জন্য সংশ্নিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছে তার স্বজন।