চাকরি সরকারি অবসর বেসরকারি: সরকারিকৃত কলেজ শিক্ষকদের বোবাকান্না

নিজস্ব প্রতিবেদক |

বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কতিপয় কর্মকর্তার প্রতিহিংসার শিকার হয়ে সরকারি চাকরি করেও বেসরকারিভাবে অবসরে যেতে হচ্ছে হাজার হাজার শিক্ষক-কর্মচারীকে। ভুক্তভোগীরা সবাই সরকারিকৃত ৩০২ কলেজের। উচ্চ পর্যায়ে বারবার অভিযোগ করেও কোনো সুরাহা হয়না। শুধুই আশ্বাস আর আশ্বাস।

সরকারিকৃত কলেজের ভুক্তভোগী শিক্ষকরা দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, জাতীয়করণের তালিকাভুক্ত ৩০২ কলেজের বেশির ভাগই প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি পায় ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে। জাতীয়করণের এই সিদ্ধান্ত অনেকটা চ্যালেঞ্জ করে রিট পিটিশন দায়ের করেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সাবেক মহাসচিব অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরীসহ কয়েকজন। এছাড়া নো বিসিএস নো ক্যাডার নামেও মিছিল-সমাবেশ, টকশো, সেমিনার হয় জাতীয়করণ ও প্রচলিত বিধি অনুযায়ী আত্তীকরণের বিরুদ্ধে। মামলার ধকল পেরিয়ে কলেজ সরকারীকরণের গেজেট হয় ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ৮ আগস্ট। নন ক্যাডার বিধিমালা তৈরির পরও আটকে রাখা হয়েছে কার্যক্রম। শাহেদুল খবির চৌধুরী মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) হওয়ায় এত দিন তাঁর এখতিয়ারেই ছিল জাতীয়করণের সব কাজ। তবে প্রায় চার বছর ধরে মাউশি তাদের কাজ শেষ করেছে। এখন তা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে যাচাই-বাছাই চলছে। 

সূত্র জানায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় যাচাই শেষে এরই মধ্যে অর্ধশতাধিক কলেজের ফাইল পদ সৃজনের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। সেখানে একজন উপসচিব এসংক্রান্ত সব ফাইল দেখছেন। ফলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুনরায় জট সৃষ্টি হচ্ছে। এরপর ফাইল যাবে অর্থ মন্ত্রণালয়ে। তাদের সম্মতি পেলে ফাইল যাবে প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটিতে। এরপর সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সুপারিশের পর শিক্ষকদের চাকরি সরকারীকরণের চূড়ান্ত গেজেট জারি হবে।

শিক্ষকরা আশঙ্কা করছেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতো পরবর্তী ধাপগুলোতেও নতুন করে যাচাই-বাছাই শুরু হলে আগামী চার-পাঁচ বছরেও এই আত্তীকরণের কাজ শেষ হবে না। আর এই সময়ের মধ্যে দায়িত্বরত অর্ধেক শিক্ষক-কর্মচারীকেই বেসরকারি হিসেবে অবসরে চলে যেতে হবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন জানান, তিনি সচিব হিসেবে যোগ দেওয়ার পর আত্তীকরণের কাজ দ্রুত শেষ করতে পাঁচটি কমিটি করে দিয়েছেন। করোনার কারণে কিছুদিন কাজ বন্ধ থাকলেও এখন দ্রুত কাজ চলছে। তিনি আশা করছেন, জনপ্রশাসন ও অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে নতুন করে আর কোনো যাচাই-বাছাই হবে না। সেসব মন্ত্রণালয়েও যাতে একাধিক ডেস্কে কাজ শেষ করা হয়, সে জন্য সংশ্লিষ্ট সচিবদের সঙ্গে কথা বলারও আশ্বাস দেন সচিব। 

তবে, বাস্তবে এই পাঁচ কমিটি আত্তীকরণের কাজ আরো ঝুলিয়ে দিয়েছে। সরকারিকৃত কলেজ শিক্ষকরা ফেসবুকে এসব বিষয় নিয়ে বিশদ আলোচনা করেছেন। তারা এও বলেছেন, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের নতুন সচিবের যোগদান ও আশ্বাসের পর কাজের গতি আরো কমেছে। 

সরকারিকৃত কলেজ শিক্ষক সমিতির (সকশিস) সভাপতি জহুরুল ইসলাম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ‘শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরি আত্তীকরণে এক কাগজ কেন বারবার যাচাই হচ্ছে তা আমরা বুঝতে পারছি না। চার বছর পার হয়েছে, আর কত অপেক্ষা করতে হবে? সরকারি কলেজে চাকরি করে বেসরকারি হিসেবে অবসরে যাওয়ার যে কষ্ট তা মেনে নিতে পারছি না।’ 

জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষার্থী-অভিভাবক-পরিবার-পরিজন সবাই জানেন চাকরি সরকারি কিন্তু অবসর সুবিধার জন্য ঘুরতে হবে সেই কল্যাণট্রাস্ট ও অবসর সুবিধাবোর্ডে। বোবাকান্না দেখার কেউ নেই।” 

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, চার বছরেও আত্তীকরণের কাজ শেষ না হওয়ায় ১২ হাজার শিক্ষক আর চার হাজার কর্মচারীর মধ্যে প্রায় তিন হাজারই এরই মধ্যে অবসরে চলে গেছেন। সরকারি কলেজে চাকরি করেও তাঁদের বেসরকারি হিসেবেই অবসরে যেতে হয়েছে। শিক্ষকরা অবসরে চলে যাওয়ায় এবং নতুন নিয়োগ বা পদায়ন না হওয়ায় পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এমনকি একাধিক কলেজে এমন বিভাগও রয়েছে যেখানে একজন শিক্ষকও নেই।

জানা যায়, ঢাকার দোহারের পদ্মা সরকারি কলেজে দুই হাজার ৫০০ শিক্ষার্থী। উদ্ভিদবিদ্যা ও রসায়ন বিভাগে একজন শিক্ষকও নেই। এমনকি কলেজের অধ্যক্ষও এরই মধ্যে অবসরে চলে গেছেন।’

যশোরের শহীদ সিরাজউদ্দিন হোসেন সরকারি কলেজে পদার্থবিজ্ঞান, গণিত ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে কোনো শিক্ষক নেই। টাঙ্গাইলের মধুপুর সরকারি কলেজে মার্কেটিং এবং ফিন্যান্স, ব্যাংকিং ও বীমা বিষয়ের শিক্ষক নেই। মির্জাপুর সরকারি কলেজে উদ্ভিদবিদ্যা ও কৃষি শিক্ষা বিষয়ের শিক্ষক নেই। বান্দরবানের লামার মাতামুহুরি সরকারি কলেজে দর্শন ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক নেই।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য - dainik shiksha হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা - dainik shiksha ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক - dainik shiksha সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি - dainik shiksha ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার - dainik shiksha রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0052011013031006