গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড়ে অবস্থিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কলেজে চাকরিচ্যুতির ৯ বছর পরে তিন প্রভাষকের সরকারিকরণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই ঘটনা ফাঁস হওয়ার পর কলেজে শিক্ষকমণ্ডলী ও অভিভাবকদের মাঝে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ছে। ওই কলেজে শিক্ষকদের মধ্যে দু’গ্রুপে ওই তিন প্রভাষককে সরকারিকরণের বিষয় নিয়ে আলোচনা-সমালোচনাসহ তর্কেও জড়িয়ে পড়েছে। তবে কলেজের অধ্যক্ষ এসএম মোবারক হোসেন জানান, তিনি এমপিওপ্রাপ্ত ৭৪ জন প্রভাষকের তালিকা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠালে অজ্ঞাত কারণে চাকরিচ্যুত তিন প্রভাষককে সরকারিকরণের তালিকায় লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।
সরকারিকরণের জন্য শিক্ষকদের তালিকাবদ্ধ ফাইলটি শেষ ধাপে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য রয়েছে। ২০০৯ সালে নানা অনিয়ম আর দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর আলমকে স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়। আর ইসলামের ইতিহাস বিষয়ের প্রভাষক ফাতেমা পারভিনকে নিয়মিত কলেজে ক্লাস না নেয়ার অভিযোগে ও ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিংয়ের প্রভাষক কিশোর কুমারের নাম অজ্ঞাত কারণে সরকারিকরণের তালিকায় স্থান পেয়েছে। বিষয়টি গত সাপ্তাহে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য কলেজের সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও অধ্যক্ষের কাছে জানতে চাইলে বিষয়টির মূল তথ্য বেরিয়ে আসে। নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক ডিজি অফিসের এক কর্মকর্তা জানান, গাজীপুরের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কলেজটি সরকারিকরণে বড় ধরনের অনিয়ম হচ্ছে। প্রথমদিকে কলেজ থেকে পাঠানো কর্মরত শিক্ষক কর্মচারীর নামের তালিকার সঙ্গে কলেজে কর্মরত নাই এমন বেশ কয়েকজনের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যারা বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে চাকরিচ্যুত হয়েছেন।
গত নয় বছর ধরে ওই কলেজের স্থায়ী ও সাময়িক বরখাস্ত হয়ে কলেজে চাকরিরত নাই এমন শিক্ষকরা হলেন- কলেজর সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর আলম, নাজমা আক্তার (প্রভাষক দর্শন), কিশোর কুমার (ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং), হাসিনা আক্তার জাহান (বাংলা)। তাদের মধ্যে জাহাঙ্গীর আলম ১৯৯৭ সালে ভুগোল বিষয়ের প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন এবং ২০০১ সালে সব শিক্ষকের সঙ্গে তার এমপিও হয়। ২০০৪ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এলে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে তিনি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর ২০০৪ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিমোতাবেক কাম্য যোগ্যতা না থাকলেও উপাধ্যক্ষ হিসেবে নিজের নিয়োগ নেন এবং ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। অবৈধভাবে তিনি উপাধ্যক্ষ নিয়োগ নিলেও বেতন ভোগ করতে থাকেন ভুগোল বিষয়ের প্রভাষক হিসেবে। এছাড়া রেজুলেশনে কলেজটির নাম পরিবর্তন করে চন্দ্রা কলেজ নামকরণের কারণে তিনি সমালোচনার মুখে পড়েন। অত্র কলেজের সাবেক শিক্ষক প্রতিনিধি শাহাজাহান মিয়া জানান, ওই সময় অধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর আলমসহ তালিকা বহির্ভূত যাদের নাম রয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিমোতাবেক নানা অভিযোগে চাকরিচ্যুত হয়।
এখন তাদের সরকারিকরণের কোনো প্রশ্নই উঠে না। যদি তাদের চাকরিচ্যুতদের সরকারিকরণ করা হয় তাহলে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে তা করা হবে। এ বিষয়ে চাকরিচ্যুত ও সরকারিকরণের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত সাবেক অধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর আলম জানান, আমাকে অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করে রাখা হয়েছে। আমি একটি দুদুকের মামলায় আমার পক্ষে রায় পেয়েছি। আমার অনিয়মে কলেজ কর্তৃপক্ষ অনিয়ম প্রমাণ করতে পারেনি। এ ব্যাপারে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এসএম মোবারক হোসেন জানান, জাহাঙ্গীর আলম, নাজমা আক্তার, কিশোর কুমার, হাসিনা আক্তার জাহান এবং ফাতেমা পারভিন নয় বছর ধরে কলেজে কর্মরত নাই। তাদের সরকারিকরণ হবে কীভাবে? তাছাড়া তাদের নামের তালিকাও পাঠানো হয়নি কলেজ থেকে। আমাদের কলেজ থেকে ৭৪ জনের নামের তালিকা পাঠানো হয়েছে। এরমধ্যে কৃষি বিষয়ের প্রভাষক ইব্রাহিম আলী সাহেব মারা গেছেন। এর বাইরে কারও সরকারিকরণের করার সুযোগ নাই।
সৌজন্যে: যুগান্তর