পাবনার চাটমোহর ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মিজানুর রহমানকে স্বপদে বহাল রেখে তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত দুর্নীতির তদন্ত করা অসম্ভব। এ কারণে তাকে অনতিবিলম্বে বরখাস্ত করা প্রয়োজন। তদন্ত কমিটির এমন মতামত উল্লেখ করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো: সোহরাব হোসাইনকে চিঠি দিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে সিনিয়র সচিব সোহরাব হোসাইন সাংবাদিকদের বলেন, মাউশির মহাপরিচালকের পাঠানো চিঠি এখন আমার হাতে পৌঁছায়নি। চিঠি পেলে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
১৮ ডিসেম্বর দেয়া এই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, অধ্যক্ষ মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে গত ২৫ সেপ্টেম্বর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে মাউশি। তার বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ, বৈধ নিয়োগকৃত শিক্ষকদের বাদ দিয়ে বিপুল অর্থের বিনিময়ে অবৈধভাবে নিয়োগকৃত শিক্ষকদের আত্তীকরণের অপচেষ্টার অভিযোগ রয়েছে। এজন্য প্রয়োজনীয় নিয়ম (তথ্যছক) অনুসরণও করা হয়নি। শিক্ষক-কর্মচারীদের মানবিক স্বার্থ বিবেচনায় প্রয়োজনীয় তথ্যছক ও ফাইলপত্র মাউশিতে পাঠানোর নির্দিষ্ট সময় ছিল। কিন্তু অধ্যক্ষ হীনস্বার্থে প্রয়োজনীয় নথিপত্র যথাসময়ে মাউশিতে পাঠাননি। অধ্যক্ষ মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে উত্থাপিত এসব অভিযোগ তদন্তে ৫ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি করা হয়। কমিটিকে ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই তদন্ত কমিটি মতামতসহ প্রতিবেদন মাউশিতে পাঠিয়েছে।
রিপোর্টে তদন্ত কমিটির মতামতের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, ‘অধ্যক্ষ মিজানুর রহমানকে স্বপদে বহাল রেখে তদন্ত কাজ করা অসম্ভব। এমনকি কলেজটির সরকারিকরণের অবশিষ্ট কাজ করাও সম্ভব নয়। এ বিষয়ে তিনি (অধ্যক্ষ) তথ্য বিকৃত করতে পারেন এমন শঙ্কা রয়েছে। অধ্যক্ষ তদন্ত কাজে অসহযোগিতা করেন। তিনি তথ্য-প্রমাণ দিতে অস্বীকৃতি জানান এবং সার্বিকভাবে তদন্ত কাজ স্থগিত করার উদ্যোগ নেন। এসব শুধু অসদাচরণ নয় সরকারি কাজে সরাসরি বাধা তথ্য অধিকার আইনেও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এজন্য অধ্যক্ষ মিজানুর রহমানকে অনতিবিলম্বে বরখাস্ত করা প্রয়োজন।
এদিকে চাটমোহর কলেজের শতবর্ষী গাছ কাটার অভিযোগে পাবনা বিচারিক আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয়। একই কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. আবদুল মান্নান মামলাটি করেন। মোট ২০টি গাছ কেটে অধ্যক্ষ ঈশ্বরদীর নিজের বাড়িতে নিয়ে যান। ওই মামলার শুনানি শেষে আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। কিন্তু স্থানীয় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেনি। পরোয়ানা মাথায় নিয়েই তিনি রীতিমতো কলেজ করেন। কয়েক দিন আগে উচ্চ আদালত থেকে জামিনও নিয়েছেন। তার অধ্যক্ষ পদের যোগ্যতা নিয়েও আদালতে মামলা হয়েছে। একই কলেজের প্রভাষক সরোয়ার হক এই মামলাটি করেন।
উল্লেখ্য, মিজানুরের বিরুদ্ধে দৈনিক শিক্ষায় একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পরই তদন্ত শুরু হয়।