চাটমোহর কলেজ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা

নিজস্ব প্রতিবেদক |

পাবনার চাটমোহর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান এর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। কলেজ ক্যাম্পাসের গাছ কাটার অভিযোগে ওই কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. আব্দুল মান্নানের দায়ের করা মামলায় এই  পরোয়ানা জারি হয়। তার বিরুদ্ধে ওই কলেজের প্রভাষক মো. সরওয়ার হক আরেকটি মামলা দায়ের করেছেন।

মামলা দুটি দায়ের করা হয়েছে পাবনার চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে।  সহকারী পুলিশ সুপার (চাটমোহর সার্কেল) মো. সজীব শাহরীন পরোয়ানা জারির কথা নিশ্চিত করেছেন।

অধ্যক্ষ মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। তিনি ২১ জন শিক্ষক নিয়োগের নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে দাবি করা হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দায়ের করা অভিযোগে। এছাড়া নিজ স্ত্রী শাহিনুর আয়শা সিদ্দিকাকে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক পদে চাকরি দিয়েছেন অধ্যক্ষ। শুধু তাই নয়, কলেজটি বেশ কিছু গাছ কেটে নিজ বাড়ির ফার্নিচার তৈরি ও কলেজের পুকুর লিজে স্বজনপ্রতি করেছেন তিনি। এসব অভিযোগে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) তদন্ত চলমান রয়েছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, কলেজটির অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান ঈশ্বরদীর দাশুরুরিয়া কলেজে প্রভাষক হিসেবে প্রথম এমপিওভুক্ত হন ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসে। শেষ এমপিও ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিলে। দাশুরিয়া কলেজের তার চাকরির অভিজ্ঞাতা ছিল নয় বছর নয় মাস। দাশুরিয়া কলেজে মাত্র ৯ বছর ৯ মাসের অভিজ্ঞা নিয়ে ও সহকারী অধ্যাপকের অভিজ্ঞতা না থাকলেও একই বছরের ১৫ আগস্ট নিয়ম বহির্ভূকভাবে পাবনার ফরিদুপরের দিঘুলিয়া এ জেড হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন। সে তারিখ থেকেই এমপিওভুক্ত হন তিনি, যা নিয়ম বহির্ভূত।

অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান গত ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ জুলাই চাটমোহর ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন। যোগদানের পরেই ব্যাপক দুর্নীতি শুরু করেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান কলেজ সরকারি হওয়ার আগে পরিচালনা কমিটিকে না জানিয়ে ব্যাক ডেটে রেজুলেশন টেম্পারিং, কাটাকাটি, ঘষামাজা ও কম্পিউটার দ্বারা স্ক্যান করে জনবল কাঠামোর অতিরিক্ত ২১ জন ভুয়া শিক্ষককে নিয়োগ দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। নিয়োগের সময় তিনি প্রায় এক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগে বলা হয়েছে। 

২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ৮ আগস্ট থেকে সারাদেশের আরও ২৭১টি কলেজের সাথে পাবনার চাটমোহর ডিগ্রি কলেজ সরকারি হয়। পরে ২৭ আগস্ট বেসরকারি আমলে গভর্নিং বডি বিলুপ্ত হয়ে চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী অফিসার কলেজ পরিচালনার দায়িত্ব পান। সেই দিন থেকে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ জানুয়ারি অধ্যক্ষ দুই লাখ ৯১ হাজার ৭৯০ টাকার অর্থিক অনিয়ম করেছেন বলে জানা গেছে। 

অভিযোগ রয়েছে, বিজ্ঞান গবেষাণাগারের যন্ত্রাপতি ও দ্রব্যাদি ক্রয়, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি ও সেমিনার লাইব্রেরির বই কেনা, প্রশংসাপত্র বাবদ বিনা রশিদে জনপ্রতি ৩৪০ টাকা হারে আদায় করেন অধ্যক্ষ। ভর্তি ও ফরম পুরণে সরকারি নির্ধারিত ফিয়ের অতিরিক্ত টাকা আদায় করেন। এ নিয়ে রাবেয়া খাতুন নামের এক শিক্ষার্থী দুদকে অভিযোগ করেন। বিষয়টি এখনও তদন্তাধীন রয়েছে। 

এছাড়া, শিক্ষার্থীদের পরিচয়পত্র দেয়ার নামে বিনা রশিদে জনপ্রতি ১৪০ টাকা হারে আদায় করা হয়। পাঠদানের বিষয় নবায়ন, শিক্ষকদের এমপিওভূক্তকরণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে লাখ লাখ টাকা আত্মাসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে অধ্যক্ষ মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে।  

অধ্যক্ষ মিজান কলেজের শতবর্ষী কড়ই গাছ কেটে নিজের বাড়ির ফার্নিচার তৈরি করেছেন। এনিয়ে কলেজের সহকারী অধ্যাপক আবদুল মান্নান বাদি হয় পবনা কোর্টে মামলা দায়ের করেন। অধ্যক্ষ কলেজের মার্কেটের ৩৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ আছে। এ বিষয়ে শিক্ষকরা দুদকে অভিযোগ করেছেন। এছাড়া পুকুর লিজ দেয়ায় স্বজনপ্রীতি করা হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে ওই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে, অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান কলেজের টাকা আত্মসাৎ করে তৈরি করেছেন বাড়ি. কিনেছেন জমি। এমনকি এ টাকায় মার্কেটও করেছেন অধ্যক্ষ। 

আরও পড়ুন

চাটমোহর কলেজ অধ্যক্ষের সঙ্গে দালাল আতাউরের রহস্যময় বৈঠক

অধ্যক্ষ মিজানের অপসারণ দাবিতে উত্তাল চাটমোহর

সরকারিকৃত চাটমোহর কলেজের অধ্যক্ষের যত অনিয়ম


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0055949687957764