চার শিক্ষার্থীকে মামলায় ফাঁসিয়ে টাকা নেয়ার অভিযোগ ডিবির বিরুদ্ধে

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি |

নারায়ণগঞ্জে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ৪ শিক্ষার্থীকে আটক করে প্রায় ৪ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে ডিবি পুলিশের বিরুদ্ধে। ঘুষ নিলেও পুলিশ ওই শিক্ষার্থীদের ছেড়ে না দিয়ে উল্টো মদ রাখার অভিযোগে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠায়। দুই দিন কারাভোগের পর গতকাল (২৭ জানুয়ারি) রোববার ওই শিক্ষার্থীরা জামিনে মুক্ত হয়। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চাষাঢ়া এলাকার একটি বাড়ির সামনে থেকে ডিবি পুলিশের একটি দল আল আমিন, স্বপ্রব, তুহিন, অনিক ও শাহরিয়ার খান নামে ৫ শিক্ষার্থীকে তুলে নেয়। তারা শহরের হ্যারিটেজ স্কুলের 'এ' লেভেলের শিক্ষার্থী। তাদের বিরুদ্ধে মদপান এবং সঙ্গে মদ রাখার অভিযোগ আনা হয়। এর মধ্যে শাহরিয়ারকে মুচলেকা রেখে রাতেই ছেড়ে দেওয়া হয়। শাহরিয়ার নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানের  ছেলে। বাকি ৪ জনকে ৩৪ ধারায় আদালতে প্রেরণের কথা বলে তাদের পরিবারের কাছ থেকে প্রায় ৪ লাখ টাকা আদায় করা হয়।

শিক্ষার্থীদের পরিবারের অভিযোগ, তাদের সন্তানরা মদ তো দূরের কথা, ধূমপানও করে না। ডিবি পুলিশ তাদের ধরে নিয়ে মদ উদ্ধারের নাটক সাজিয়েছে। পুলিশ কখনও বলেছে, তাদের সন্তানরা মদপান করেছিল, আবার বলেছে তাদের সঙ্গে মদ পাওয়া গেছে। যদি তারা মদ পানই করে থাকে তাহলে তাদের মেডিকেল টেস্ট করা হলো না কেন। পরিবারের সদস্যরা বলছেন, ওই শিক্ষার্থীরা সবাই মেধাবী। পুলিশের এ ধরনের কর্মকাণ্ডে তাদের শিক্ষাজীবন ব্যাহত হতে পারত। তারা এই 'মিথ্যা মামলা' প্রত্যাহার দাবি করেছে। 

নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) নূরে আলম বলেন, এ ধরনের একটি অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেন নারায়ণগঞ্জ ডিবি পুলিশের পরিদর্শক মো. হুমায়ুন। তিনি বলেন, অভিযোগ থেকে বাঁচতেই ওই শিক্ষার্থীদের পরিবারের সদস্যরা এখন একে নাটক বলছেন।

শিক্ষার্থীদের আটকের দিন জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন থাকায় এবং বিএনপি নেতার ছেলেকে পুলিশ তুলে নেওয়ায় চারদিকে সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে যে বারের নির্বাচনে অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত খানকে চাপে রাখতেই পুলিশ তার ছেলেকে তুলে নিয়ে গেছে। এ বিষয়ে গণমাধ্যম কর্মীরা জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে জানানো হয় যে, আটকরা মদ্যপ অবস্থায় ছিল। মুচলেকা রেখে তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে। ওই রাতেই সাখাওয়াতের ছেলেকে ছেড়ে দিলেও তার সঙ্গে আটক অপর ৪ জনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। 

চার শিক্ষার্থীর পরিবারের অভিযোগ, তাদের প্রত্যেকের পরিবারের কাছে ফোন করে দেড় লাখ টাকা করে দাবি করা হয়। পরে জনপ্রতি ১ লাখ টাকায় রফাদফা হয়। এরপর ৩ জনের পরিবার ১ লাখ টাকা করে এবং বাকি একজনের পরিবার ৮০ হাজার টাকা দেয় ডিবি পুলিশকে। সিদ্ধান্ত হয় যে তাদের সন্তানদের ৩৪ ধারায় আদালতে প্রেরণ করা হবে। কিন্তু পরদিন শুক্রবার ডিবি পুলিশ ৪ শিক্ষার্থীকে ৪ বোতল মদসহ গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠায়। 

রোববার ওই ৪ শিক্ষার্থীর পক্ষে আদালতে জামিন আবেদন করেন সাখাওয়াত খান। আদালত শুনানি শেষে ৪ শিক্ষার্থীর জামিন মঞ্জুর করেন। সাখাওয়াত খান বলেন, অন্য এক ব্যক্তির কাছ থেকে মদ উদ্ধার করে ডিবি পুলিশ। সেই মামলায় তার ছেলের বন্ধু ওই ৪ শিক্ষার্থীকেও আসামি করা হয়। বিষয়টি দুঃখজনক। 

ডিবি পুলিশের পরিদর্শক হুমায়ুন বলেন, ডিবির একটি টিম তাদের চার বোতল মদসহ গ্রেফতার করে। তবে ওই সময় তিনি সেখানে ছিলেন না। শাহরিয়ার খানকে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ঘটনার দিন আইনজীবী সমিতির নির্বাচন ছিল। সাখাওয়াত খানের ছেলেকে আটকের পর অপহরণের গুজব ছড়ানো হয়। বিতর্ক এড়াতে ঊর্ধ্বতন কর্তপক্ষের সঙ্গে কথা বলে মুচলেকায় তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। 

ডিবি কর্মকর্তা নূরে আলম বলেন, ওই ৪ জনের সঙ্গে মদ পাওয়া গেলেও শাহরিয়ারের সঙ্গে কিছু না পাওয়ায় মুচলেকায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। 

সৌজন্য: সমকাল


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ - dainik shiksha স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে - dainik shiksha শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0055410861968994