চিকিৎসক ছাড়াই রোগীর সেবা পরিচালনা করা যাবে এমন ভেন্টিলেটর তৈরি করেছে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) শিক্ষার্থীরা। রুয়েট শিক্ষার্থীদের তৈরি অ্যাপে অনলাইনে ঘরে বসেই একটি আইসিইউতে থাকা সব ভেন্টিলেটরগুলো পরিচালনা করতে পারবেন চিকিৎসক।
এছাড়া ভেন্টিলেটরটিতে একটি ডাটাবেজ থাকবে। ডাটাবেজে রোগীর পূর্বের তথ্য সংরক্ষণ করা থাকবে। ডাটাবেজ দেখে চিকিৎসক সহজেই রোগীর চিকিৎসা দিতে পারবেন। পাশাপাশি রোগীর অবস্থা অনুযায়ী ফোনে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দিতে পারবেন অন্য চিকিৎসকদের কাছে।
আজ মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) দুপুরে রুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের হল রুমে ‘দুর্বার কান্ডারী’ টিম সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায়। এসময় ভেন্টিলেটরের বিভিন্ন সুবিধাগুলো তুলে ধরেন তারা।
জানা গেছে, রুয়েটের একদল শিক্ষার্থীর সমন্বয়ে গঠিত ‘দুর্বার কান্ডারী’ নামের টিমটি প্রায় দুই পরিশ্রম করে ‘দুর্বার কান্ডারী ইমার্জেন্সি ভেন্টিলেটর’ তৈরি করেছে। ‘দুর্বার কান্ডারী ইমার্জেন্সি ভেন্টিলেটর’ যা অত্যন্ত কম খরচে দেশিয় প্রযুক্তিতে তৈরি। যা পরিচালনা করাও অত্যন্ত সহজ এবং নিরাপদ। এই ভেন্টিলেটরটি বিশ্বের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় এমআইটি কর্তৃক করোনাকালে প্রস্তুতকৃত ইমার্জেন্সি ভেন্টিলেটর -এর মডেল অনুসরণ করে সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিকে প্রস্তুত করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের দাবি দেশে করোনাকালীন দুর্যোগে ভেন্টিলেটর সংকট সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে তৈরি করা হয়েছে এ ভেন্টিলেটর। ভেন্টিলেটরটি রুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মাসুদ রানার তত্ত্বাবধানে ‘দুর্বার কান্ডারী’ নামের টিম তৈরি করে।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন, রুয়েটে ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. রফিকুল ইসলাম সেখ। তিনি বলেন, ‘দুর্বার কান্ডারী ইমার্জেন্সি ভেন্টিলেটর’ এর মাধ্যমে বাংলাদেশের ভেন্টিলেটর সংকট সমস্যার সমাধান হবে-এটাই আমাদের প্রত্যাশা। ভেন্টিলেটরটি সরকারের নজরে আসলে, বিষয়টি সরকার দেখবেন। এছাড়া প্রাথমিক অবস্থায় ভেন্টিলেটরটি পরীক্ষাও করা হবে।
এসময় ‘টিম দুর্বার কান্ডারীর রুয়েট’ তত্ত্বাবধায়ক এবং প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. মাসুদ রানা বলেন, ‘এই ভেন্টিলেটরটি মাত্র ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা ব্যয়ে প্রস্তুত করা সম্ভব দেশিয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে। কেবলমাত্র করোনা আক্রান্ত রোগীদের চাহিদার কথা ভেবে ‘দুর্বার কান্ডারী ইমার্জেন্সি ভেন্টিলেটর’ তৈরি করা হয়েছে। করোনা মহামারি এবং লকডাউনের সময় গঠিত হওয়া টিমটি এই ভেন্টিলেটরটি তৈরি করে। এরসঙ্গে যুক্ত রুয়েটের শিক্ষার্থীরা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে একত্র হয়ে এই ভেন্টিলেটর তৈরির কাজ সম্পন্ন করেছেন। এই ভেন্টিলেটরটিকে আরও উন্নত করার জন্য তারা দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন রুয়েটের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. মো. সেলিম হোসেন, পরিচালক পরিকল্পনা ও উন্নয়ন প্রফেসর ড. মিয়া মো. জগলুল সাদত, পরিচালক গবেষণা ও সম্প্রসারণ প্রফেসর ড. মো. ফারুক হোসেন, ইসিই বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মো. শামীম আনোয়ার, উপ-পরিচালক ছাত্রকল্যাণ মো. মামুনুর রশীদ ও আবু সাঈদ, রুয়েটের চিফ মেডিকেল অফিসার ডা. মো. মকসেদ আলী প্রমুখ।
এছাড়াও টিম ‘দুর্বার কান্ডারী’র সদস্যদের মধ্যে রাফিউল ইসলাম (ইইই ’১৫), মাহমুদুল হাসান (ইইই ’১৫), ওয়াসিফ আহমেদ (এমটিই ’১৬), রাফি রহমান (এমই ’১৫), রফি উদ্দিন (এমই ‘’৫) ও মাশরুর সাকিবস (সিএসই ’১৬) প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।