ভেটেরিনারি চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া কোনো অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি ও গাভীকে না খাওয়াতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ক্ষতিকর দুধ উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা বিএসটিআই ও বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের (বিএফএসএ) কাছে জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী ২৮ জুলাইয়ের মধ্যে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশনার পাশাপাশি রুল জারি করা হয়েছে। দুধ পরীক্ষা করার জন্য একটি তহবিল গঠনের কাজে অর্থ সরবরাহ করতে দুধ উৎপাদন কম্পানিকে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।
বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে গতকাল মঙ্গলবার বিএফএসএ ওই প্রতিবেদন দাখিল করে। বিএফএসএর পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার ফরিদুল ইসলাম। বিএসটিআইয়ের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার সরকার এম আর হাসান মামুন, দুদকের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট সৈয়দ মামুন মাহবুব। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিনউদ্দিন মানিক ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল হেলেনা বেগম চায়না।
এদিকে বিএসটিআইয়ের লাইসেন্সধারী ১১টি কোম্পানির বাজারে থাকা পাস্তুরিত দুধ ও ৫০টি খামারের কাছ থেকে নেয়া দুধের নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করেছে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। এসব দুধের নমুনার কোনো কোনোটিতে মানবদেহে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী জীবাণু ক্যাডমিয়ামও পাওয়া গেছে। এ ছাড়া এসব দুধে মানুষের কিডনির জন্য ক্ষতিকর ক্রোমোমিয়াম পাওয়া গেছে। লাইসেন্সধারী ১১টি কোম্পানির সবগুলোর দুধেই মাত্রাতিরিক্ত সিসা পাওয়া গেছে। বিএফএসএ ১১টি দুধ কম্পানির পাস্তুরিত দুধ, ৫০টি খামারি দুধের নমুনা বাজার থেকে সংগ্রহ করে আলাদা ছয়টি ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে। এরপর তার প্রতিবেদন দাখিল করে আদালতে।
ক্যাডমিয়াম সাদা রঙের একটি ধাতব পদার্থ। মানুষের শরীরে অতিরিক্ত ক্যাডমিয়াম জমা হলে বিষক্রিয়ায় ক্যান্সার, হৃদেরাগ ও কিডনি রোগ দেখা দিতে পারে।
বিএফএসএর দেয়া প্রতিবেদন দেখার পর আদালত বলেন, ‘দুটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের রিপোর্ট কেন সাংঘর্ষিক?’ আদালত বলেন, ‘আইসিডিডিআরবি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ দুধে ক্ষতিকর উপাদান পেয়েছে। অথচ বিএসটিআই বলল যে কিছুই পাওয়া যায়নি।’
ওই সময় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের আইনজীবী আদালতকে বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯টি প্যারামিটারে পরীক্ষা করেছে। বিএসটিআই করেছে ৯টি প্যারামিটারে। আর আমরা পাঁচটি প্যারামিটারে। এ কারণেই পরীক্ষার প্রতিবেদনে হেরফের। আর বিএসটিআই গতকাল (সোমবার) অন্য একটি বেঞ্চে বলেছে অ্যান্টিবায়োটিক আছে কি না তা পরীক্ষার সক্ষমতা তাদের নেই।’
ওই সময় আদালত ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘বাঙালিকে হাইকোর্ট দেখান? দায়িত্ব পালন না করে প্যারামিটারের গল্প দিচ্ছেন। পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে হলে জরিমানা গুনতে গুনতে শেষ হয়ে যেতেন।’
তখন একজন আইনজীবী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই অধ্যাপককে একজন হুমকি দিয়েছেন।
ওই সময় আদালত বলেন, ‘হুমকি? দুধ নিয়ে কি কোনো রাজনীতি আছে? রাজনীতি থাকলে তা আমাদের জানান।’ আদালত বলেন, ‘সিসাযুক্ত দুধ আছে?’ আদালত আরও বলেন, সিসাযুক্ত দুধ বাজারে থাকা সমীচীন নয়। আদালত বিএসটিআইকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘বাজারে থাকা দুধ নিরাপদ কি না সেটা দেখার দায়িত্ব আপনার।’
বিএসটিআইয়ের আইনজীবী বলেন, ‘এটা বিএসটিআইয়ের একার কাজ নয়। পশুখাদ্যের মাধ্যমে দুধে কিছু ঢুকছে। আর গরু মোটাতাজা করতে এবং দুধ বেশি পেতে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানো হচ্ছে। এটা দেখার দায়িত্ব কৃষি মন্ত্রণালয় ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের।’
হাইকোর্ট গত ১৫ মে এক আদেশে গাভীর দুধ ও বিভিন্ন প্যাকেটজাত দুধ, দই ও গো-খাদ্যের নমুনা সংগ্রহ করে তাতে কী পরিমাণ কীটনাশক, ব্যাকটেরিয়া, অ্যান্টিবায়োটিক, রাসায়নিক, সিসাসহ মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর উপাদান রয়েছে তা নিরুপণ করে বিএসটিআই ও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। ওই নির্দেশের পর নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ গতকাল প্রতিবেদন দাখিল করল।
এর আগে গত ২৩ জুন বিএসটিআই বাজারে থাকা দুধ ও দই পরীক্ষা করে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করে। ওই পরীক্ষার প্রতিবদেন বলা হয়, কোনো ক্ষতিকর উপাদান ধরা পড়েনি।