সরকার ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটি ঠিক হবে না। কারণ ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করা সমাধান নয়। বরং ছাত্র রাজনীতিকে জাতীয় রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে আনতে হবে। সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ছাত্র রাজনীতি নিয়ে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন। মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) যুগান্তর পত্রিকায় এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, ‘বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতি ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)।
আলোচনায় অংশ নিয়ে আ স ম আবদুর রব বলেন, বর্তমান সরকার নিজেদের পাপ আড়াল করতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে চাচ্ছে; যাতে ছাত্ররা কথা বলতে না পারে। কিন্তু তাদের কথা বলতে হবে। স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বকে রক্ষার জন্য দেশে ছাত্র রাজনীতি থাকতে হবে। ছাত্র রাজনীতির মাধ্যমেই দেশে স্বাধীনতা এসেছিল। ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার মতো নিষ্ঠুর ও নির্মম সিদ্ধান্ত নেয়া সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে হবে।
রাশেদ খান মেনন বলেন, একটি ছাত্র সংগঠনের সাংগঠনিক প্রধান কিভাবে রাজনৈতিক দলের প্রধান হতে পারে? এটা আমার মাথায় আসে না। দলের সাংগঠনিক নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত হতে পারলে এ দেশের ছাত্র রাজনীতি এগিয়ে যাবে।
ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, ছাত্র রাজনীতি মানে জাতীয় রাজনীতির বড় জায়গা। সত্যের পক্ষে তারুণ্যকে সব সময় থাকতে হবে। সঠিক কথা বলতে হবে। খালেদা জিয়াকে যেভাবে জেলে রাখা হয়েছে তা অন্যায়। দেশে একটা অনাচার চলছে। দেশ আজ গভীর সংকটে। এর বিরুদ্ধে কি কথা বলা যাবে না? কথা বলতে হবে।
সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ছাত্র রাজনীতিতে এখন কৃষ্ণপক্ষ চলছে। কিন্তু সব কিছু অন্ধকারে হারিয়ে যায়নি। তাহলে গণজাগরণ মঞ্চ, কোটা সংস্কার আন্দোলন, নিরাপদ সড়কের আন্দোলন থেকে শুরু করে হালের আবরার হত্যার বিচারের আন্দোলন হতো না।
বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি সব সময়ই নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু সেখানে কিভাবে আবরার হত্যাকাণ্ড হল? এটা ছাত্র রাজনীতি না থাকার কারণে হয়েছে। ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা ঠিক হবে না। অবারিত করে দেয়া দরকার।
তিনি বলেন, আমি একটি আহ্বান জানাতে চাই। ডাকসুর সাবেক ভিপি-জিএসদের এক প্ল্যাটফর্মে আনতে চাই। কাউন্সিল অব এক্স ভিপি-ভিসি অব ডাকসু নামে। এই আমরাই নতুনদের সামনের দিকে পথ দেখাতে পারব সেখান থেকে।
সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাইয়িদ বলেন, ছাত্র রাজনীতিকে জাতীয় রাজনীতি থেকে বিযুক্ত করতে হবে। বর্তমানে জাতীয় রাজনীতি লুটেরাদের হাতে চলে গিয়েছে। এ অবস্থা দূর করতে ঐক্য প্রয়োজন রয়েছে।
ডাকসুর সাবেক ভিপি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান বলেন, দেশে বর্তমানে ঐতিহাসিক পরিবর্তন প্রয়োজন। ডাকসুর বর্তমান ভিপি নূরুল হক নূরকে বলব- তুমি নেতৃত্ব দাও। এ দেশের বুদ্ধিজীবী সমাজ, সাবেক ছাত্রনেতারা তোমাদের পাশে আছে। দেশ, মানুষ, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, মানবাধিকার ফিরিয়ে এনে ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে হবে।
ডাকসুর বর্তমান ভিপি নূরুল হক নূর বলেন, দলীয় লেজুড়বৃত্তি ছাড়া নব্বইয়ের পর এ দেশে ছাত্র রাজনীতিতে কিচ্ছু হয়নি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় ছাত্রলীগ লাগামহীন হয়ে পড়েছে। বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে হয়তো ছাত্রদলও লাগামহীন হয়ে পড়ত।
সভাপতির বক্তব্যে সুজনের নির্বাহী সদস্য ও সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি পেলে ছাত্র রাজনীতি এই কলুষতা থেকে মুক্তি পাবে।
গোলটেবিল বৈঠকে আরও বক্তব্য রাখেন- ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত ও আবু সাঈদ খান, শিক্ষাবার্তা সম্পাদক এএন রাশেদা প্রমুখ। সুজনের সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের সঞ্চালনায় ‘বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতি ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা’ শীর্ষক প্রবন্ধ পাঠ করেন সুজনের সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার শর্মা।