দিনাজপুরে দুই নেতাকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে ঘেরাও এবং সংঘর্ষের ঘটনায় ৪৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার দিনাজপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ইমাম আবু জাফর রজব এবং দিনাজপুর সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাব্বির আহমেদ সুজনকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে কোতয়ালি থানার সামনে এ সংঘর্ষ হয়।
এ দিন রাতেই এ ঘটনায় ১৪ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে উল্লেখ করে ৪৭ জনের নামসহ অজ্ঞাতনামা ২০ থেকে ২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে কোতয়ালি থানা পুলিশ।
মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দিনাজপুরের কোতয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোজাফফর হোসেন।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটার দিকে দিনাজপুর জেলা ইমাম আবু জাফর রজবকে দিনাজপুরের হাজী মোহম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি) ২০১৫ সালের দু’জন শিক্ষার্থীকে হত্যা মামলাসহ আরো বেশ কয়েকটি সুনির্দিষ্ট মামলায় গ্রেফতার করা হয়। একই দিনে বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে দিনাজপুর সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাব্বির আহমেদ সুজনকে হত্যা মামলা ও অবৈধভাবে জমি দখলের বিরুদ্ধে কয়েকটি সুনির্দিষ্ট মামলায় গ্রেফতার করে কোতয়ালি থানা পুলিশ।
স্থানীয়রা জানান, পুলিশ এ দুই নেতাকে বিকালে থানায় নিয়ে আসলে দিনাজপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া জাকির ও জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তানভীর ইসলাম রাহুলের নেতৃত্বে সমর্থকরা মুক্তির দাবিতে থানা ঘেরাওয়ের চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে পুলিশের ওপর চড়াও হয়ে ইটপাটকেল ছুড়ে তারা। পরে পুলিশের লাঠিচার্জে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় তারা। এরপর কড়া নিরাপত্তায় জেলা জজকোর্টে হাজির করে কারাগারে পাঠানো হয় দুই নেতাকে।
থানা ঘেরাও ও পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতেই একটি মামলা দায়ের করে কোতয়ালি থানা পুলিশ।
কাদের এই মামলার আসামি করা হয়েছে এ বিষয়ে কোতয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোজাফফর হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি এখন নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি।
তবে যারা থানার সামনে থেকে সবাইকে উস্কে দিয়ে থানা ঘেরাও ও পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে তাদের বিরুদ্ধেই এই মামলা করা হয়েছে বলে পুলিশ জানায়।
কোতয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোজাফফর হোসেন বলেন,‘এখনই আমরা নাম প্রকাশ করতে চাচ্ছি না। আমাদের ১৪ জন পুলিশ সদস্যকে বৃহস্পতিবার থানার সামনে কিছু ব্যক্তি ইটপাটকেল মেরে ও লাঠি দিয়ে আঘাত করে আহত করেছে। যে ৪৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে তাদের নাম প্রকাশ করলে তারা আত্মগোপনে যেতে পারেন। আমরা অভিযান চালাচ্ছি আসামিদের ধরার জন্য। পরবর্তীতে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।’
বৃহস্পতিবার বিকেলেই দিনাজপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি ইমাম আবু জাফর রজব ও ছাত্রলীগ নেতা সাব্বিরকে গ্রেপ্তারের পর জেলা জজকোর্টের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। হাজী দানেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের জোড়া খুনসহ অন্যান্য মামলার জন্য তাদের ৭ দিনের রিমান্ড চাওয়া হবে বলেও পুলিশ জানায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জোড়া খুনের ঘটনায় জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতিকে গ্রেফতারে খুশি হয়েছেন বলে জানিয়েছেন নিহত দুই ছাত্রের পরিবারের সদস্যরা।
নিহত জাকারিয়ার বাবা মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘আমি আমার ছেলের খুনিদের বিচার চেয়ে দীর্ঘ পাঁচ বছর ঘুরেছি। বিচারের আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলাম। কিন্তু গত বছর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে বিচারের আশ্বাস দেন। তার মধ্যে ইমাম আবু জাফর রজবকে বৃহস্পতিবার গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি যে আসামিরা আছেন তাদেরও দ্রুত গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।’
নিহত মাহমুদুল হাসান মিল্টনের মা রেবেকা খাতুন বলেন, ‘ছেলে হত্যার বিচার চেয়েছিলাম মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে। তিনি তার কথা রেখেছেন। আমার সন্তানকে যারা নির্মমভাবে মেরে ফেলেছে তাদের একজনকে গ্রেফতারের কথা শুনে আমি কিছুটা আশ্বস্ত হয়েছি। দীর্ঘদিন পরে হলেও আমার সন্তান হত্যার বিচার দেখে মরতে পারলে আমারও শান্তি লাগবে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তার করার জন্য আমি দাবি জানাচ্ছি।’
তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তুলে আন্দোলনে নামে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পক্ষের নেতাকর্মীরা। আন্দোলনরত অবস্থায় ২০১৫ সালের ১৬ এপ্রিল ভেটেরিনারি অনুষদের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একাংশের নেতারা ছাত্রলীগের সভাপতি ইফতেখার ইসলাম রিয়েল ও সম্পাদক অরুণ কান্তি রায় গ্রুপের ওপর হামলা চালায়। এতে বিবিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র জাকারিয়া ও কৃষি বিভাগের ছাত্র মাহমুদুল হাসান মিল্টন নিহত হন। খুনের ঘটনায় পরিবারের করা পৃথক দুটি মামলায় ৪১ জনকে আসামি করা হয়।