ছাত্রলীগে উড়ে এসে জুড়ে বসাদের চিহ্নিত করা হচ্ছে

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র আল নাহিয়ান খান জয়। মাদক সম্পৃক্ততা, চাঁদাবাজি ও অনৈতিক কাজে যুক্ত হওয়ার অভিযোগে শোভন-রাব্বানীকে সরিয়ে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, গত ১৪ সেপ্টেম্বর এক নম্বর সহসভাপতি জয়কে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। ক্রান্তিকালে দায়িত্বে আসা জয় এরই মধ্যে দায়িত্বের এক মাস পার করেছেন। এ সময়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগে কী পরিবর্তন এলো, ভবিষ্যত্ পরিকল্পনাই বা কী—এসব বিষয় নিয়ে সম্প্রতি কথা হয় তাঁর। রোববার (৩ অক্টোবর) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত সাক্ষাৎকার থেকে এ তথ্য জানা যায়। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন রফিকুল ইসলাম।

প্রশ্ন: বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কাজ কী? শিক্ষার্থীদের জন্য কী করছে ছাত্রলীগ?

আল নাহিয়ান খান জয় : বাংলাদেশ ছাত্রলীগ শিক্ষার্থীদের সংগঠন। শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়, স্বার্থরক্ষা আমাদের মূল উদ্দেশ্য। শিক্ষার্থীদের মূল চাওয়া সুষ্ঠু শিক্ষার পরিবেশ, বাসস্থান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করছে ছাত্রলীগ। শিক্ষার্থীদের যেকোনো বড় আন্দোলনে আমরা পাশে দাঁড়িয়েছি, দাবি আদায়ে একাত্মতা প্রকাশ করেছি। শিক্ষার্থীদের কষ্ট লাঘবে যা যা প্রয়োজন, তা নিয়ে কাজ করব আমরা।

প্রশ্ন : ছাত্রদের অধিকার রক্ষার কথা বলছেন, কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বহু বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজের হলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতন চালানোর অভিযোগ রয়েছে। জোর করে শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যোগ দিতে বাধ্য করা হয়। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?

আল নাহিয়ান খান জয় : দেখুন, ছাত্রলীগ সব সময় ছাত্রদের অধিকার নিয়ে কথা বলে, ভবিষ্যতেও বলবে। হ্যাঁ, এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে। কেন্দ্র থেকে কোনো ধরনের মারধর বা নির্যাতন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। ব্যক্তিস্বার্থেই তারা এমনটি করেছে। আমরা তাদের সরাসরি বলে দিয়েছি, এ ধরনের কোনো কর্মকাণ্ড ছাত্রলীগ সহ্য করবে না। কাউকে জোর করে কর্মসূচিতে নেওয়া যাবে না।

প্রশ্ন : দীর্ঘ সময় ধরে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের আধিপত্য। অভিযোগ রয়েছে, বিরোধী পক্ষও নানাভাবে ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশ করছে। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?

আল নাহিয়ান খান জয় : অনুপ্রবেশের বিষয়টি অস্বীকার করার সুযোগ নেই। সঠিক যাচাই-বাছাই না হওয়ায় এমনটি হয়েছে। নেতা বানানোর ক্ষেত্রে আমাদের দুর্বলতা রয়েছে। অনুপ্রবেশের অভিযোগ পাওয়ার পর যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। তথ্য-প্রমাণ মিলিয়ে ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। এখন থেকে যথাযথ যাচাই-বাছাই করে নেতা নির্বাচন করা হবে। যোগ্যতা হিসেবে—ছাত্র হতে হবে, পারিবারিক রাজনৈতিক পরিচয় আওয়ামী লীগ আবহ অর্থাত্ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের হতে হবে। মাদকাসক্ত কাউকে পদে নেওয়া হবে না।

প্রশ্ন : জেলা কমিটির মেয়াদ এক বছর। বেশির ভাগ কমিটির মেয়াদ শেষ। নতুন সম্মেলন এবং কমিটি গঠন নিয়ে কী ভাবছেন?

আল নাহিয়ান খান জয় : একটি বিশেষ সময়ে দায়িত্ব পেয়েছি। আমাদের হাতে সময়ও খুব বেশি নেই। হ্যাঁ, অনেক জেলা কমিটির মেয়াদ পার হয়েছে। আরো একটু সময় প্রয়োজন। নির্দিষ্ট সময়ে নতুন কমিটি গঠনের চেষ্টা করব।

আর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আমাদের অভিভাবক। কাজেই ছাত্রলীগ একা কিছু করতে পারে না। স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সমন্বয় করে কমিটি করতে হয়।

প্রশ্ন : ছাত্রলীগের একটি অংশের দাবি কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদে এক-তৃতীয়াংশই বিতর্কিত। এ নিয়ে আন্দোলনও করেছে পদপ্রত্যাশীরা। বিতর্কিতদের নিয়ে কী ভাবছেন?

আল নাহিয়ান খান জয় : ছাত্রলীগ পরিচালনায় দায়িত্ব পেয়েছি ঠিকই, কিন্তু আমরা সংগঠনের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে এখনো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলতে পারিনি। দায়িত্ব পাওয়ার পর একটি প্রতিনিধিদল নিয়ে সাক্ষাত্ করেছি। তারপর প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সফর থাকায় কর্ম পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলতে পারিনি। আবার হঠাত্ করে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েটে) অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে গেছে।

দেখুন, প্রধানমন্ত্রী দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে নিয়ে গেছেন। আমরা ছাত্রলীগ তাঁর এই উন্নয়ন ধারাকে এগিয়ে নিতে একসঙ্গে কাজ করতে চাই। নিজেদের মধ্যে ঝামেলা সৃষ্টি করে প্রতিপক্ষকে সমালোচনা করার সুযোগ দিতে চাই না। বিতর্কিতদের বাদ দেওয়া এবং পদবঞ্চিতদের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। আমরা চাই না নিজেদের মধ্যে কোনো বিশৃঙ্খলা থাকুক। কোনো ক্ষেত্রে বিরোধ দেখা দিলে তার সমাধান করে একসঙ্গে চলব আমরা। সংগঠন যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তা গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে।

প্রশ্ন : বুয়েটের আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করেছে ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী। তাদের সংগঠন থেকে বহিষ্কার করার মধ্য দিয়েই কী দায় শেষ হলো?  

আল নাহিয়ান খান জয় : বারবার বলা হয়েছে, কারো ব্যক্তিগত দায় ছাত্রলীগ নেবে না। আমরা সেটা নেইনি। কিছু ছাত্রলীগ নামধারী ব্যক্তিগত উদ্যোগে কাজটি করেছে। তাদের ব্যক্তিগত এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছে। এজন্য ১২ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ছাত্রলীগে কেউ অন্যায় করে পার পাবে না। এটুকু নিশ্চিত করতে পারি।

আমরা চাই ছাত্রলীগ ভালোভাবে চলুক। কিছু অতি উত্সাহী নেতাকর্মী সংগঠনকে বিতর্কিত করতে কাজ করছে। আমরা মনে করি তারা অনুপ্রবেশকারী, সুযোগ সন্ধানী। তাদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। তারা যেন আর কোনো অতি উত্সাহী আচরণ না করে সেগুলো আমরা দেখভাল করছি।

প্রশ্ন: তৃণমূল ছাত্রলীগ বা নেতাকর্মীদের জন্য আপনার নির্দেশনা কী?

আল নাহিয়ান খান জয় : বিশেষ সময়ে দায়িত্ব পেলেও সব ইউনিটকে একটি কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ছাত্রলীগ বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে চলে। এর বাইরে কেউ আদর্শচ্যুত বা অপরাধে যুক্ত হলে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। আমরা অন্যায় ও অন্যায়কারীকে প্রশ্রয় দেব না। সারা দেশে ছাত্রলীগের ১১১ ইউনিটের লাখ লাখ নেতাকর্মীকে কেন্দ্র থেকে আমরা দুজন একা সামলাতে পারব না। এর জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সমন্বয় করে ভালো পথে এগিয়ে যাবে ছাত্রলীগ।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0026009082794189