শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে অন্ধকারে থাকা জাকসু নির্বাচন আগামী নভেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর আগে জাকসু নির্বাচনসংক্রান্ত প্রস্তুতিমূলক কমিটিও গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু গত বুধবার (৩ জুলাই) তুচ্ছ ঘটনায় দেশীয় অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে দুই হলের ছাত্রলীগের দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ার ঘটনায় জাকসু নির্বাচন আবারও অনিশ্চয়তায় পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ ঘটনা জাকসু নির্বাচনে কোনো প্রভাব ফেলবে না।
গত ২৮ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৮তম বার্ষিক সিনেট অধিবেশন শুরুর আগমুহূর্তে জাকসু নির্বাচনের দাবিতে পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের তিনটি ফটক অবরোধ করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পরে দাবি মেনে নিয়ে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে জাকসু নির্বাচন কমিশন গঠন করে নভেম্বরের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করা হবে বলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম আন্দোলনকারীদের আশ্বাস দেন। এর এক দিন আগে গত ২৭ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট কক্ষে জাকসু নির্বাচনের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে মতবিনিময়সভার আয়োজন করে প্রশাসন। কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক শেখ মো. মনজুরুল হককে আহ্বায়ক করে ১২ সদস্যের জাকসু নির্বাচনসংক্রান্ত প্রস্তুতিমূলক কমিটিও গঠন করা হয়। সব মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নির্বাচনের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছিল। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকেও দৃশ্যমান পদক্ষেপের জন্য এক সপ্তাহের সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। তবে তাদের বেঁধে দেওয়া এক সপ্তাহ না পেরোনোর আগেই ছাত্রলীগ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই সংঘর্ষের দোহাই দিয়ে নির্বাচনের পথে আর এগোবে না বলে শিক্ষার্থীদের আশঙ্কা ।
এ ব্যাপারে চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সোহানুর রহমান বলেন, ‘জাকসু নির্বাচনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে আসছে। কিন্তু এ বিষয়ে প্রশাসনের তেমন কোনো আগ্রহ কিংবা উদ্যোগ কোনোটাই ছিল না। সর্বশেষ তারা একটি উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল, কিন্তু আমার মনে হয় গত বুধবারের ঘটনাকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অজুহাত হিসেবে নিয়ে জাকসু নির্বাচনকে আবারও অনিশ্চয়তায় ফেলে দিতে পারে।’
বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের জাবি আহ্বায়ক শাকিলউজ্জামান বলে, ‘ক্যাম্পাসের অবস্থা উত্তপ্ত করে জাকসু নির্বাচন বানচাল করার জন্য কোনো মহল উসকানি দিয়ে ক্যাম্পাসে এই বিশৃঙ্খলা ঘটাতে পারে।’
ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি নজির আমিন চৌধুরী জয় বলেন, ‘জাকসু নেই, হলের নেতৃত্ব নেই বলেই এ ধরনের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। জাকসু থাকলে এমন হতো না।’
শাখা ছাত্রদলের সভাপতি সোহেল রানা বলেন, ‘জাকসু নির্বাচন যেন ছাত্রলীগের একক নির্বাচন হতে পারে সে জন্য এসব নাটক মঞ্চস্থ করছে ছাত্রলীগ। আর নির্দেশনা দিচ্ছে ও বাস্তবায়ন করছে বর্তমান প্রশাসন। আমার সংগঠন মনে করে, বিশ্ববিদ্যালয়ে যা-ই হচ্ছে, প্রশাসনের মদদেই হচ্ছে। ছাত্রলীগের সংঘর্ষের মাধ্যমে জাকসু নির্বাচন অনিশ্চয়তায় পড়েনি। বরং সরকারের নির্দেশনায় প্রশাসন সুকৌশলে জাকসু নির্বাচনকে ছাত্রলীগের একক নির্বাচনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।’
তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দাবি, এ ঘটনা জাকসু নির্বাচনকে প্রভাবিত করবে না। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও শিক্ষক কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক বশির আহমেদ বলেন, ‘আমার মনে হয় না সংঘর্ষের ঘটনায় জাকসু নির্বাচন অনিশ্চয়তায় পড়বে। একটা তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করে এ সংঘর্ষ হয়েছে। তাই এ ঘটনায় জাকসু নির্বাচনের যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে তাতে কোনো প্রভাব পড়বে না।’
প্রক্টর ফিরোজ উল হাসান বলেন, ‘আমার মনে হয় না এ ধরনের ঘটনা জাকসুর ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে। তবে এ ধরনের ঘটনা ধারাবাহিকভাবে ঘটতে থাকলে কোনো প্রভাব পড়লেও পড়তে পারে।’ এ বিষয়ে প্রশাসনের সঙ্গে একমত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জুয়েল রানা বলেন, ‘জাকসু নির্বাচনের প্রক্রিয়াকে এ ধরনের ঘটনা বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না।’