ছাত্রলীগের সভাপতি হতে ‘ভুয়া’ এনআইডি!

নিজস্ব প্রতিবেদক |

ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি করা হয়েছে ছাত্রনেতা মো. ইব্রাহিমকে। গত ৩১ জুলাই তাঁকে সভাপতি করে এ কমিটি ঘোষণা করা হয়। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ছাত্রলীগের এই নেতা মহানগর উত্তরের সভাপতি পদে প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে যে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দিয়েছেন, তা ভুয়া। মূলত নিজের বয়স ২৮ বছরের মধ্যে রাখতে গিয়ে তিনি নিজের প্রকৃত এনআইডি জমা না দিয়ে ‘ভুয়া’ পরিচয়পত্র জমা দিয়েছিলেন।

সংগঠনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এবার কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কমিটিতে পদ পাওয়ার জন্য বয়সসীমা ছিল ২৭ বছর। পরে দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলনের দিন ছাত্রলীগের নেতা নির্বাচনের বয়স ১ বছর বাড়িয়ে ২৮ বছর করে দেন। কিন্তু ইব্রাহিমের প্রকৃত জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী সম্মেলনের দিন পর্যন্ত তাঁর বয়স ২৯ বছর পেরিয়ে যায়। এ কারণে বয়স ২৮ বছরের মধ্যে রাখতে ভুয়া এনআইডি জমা দেন ইব্রাহিম।

গত ১১-১২ মে ছাত্রলীগের ২৯তম সম্মেলন হয়। এর প্রায় তিন মাস পর কেন্দ্রীয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হয় গত ৩১ জুলাই। বয়সের বিষয়টি এবার কিছুটা শিথিল রাখা হয়েছিল। বয়সের কারণেই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর মনোনয়নপত্র বাতিল করেছিল ছাত্রলীগের নির্বাচন কমিশন। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের বয়স ২৮ বছর ৮ মাস এবং সভাপতির বয়স ২৮ বছর ৭ মাস হওয়ার কারণে তাঁদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছিল।

মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি মো. ইব্রাহিম ছাত্রলীগের নেতা হতে যে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন, সেখানে তাঁর ফরমের ক্রমিক নম্বর ২২। ফরমে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তাঁর নাম মো. ইব্রাহিম। বাবার নাম মো. ইউনুস আলী। মায়ের নাম মেহেরুন নেছা। ইব্রাহিমের জন্মতারিখ দেওয়া ২৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৯০। মনোনয়নপত্রে তিনি তাঁর নাম ঠিক রেখে বাবা ও মায়ের নামও ভুল দিয়েছেন। যে জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বরটি মনোনয়নপত্রে দেওয়া হয়েছে, সেটির কোনো অস্তিত্বই নেই। মনোনয়নপত্রে দেওয়া ব্যক্তিগত পরিচয়ের পুরো বিষয়টি ছিল জালিয়াতি।

প্রকৃতপক্ষে মো. ইব্রাহিমের বাবার নাম মো. আদম আলী পাত্তর। মায়ের নাম শাহানারা আক্তার। তাঁর জন্ম ১ জানুয়ারি ১৯৮৯। এই জন্মতারিখ অনুযায়ী তাঁর বয়স ২৯ বছরের বেশি। এ বিষয়টি গোপন রাখতে তিনি মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছেন।

ছাত্রলীগের মনোনয়নপত্রে ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র জমা দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি মো. ইব্রাহিম। মনোনয়নপত্রে ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র কেন জমা দিলেন—এ প্রশ্নের জবাব দেননি মো. ইব্রাহিম। তিনি বলেন, ‘সবকিছুই তো জানেন। বাদ দেন না বিষয়টা। একটা ভুল হয়ে গেছে।’ এখন এ নিয়ে কথা ওঠার কারণ বলতে গিয়ে ইব্রাহিম কাছে দাবি করেন, দীর্ঘদিন থেকে রাজনীতি করেন। বড় পদ পাওয়ার পর অনেকে তাঁর ‘পেছনে’ লেগেছেন। এ কারণে অনেকে তাঁকে ‘বিব্রত’ করার চেষ্টা করছেন।

মো. ইব্রাহিম তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতার বিবরণে উল্লেখ করেন, তিনি নয়াখালী মাটিডাঙ্গা আলিম মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাস করেছেন ২০০৪ সালে। ২০০৬ সালে মঠবাড়িয়া সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে ২০১০ সালে তিনি মিরপুর কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। পরে মিরপুর কলেজ থেকেই তিনি ২০১১ সালে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। বর্তমানে তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে পড়ালেখা করছেন বলেও উল্লেখ করেছেন।

ছাত্রলীগের ২৯তম সম্মেলনে ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছিলেন নুসরাত জাহান। তিনি বলেন, ‘অভিযোগটি সম্পূর্ণ অমূলক। আমরা যখন যাচাই-বাছাই করেছি, তখন এ ধরনের কোনো বিষয় সামনে আসেনি। এলে তা বাতিল করে দিতাম। অনিয়মের অভিযোগ পেয়ে আমরা সাত-আটটি ফরম বাতিল করে দিয়েছিলাম।’ নেতা নির্বাচিত হওয়ার পরে অনেকে ‘পেছনে’ লাগেন, তারই অংশ হিসেবে মো. ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে এই ‘অভিযোগ’ বলে তিনি দাবি করেন।

নাম প্রকাশ না করে নির্বাচন কমিশনের অপর এক সদস্য বলেন, ইব্রাহিমের জাতীয় পরিচয়পত্র যে ভুয়া, সেটি আমরা বুঝেছিলাম। কেননা তাঁর যে বয়স নেই, সেটা আগেই আমাদের জানা ছিল। তিনি এ-ও বলেন, ইব্রাহিমের জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে কমিশন কোনো প্রশ্ন তোলেনি, তাঁর ফরমও বাতিল করেনি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ - dainik shiksha স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে - dainik shiksha শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0030090808868408