ছাত্রীকে বিয়ে করতে স্কুল সভাপতি যা করছেন

নাটোর প্রতিনিধি |

বয়স তার মাত্র চব্বিশ বছর। স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি তিনি। এর আগেও এক মেয়াদে একই পদে ছিলেন। সাথে ছাতনী ইউপি যুবলীগের সদস্য। কম বয়সের এই সভাপতি এখন নাটোরে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। তাকে নিয়ে আলোচনার জল গড়িয়েছে জেলা প্রশাসন পর্যন্ত। এক ছাত্রীকে কেন্দ্র করে তার সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড যারপরনাই বিব্রত করছে সকলকে। 

নাটোর সদর উপজেলার তেলকুপি মদনহাটস্থ তেলকুপি উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি জালাল মন্ডল ওই প্রতিষ্ঠানের দশম শ্রেণির মানবিক বিভাগের এক ছাত্রীকে বিয়ে করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন। এমনকি ওই ছাত্রীর পড়াশোনার জন্য বিদ্যালয়টির সহকারী প্রধান শিক্ষক থেকে সহকারী শিক্ষকদের জোরপূর্ব ছাত্রীটির বাড়ি গিয়ে প্রাইভেট পড়াতে বাধ্য করেন। 

স্কুলের শিক্ষক আব্দুস সালাম, ইসরাইল হোসেন, আমিনুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষককে আইসিটি শিক্ষক আফরোজা খাতুনের মাধ্যমে ওই ছাত্রীর বাড়িতে যেতে বাধ্য করা হয়। এর আগে ওই ছাত্রীর জন্য জালাল বিদ্যালয়ের স্টাফরুম একটি জীর্ণ কক্ষে স্থানান্তর করেন ক্ষমতার জোরে। প্রতিবাদ করলে প্রধান শিক্ষক কামাল সরকারকে জুতা তুলে মারতে উদ্যত হন। এছাড়াও রেজুলেশন ছাড়া চেক কেটে টাকা উত্তোলন এবং হিসাবের ভাউচার দাখিল না করার মতোও গুরুতর অভিযোগ উঠেছে সভাপতি জালালের বিরুদ্ধে।

মঙ্গলবার সকালে ওই স্কুলে জেলা শিক্ষা অফিসার রমজান আলী আকন্দের উপস্থিতিতে উপর্যুপরি অভিযোগ করতে থাকেন স্কুলটির শিক্ষক, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসী। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত চলতে থাকে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ। 

শুরুতে প্রধান শিক্ষক কামাল সরকার সভাপতি জালালের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো পড়ে শোনান সকলের উদ্দেশ্যে। তিনি জানান, জালাল স্থানীয় যুবলীগ নেতা হওয়ায় গায়ের জোরে যা ইচ্ছা তাই করে চলেছেন। স্কুল চলাকালীন লুঙ্গি পড়ে ক্লাসে ঢুকে পড়েন সভাপতি জালাল। এতে ছাত্রীরা বিব্রত হয়। ক্লাস চলাকালীন সময় তিনি শিক্ষকদের মনগড়া বিভিন্ন পরামর্শ দেন এবং তার কথা না শুনলে রুঢ় ব্যবহার করেন। সম্প্রতি তার এসব কর্মকাণ্ডের জন্য স্কুলের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে বিক্ষোভ করেছে। এছাড়া অর্থ সংক্রান্ত বিভিন্ন লেনদেন নিয়ম বহির্ভূততভাবে বল প্রয়োগ করে করেছেন। গত নভেম্বর থেকে এমন অব্যবস্থাপনার জেরে চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় ১২ জন অকৃতকার্য হয়েছে। 

এসব ব্যাপারে অভিযুক্ত সভাপতি জালাল মন্ডল বলেন, তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অসত্য। তার সাথে ওই ছাত্রীর বিয়ে ঠিক হয়েছে। তার বয়স এখন ১৭ বছর। বয়স ১৮ হলে তাকে বিয়ে করা হবে। 

লুঙ্গি পড়ে ক্লাসে ঢোকার ব্যাপারে জালাল বলেন, 'বাইরের বখাটেরা স্কুলে ঢুকে মেয়েদের উত্যক্ত করে। আমি বাইরে লুঙ্গি পড়ে বসে এসব দেখি যখন তখনই লুঙ্গি পড়ে ঢুকে প্রতিবাদ করি।' 

উল্টো স্কুলের প্রধান শিক্ষক কামাল সরদারের বিরুদ্ধে স্কুলে উপস্থিত না থাকাসহ বিভিন্ন কাজে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ আনেন তিনি।

এদিকে ওই ছাত্রীর বাবা আব্দুর রউফও সভাপতি জালালের কথায় সহমত পোষণ করেন। তিনি উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে জানান, সভাপতি জালালের বাবা ও তিনি দীর্ঘদিনের বন্ধু। জালালের সাথে তার মেয়ের বিয়েতে তাদের সম্মতি রয়েছে। আইনি বাধ্যবাধকতায় বয়সজনিত কারণে ঠেকে আছে বিয়ে। 

স্কুলটির ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, জালাল একজন অশিক্ষিত ব্যক্তি। বয়স কম। কোন যোগ্যতায় তাকে সভাপতি করা হল, তাই প্রশ্নবিদ্ধ। 

ছাতনী ৭ নং ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি শাহ আলম বলেন, স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নির্বাচনের সময় অনেক যোগ্য লোক ছিল। অথচ রাজনৈতিক উদ্দ্যেশ্য চরিতার্থ করার জন্য জালালের মত একজনকে এরকম গুরুদায়িত্ব দেয়া হয়েছে। 

ছাতনী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি দুলাল সরকার ও ইউপি চেয়ারম্যান তোফাজ্জল সরকার সহমত পোষণ করেছেন।

এসব বিষয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রমজান আলী আকন্দ বলেন, মঙ্গলবারের মূলত বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে অবহিত হয়েছি আমরা। সভাপতির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগসমূহ রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডে পাঠানো হবে। আর্থিক অনিয়মগুলোর ব্যাপারে ব্যাংক বিবরণী পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত দেয়া হবে। 

অপরদিকে প্রধান শিক্ষকেরও যদি কাজে গাফিলতি থাকে, তবে বিধি মোতাবেক তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। সেই সাথে নির্ভয়ে ওই ছাত্রীকে স্কুলে পাঠাতে বলেছেন তিনি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
মাধবীলতা নয়, স্কুলের নাম কচুগাড়ি পুনর্বহালের দাবি - dainik shiksha মাধবীলতা নয়, স্কুলের নাম কচুগাড়ি পুনর্বহালের দাবি খুদে শিক্ষার্থীর হাতে অস্ত্র কেনো! - dainik shiksha খুদে শিক্ষার্থীর হাতে অস্ত্র কেনো! এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু আজ - dainik shiksha এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু আজ মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে - dainik shiksha মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা - dainik shiksha মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! - dainik shiksha মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0048069953918457