ছাত্রীকে যৌন হয়রানি, জনসমাগম করে সালিশ করলেন মেম্বার

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি |

রাত আটটা। সারাদেশের মানুষ করোনা সংক্রমণের আতঙ্কে দিনের আলোতেও অনেকটা সেচ্ছায় গৃহবন্দি, সেখানে রাতের আঁধারে দুই শতাধিক মানুষের ভীড় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আবদুস সোবাহানের বাসায়। কারণ ১০ বছর বয়সী এক মাদরাসাছাত্রীকে (১০)  যৌন হয়রানির অভিযোগে অভিযুক্ত দুই সন্তানের জনক কালাম বেপারীর (৩৫) অপকর্মের সালিশ।

রাত সাড়ে নয়টার পর সালিশে রায় হয়, অভিযুক্ত কালাম বেপারীকে দশ হাজার টাকা জরিমানা ও দশ ঘা বেত্রাঘাত। পটুয়াখালীর কলাপাড়ার মহিপুর থানার নজিবপুর গ্রামে বুধবার (৩১মার্চ) রাতের এ ঘটনায় এখন গোটা উপজেলায় তোলপাড় চলছে।

তবে এ সালিশের বিষয়টি জানেন না মহিপুর থানা পুলিশ। বৃহস্পতিবার সালিশের ভিডিও গোটা এলাকায়  ভাইরাল হলে দুপুরে কালাম বেপারীকে আটক করে পুলিশ। উদ্ধার করে ভিকটিম ছাত্রীকে।

জানা গেছে, গত সোমবার বিকালে নজিবপুর গ্রামের প্রতিবেশী কালাম বেপারীর বাসায় টেলিভিশন দেখতে যায় ওই ছাত্রী। এ সময় বাসায় স্ত্রীর অনুপস্থিতে জোরপূর্বক যৌন হয়রানি করে কালাম।

মাদরাসাছাত্রী ঘটনাটি তার বাবা-মাকে জানালে তারা ইউপি সদস্য আবদুস সোবাহানের কাছে নালিশ দেন। এ ঘটনার ফয়সালা দিতেই বুধবার রাতে তার বাড়ির বৈঠকখানায় এ সালিশের আয়োজন করা হয়।

সালিশে ইউপি সদস্য আবদুস সোবাহান, ফুল গাজী, তোতা সরদার, কাসেম ফকির, ব্যবসায়ী সুমন, শাহালম মাঝি ও কথিত সাংবাদিক সুমনসহ দুই শতাধিক নারী-পুরুষ উপস্থিত ছিলেন।

সালিশে কালামকে এ ঘটনায় দোষীসাব্যস্ত করে দশ হাজার টাকা জরিমানা ও দশ ঘা বেত্রাঘাত দেয়া হয়। কড়া নিরাপত্তায় সবার মোবাইল বন্ধ করতে বলে এ বেত্রাঘাত কার্যকর করা হয়। তবে, জরিমানার টাকা ওই ছাত্রীর পরিবারকে না দিয়ে টাকা বাটোয়ারা নিয়ে কথিত সাংবাদিক সুমন ও সালিশদারদের মধ্যে বিরোধ হয়।

তবে, ছাত্রীর মা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, তার মেয়েকে নির্যাতন করেছে। তিনি শাস্তি চান। সালিশের জরিমানা টাকা তিনি পাননি।

ইউপি সদস্য আবদুস সোবাহান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, স্থানীয়রা ৫০-৬০ জন লোক জড়ো করে তার বৈঠকখানায় যায়। কোনো সালিশ বৈঠক হয়নি। বৈঠকখানায় উপস্থিত শাহআলম মাঝি ওই মেয়ের কথা শুনেন। বুঝতে পেরেছেন, কালাম মেয়েটিকে ঘরের মধ্যে একটি ঠেলা (ধাক্কা) দিয়েছে। অন্য কিছু করেনি। তবে মেয়েটিকে ধাক্কা দেয়ায় উপস্থিত লোকজন কালামকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে। যা রোববার পরিশোধ করার কথা। এছাড়া কালামের বাবা কালামকে জুতা দিয়ে পাঁচটি পিটান (বারি) দিয়েছে। 

করোনা আতঙ্কের মধ্যে বাড়িতে লোক জমায়েত ও শিশু নির্যাতনের মতো একটি ঘটনা সালিশ করতে পারেন কি না জানতে চাইলে বলেন, মানুষ বাড়িতে আসলে কী করার আছে। 

এ ব্যাপারে মহিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে, কালামকে আটক করা হয়েছে। খোঁজ খবর নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিষয়টি যথাযথ তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0035288333892822