ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুলের এক ছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে তোলপাড় সৃষ্টি হবার পর স্কুলটির একজন শিক্ষক বলছেন, ভবিষ্যতের দিকে নজর রেখে তারা এখন ছাত্রীদের মানসিক পরামর্শ দেয়া বা কাউন্সেলিং দেবার উদ্যোগ নিচ্ছেন।
গত ২রা ডিসেম্বর রোববার ওই স্কুলে পরীক্ষা চলার সময় অরিত্রী অধিকারী নামে নবম শ্রেণীরএক ছাত্রীর কাছে মোবাইল ফোন পাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে নকল করার অভিযোগ ওঠে এবং পরদিন তার বাবা-মাকে ডেকে এনে তিরস্কার করে স্কুল কর্তৃপক্ষ। সেদিনই অরিত্রী শান্তিনগরে তাদের বাড়িতে ফিরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে বলে জানান তার অভিভাবকরা।
অরিত্রীর পরিবার এবং বন্ধুদের অভিযোগ, তাকে স্কুল কর্তৃপক্ষের হাতে যে হেনস্তা এবং অপমানের শিকার হতে হয়, তার কারণেই তিনি আত্মহত্যা করেন। এর ঘটনার প্রতিবাদে অভিভাবকরা বিক্ষোভ করেছেন এবং অভিযোগ করেছেন যে এর আগেও অভিভাবকদের সঙ্গে স্কুল কর্তৃপক্ষের দুর্ব্যবহারের ঘটনা ঘটেছে।
গভর্নিং বডির শিক্ষক প্রতিনিধি মুশতারি সুলতানা স্বীকার করেন যে, এ ঘটনায় স্কুল কর্তৃপক্ষ একটা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছে।
তিনি বলেন, এর পর তারা স্কুলের ছাত্রীদের মানসিক সহায়তা দেবার জন্য কাউন্সেলিং করানোর উদ্যোগ নিয়েছেন।
মুশতারি সুলতানা বলেন, তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষকদের সাথে যোগাযোগ করেছেন যারা খুব শিগগিরই এ ঘটনাজনিত মানসিক আঘাত কাটিয়ে ওঠার জন্য স্কুলের মেয়েদেরকে মানসিক সহায়তা দেবেন।
শুধু তাই নয় - মিজ সুলতানা বলেন, এ ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে তারা স্কুলে একজন স্থায়ী মানসিক পরামর্শক নিয়োগ দেবার উদ্যোগও নিয়েছেন - যিনি কোন ছাত্রীর মধ্যে কোন মানসিক বিপর্যয়ের লক্ষণ দেখতে পেলে তাকে কাউন্সেলিং করবেন।
কিভাবে নিজের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, আত্মহত্যার মতো পথে যেতে কেউ যেন প্ররোচিত না হয় - এ ধরণের মনোবৈজ্ঞানিক পরামর্শ ছাত্রীদের দেয়া হবে বলে আভাস দেন তিনি।
অরিত্রীর বাবা দিলীপ অধিকারী তার মেয়েকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ এনে থানায় একটি মামলা করলে ভিকারুননিসা স্কুলের শিক্ষক হাসনা হেনাকে গ্রেফতার করে পুলিশ - তবে রোববার তিনি জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।
এ ঘটনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও স্কুল কর্তৃপক্ষ উভয়েই অন্যদিকে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
সরকারের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব রোববার বলেছেন, ভিকারুননিসা স্কুলের শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকরা যেসব অভিযোগ করেছেন - সেগুলোর ব্যাপারে তদন্তের পর বিভিন্ন ধরণের পদক্ষেপ নেয়া হবে।
এঘটনার প্রতিবাদে যে অভিভাবকরা বিক্ষোভ করেছেন তাদের অনেকের মতে, স্কুলের শিক্ষকদের শিশু মনস্তত্ত্ব বিষয়ে বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণ দেয়া উচিত ।
কয়েকজন অভিভাবক বলেন, কিশোর-কিশোরীরা অনেক সময় অতিরিক্ত অনুভূতিশীল এবং সংবেদনশীল হয়, এবং অনেক সময় সামান্য ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে; তাই তাদের জন্য মনস্তাত্ত্বিক সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা সব স্কুলেই থাকা প্রয়োজন।
তারা বলেন, অনেক উন্নত দেশেই স্কুল-কলেজের কিশোর শিক্ষার্থীদের মনস্তাত্ত্বিক সহায়তার জন্য কাউন্সেলিং বা বিশেষজ্ঞ মনস্তত্ত্ববিদের সাথে আলোচনার সুযোগ থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের প্রায় কোনো স্কুলেই এ ধরণের ব্যবস্থা নেই।
সৌজন্যে: বিবিসি