ছাত্রীসহ তিনজনকে মল খাওয়ানোর ঘটনায় মামলা

শরীয়তপুর প্রতিনিধি |

এক কলেজছাত্রী, তাঁর বাবা ও দাদিকে মানুষের মল খাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার। গতকাল রোববার রাতে ওই ছাত্রীর বাবা নয় ব্যক্তিকে আসামি করে জাজিরা থানায় মামলা করেছেন। পুলিশ এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ, জমিজমা নিয়ে বিরোধের জেরে স্থানীয় জলিল সিকদার ও আয়নাল হকের নেতৃত্বে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। ওই কলেজছাত্রী বলছিলেন, ‘পরিবারের তিনজনকে মল খাওয়ানো হলো, এ কেমন শত্রুতা?’

ওই তিনজন জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেন। জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান আজ সোমবার বলেন, ‘আমার চিকিৎসকজীবনের ১৫ বছর হয়েছে। এমন অমানবিক আচরণ কোনো মানুষ অন্য মানুষের সঙ্গে করতে পারে, দেখিনি। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ১০ জন চিকিৎসক জরুরি বিভাগে এই তিনজনকে চিকিৎসা দিয়েছেন। তাঁরা কিছুটা সুস্থ বোধ করায় গতকাল সন্ধ্যায় স্বজনেরা তাঁদের বাড়ি নিয়ে যান। তবে তাঁরা মারাত্মক মানসিক ট্রমার মধ্যে আছেন।’

জাজিরা থানার পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, জাজিরার ভুক্তভোগী ব্যক্তি পেশায় ভ্যানচালক। তাঁর সঙ্গে জমিজমা নিয়ে স্থানীয় জলিল সিকদারের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। জলিল হঠাৎ গ্রামে প্রচার করতে থাকেন যে ওই ভ্যানচালক কালো জাদু করে মানুষের ক্ষতি করছেন। তাঁকে ঠিক করতে মল খাওয়াতে হবে। শনিবার সকাল ছয়টার দিকে জলিল সিকদার ও আয়নাল হকের নেতৃত্বে ৮ থেকে ১০ জন ওই ভ্যানচালকের বাড়িতে যান। তাঁকে ঘর থেকে বের করে এনে মল খাইয়ে দেন। এরপর তাঁর স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়েকেও মল খাইয়ে দেওয়া হয়। বাধা দিতে এলে ওই ব্যক্তির মাকেও মল খাইয়ে দেওয়া হয়। এ সময় তাদের মারধর করা হয়। পরে পরিবারের সদস্যরা ওই তিনজনকে উদ্ধার করে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।

জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গত শনিবার ওই কলেজছাত্রী বলছিলেন, ‘এমন অমানবিক আচরণ কোনো মানুষ কীভাবে করতে পারেন? জলিল ও আয়নাল আমার বাবাকে হাত–পা ধরে রেখে মল খাইয়ে দেন। আমি এগিয়ে গেলে আমার সঙ্গেও একই আচরণ করেন। আমি বাঁচার জন্য তাদের পা ধরেছি। কোনো লাভ হয়নি। এরপর আমি অচেতন হয়ে পড়ি।’

ওই ভ্যানচালক বলেন, ‘এমন শত্রুতা মানুষ মানুষের সঙ্গে করে? আমার সঙ্গে বিরোধ ছিল, আমাকে মারধর করত, কোপাত। তাই বলে এমন অমানবিক আচরণ করবে?’ তিনি বলেন, জলিল, আয়নালসহ নয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। তিনি তাঁদের কঠোর শাস্তি দাবি করেন।

আসামি জলিল শিকদার দাবি করেন, ‘এলাকার আনোয়ার আকনের শ্যালককে কালো জাদু করে মেরে ফেলেছেন ওই ভ্যানচালক। আনোয়ার আমাদের এ কাজ করতে বলেছেন।’ আর আয়নাল হক বলেন, ‘আমার সঙ্গে ওই ব্যক্তির কোনো বিরোধ নেই। গ্রামবাসীর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাকে মল খাওয়ানো হয়েছে।’

জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আজহারুল ইসলাম খবরের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘অমানবিক ঘটনাটি শোনার পরপরই পুলিশ তৎপর হয়। তাৎক্ষণিক এলাকায় পুলিশ পাঠানো হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0030770301818848