সরকারি স্কুল-কলেজে কর্মচারী নিয়োগছয় বছর পর আইন মন্ত্রণালয়ে ধরনা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

সরকারি স্কুল-কলেজের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী পদে নিয়োগ দিতে ২০১৩ সালের ৭ মার্চ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তর। ছয় বছরে এরই মধ্যে পাল্টেছে চারজন মহাপরিচালক (ডিজি)। অধিদপ্তর এখনো সেই নিয়োগপ্রক্রিয়া শেষ করতেই পারেনি। অবশেষে ছয় বছর পর এ ব্যাপারে আইন মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন শরীফুল আলম সুমন। 

মাউশি অধিদপ্তর সূত্র জানায়, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি মাউশি মহাপরিচালক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে এসংক্রান্ত একটি চিঠি দেন। সেখানে বলা হয়, চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিকে কেন্দ্র করে নো ওয়ার্ক নো পের ভিত্তিতে স্কুল-কলেজে কর্মরত কর্মচারীদের ৪৮টি রিট মামলা বিচারাধীন, যাতে রিট পিটিশনার দুই হাজার ২০২ জন। একটি মামলার রায়ে সুপ্রিম কোর্ট উভয় পক্ষকে আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত স্থিতাবস্থা বহাল রাখার আদেশ দিয়েছেন। অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে দ্রুত মামলার শুনানির ব্যবস্থা করতে অ্যাটর্নি জেনারেলকে অনুরোধ করা হয়েছে। এই ৯৮৭টি পদ ছাড়াও আরো দুই হাজার ২০১টি পদ শূন্য আছে।

এই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৮ মার্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ফাতেমা তুল জান্নাত আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চেয়েছেন। সেখানে বলা হয়েছে, রিট পিটিশনারের সংখ্যা যেহেতু দুই হাজার ২০২ জন, আর যেহেতু ৯৮৭টি পদ বাদেও দুই হাজার ২০১টি পদ শূন্য রয়েছে, তাই ৯৮৭ পদে নিয়োগসহ অন্য পদেও নিয়োগের কার্যক্রম শুরু করা যাবে কি না সে বিষয়ে মতামত চেয়েছেন।

সূত্র জানায়, অনেক আগেই বিষয়টি নিয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু মাউশির আইন বিভাগের কিছু কর্মকর্তা এই নিয়োগ ঝুলিয়ে রাখতে চাচ্ছেন। বেশ আগে থেকেই ব্যাপারটি সমাধানে তাঁরা গড়িমসি করছেন। তাঁরা এরই মধ্যে নো ওয়ার্ক নো পের কর্মচারীদের কাছ থেকে সুবিধা নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

জানা যায়, ২০১৩ সালে এক হাজার ৯৬৫ কর্মচারী নিয়োগের জন্য ওই বছরই লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়। ওই পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। প্রত্যেক প্রার্থীর কাছ থেকে চার থেকে সাত লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি সে সময় মুখে মুখে ছিল। মাউশি অধিদপ্তরের একটি সিন্ডিকেট এ টাকা সংগ্রহ করে। কিন্তু সব অভিযোগ অস্বীকার করে সে সময়ই ফল প্রকাশের তোড়জোড় শুরু হয়, কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় এতে আপত্তি জানায়। বাতিল করা হয় ওই পরীক্ষা। পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাউশি অধিদপ্তর এই নিয়োগ নিয়ে একাধিক চিঠি চালাচালি করে। তখন নতুন করে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে কি না তা নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। এভাবে পার হয়ে যায় চার বছর। এরপর ২০১৭ সালে নতুন করে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সেই পরীক্ষার মাধ্যমে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগের ফল প্রকাশ করা হয়, কিন্তু দেড় বছর পার হলেও চতুর্থ শ্রেণির ৯৮৭ কর্মচারী নিয়োগের ফল দিতে পারেনি মাউশি অধিদপ্তর।

জানা যায়, নিয়োগপ্রক্রিয়ার মধ্যে থাকা ৯৮৭ পদ বাদেই গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দুই হাজার ২০১ পদ ফাঁকা রয়েছে। এই দুই মাসে আরো পদ শূন্য হয়েছে। ফলে যেসব প্রার্থী রিট করেছেন তাঁদের জন্য সমপরিমাণ পদ ফাঁকা রেখে বাকি পদগুলোর ফল প্রকাশে আইনি কোনো বাধা থাকবে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

মাউশি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ গোলাম ফারুক বলেন, ‘ব্যাপারটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছি। তারা আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চেয়েছে, যা এখনো পাওয়া যায়নি। যেহেতু এই নিয়োগে আদালতের স্থগিতাদেশ আছে, তাই আইন মন্ত্রণালয় যেভাবে মত দেবে সেভাবেই আমরা ব্যবস্থা নেব।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0027589797973633