ছয় মাসের বকেয়া বেতনের দাবি দারুল আরকাম মাদরাসার শিক্ষকদের

পাবনা প্রতিনিধি |

গত ছয় মাস বেতন পাচ্ছেন না দারুল আরকাম মাদরাসা শিক্ষকরা। গত ডিসেম্বরে ইসলামি ফাউন্ডেশনের আওতায় কার্যক্রমের প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় তাদের বেতন-ভাতা বন্ধ হয়ে যায়। ছয় মাস বেতন বকেয়া থাকায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। ছয় মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে প্রধানমন্ত্রী বরাবরা স্মারকলিপি দিয়েছেন দারুল আরকাম মাদরাসার শিক্ষক কল্যাণ সমিতির নেতারা। সোমবার (৭ জুলাই) বেলা ১২টায় পাবনা জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদের কাছে স্মারকলিপি হস্তান্তর করেন সংগঠনের জেলা কমিটির নেতারা।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, ২ হাজার ২০ জন শিক্ষককে এই প্রকল্পে চাকরিতে নিয়োগ দেয়া হয়, আরও ৩ হাজার ৩০ জন শিক্ষকের নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ মাসে দারুল আরকাম মাদরাসার শিক্ষকরা নিয়োগ লাভ করে প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু করে। এ প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর পর্যন্ত কার্যকর ছিল। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত বেতন না পাওয়ায় ‘দারুল আরকাম মাদরাসা’র শিক্ষকরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। পাশাপাশি পারিবারিক চাহিদা পূরণ করতে না পেরে নীরবে নিভৃতে চোখের পানি ফেলছেন। শিক্ষকদের এই দুর্দশা দেখার কেউ নেই।

শিক্ষক নেতারা দৈনিক শিক্ষা ডটকমকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ ডিসেম্বর একনেক সভায় মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম (৬ষ্ঠ পর্যায়) প্রকল্পে অনুমোদনকালে নির্দেশনা প্রদান করেন। প্রাথমিক শিক্ষা চালুর পরবর্তী সময়ে ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের ৮ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের শিক্ষা কারিকুলামে প্রতিটি শিশুর জন্য ধর্মীয় শিক্ষার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ বলেও মন্তব্য করেন।

পরবর্তী সময়ে ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বরে চূড়ান্তভাবে দারুল আরকাম মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। এসব প্রতিষ্ঠানে নিজেস্ব সিলেবাস দ্বারা ৩য় শ্রেণি পর্যন্ত কার্যক্রম শুরু হলেও ক্রমান্বয়ে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে এসে তা পঞ্চম শ্রেণিতে উন্নীত করা হয়। মউশিক প্রকল্পে অধীনে শুরু থেকে থাকলেও বর্তমানে সেটাকে আলাদা করা হয়েছে। এবছর প্রকল্পটি মউশিক প্রকল্পের সাথে জমা করা হলেও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয় দারুল আরকামকে আলাদা করার প্রস্তাব দেন। দুটি প্রকল্প আলাদা হলেও মউশিক প্রকল্পটি চলতি বছরের ১১ মে তারিখ পাস হলেও প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত দারুল আরকাম মাদরাসা প্রকল্পটি অনুমোদন পায়নি।এতে করে বেকায়দায় পড়েছে এ প্রকল্পের আওতাধীন ২ হাজার ২০ শিক্ষক। এখানে ১ হাজার ১০ জন কওমি মাদরাসা শিক্ষায় শিক্ষিত এবং বাকি  হাজার ১০ জন আলিয়া মাদরাসা শিক্ষায় শিক্ষিত। কওমি মাদরাসার দাওরা হাদিস সনদকে স্বীকৃতির পর এটি এই প্রথম কওমি আলেমদের সরকারি চাকরিতে অন্তর্ভুক্ত করা। প্রথমদিকে বিষয়টি আনন্দের সাথে সবাই গ্রহণ করলেও বর্তমানে চতুর্দিকে এটি নিয়ে হতাশা সৃষ্টি হয়েছে, পাশাপাশি ১ হাজার ১০টি প্রতিষ্ঠানের লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন অনিশ্চিয়তায় পড়ছে। অন্ধকারে হাজারো শিশুরা।

দারুল আরাকাম শিক্ষক কল্যাণ সমিতি (দাশিকস) কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পাবনা জেলা শাখার সভাপতি মো. আশরাফুল ইসলাম খোকন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন,  দারুল আরকাম মাদরাসাটি প্রধানমন্ত্রী নিজে প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং বাংলাদেশের সকল মাদরাসার সাইনবোর্ডেও প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম দেয়া হয়েছে। অতএব, আমার মনে হয় প্রকল্পটি আলাদা হয়েছে সেটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জানেন না। জানলে তিনি আমাদের বিষয়টি বিশেষভাবে বিবেচনা করে পাস করে দিতেন বলে আমি মনে করি। তাহলে আমাদের এই কঠিন পরিস্থিতির স্বীকার হতে হতো না।

তিনি আরও বলেন, ৬ মাসের বেতন না পেয়ে আমরা অনেক কষ্টে স্বজনদের নিয়ে জীবনযাপন করছি। আমি আশা করছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেহেতু নিজে প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করেছেন, সুতরাং আমাদের মানবেতর জীবনযাপনের বিষয়টি তিনি বিশেষভাবে
বিবেচনায় নিয়ে প্রকল্পটি পাস করবেন।

দারুল আরাকাম শিক্ষক কল্যাণ সমিতি পাবনা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. রজব আলী দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, দারুল আরকাম মাদরাসাটি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে তৈরি হয়েছে। তাই বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী নিজেই দেখবেন বলে মনে প্রাণে বিশ্বাস করি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.003187894821167