বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো হল নেই। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা শিক্ষার্থীদের নিজ উদ্যোগে থাকার ব্যবস্থা করে নিতে হয়। উপাচার্য বা অন্য শিক্ষকদের জন্যও নেই কোনো আবাসন ব্যবস্থা। প্রতিনিয়ত আরো নানামুখী সংকট মোকাবেলা করতে হয় বিশ্ববিদ্যালয়টিকে। এত সীমাবদ্ধতা নিয়েও ধীরে ধীরে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। ২০০৫ সালে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু করা এ বিশ্ববিদ্যালয়টি আগামীকাল রোববার ১৪ বছরে পদার্পণ করবে।
জানা যায়, বুড়িগঙ্গা নদীর তীরবর্তী এ বিশ্ববিদ্যালয় একসময় ছিল ব্রাহ্মদের স্কুল। শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে ১৮৫৮ সালে এর যাত্রা শুরু হয়। ১৮৭২ সালে এর নাম বদলে রাখা হয় জগন্নাথ স্কুল। পরে তা কলেজে উন্নীত হয়। কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে পরিবর্তিত হয় ১৯৪৯ সালে। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হলে জগন্নাথ কলেজের স্নাতক কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী বই-পুস্তক জার্নাল এমনকি বেঞ্চ-চেয়ার-টেবিলও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানান্তর করা হয়।
যার স্বীকৃতিস্বরূপ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জগন্নাথ হল নামে একটি হলও প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। সর্বশেষ এ প্রতিষ্ঠানটি ২০০৫ সালে জাতীয় সংসদে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৫ পাসের মাধ্যমে একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়। কিন্তু এত দিনেও শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো আবাসনব্যবস্থা নেই। এ দাবিতে দফায় দফায় আন্দোলনের পর ছাত্রীদের জন্য বেগম ফজিলাতুন্নেছা নামে একটি ছাত্রী হল নির্মাণাধীন রয়েছে।
আগামীকাল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ উপলক্ষে আগামীকাল নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, আগামীকাল সকাল ৯টা ১০ মিনিটে জাতীয় সংগীত পরিবেশন এবং জাতীয় পতাকা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের শুরু হবে। পরে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের উদ্বোধন করবেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান। সকাল সাড়ে ৯টায় উপাচার্যের নেতৃত্বে শোভাযাত্রা বের হবে। শোভাযাত্রাটি শহীদ মিনার চত্বর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে রায় সাহেব বাজার মোড় ও বাংলাবাজার ওভারব্রিজ ঘুরে ক্যাম্পাসের দ্বিতীয় গেটে এসে শেষ হবে।
এ ছাড়া সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের নিচতলায় চারুকলা বিভাগের উদ্যোগে ‘বার্ষিক চারুকলা প্রদর্শনী’, সকাল ১১টায় কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে আলোচনাসভা ও সাড়ে ১১টায় নাট্যকলা বিভাগের উদ্যোগে ‘লাল জমিন’ নাটক পরিবেশন করা হবে। এ ছাড়া দুপুর সাড়ে ১২টায় সামাজিক বিজ্ঞান ভবন চত্বরে সংগীত বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং ভাষাশহীদ রফিক ভবনের নিচতলায় দিনব্যাপী প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হবে।
দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী মো. সাঈদ মাহাদী সেকেন্দার বলেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে এক বিশেষ স্থান দখল করে নিয়েছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে শিক্ষার্থীদের যে অবকাঠামোগত ও পরিবেশগত এবং গবেষণার সুযোগ সেটি অধরা রয়ে গেছে।’
তবে দ্রুতই বিশ্ববিদ্যালয়ের এসব সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে জানিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, ‘২০১১ সাল পর্যন্ত কলেজ হিসেবে পরিচালিত হয়ে জগন্নাথ ধীরে ধীরে এটা বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়েছে। অতি সম্প্রতি আমরা এমফিল, পিএইচডি চালু করেছি।’