ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, এই রাষ্ট্রের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা বৈরী সম্পর্ক হয়েছে। কেবল রাষ্ট্র নয়, জনগণের সঙ্গেও রাষ্ট্রের একটা বৈরী সম্পর্ক তৈরি হয়েছে।
রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে শনিবার (১৯ অক্টোবর) সকালে এক স্মরণসভা অনুষ্ঠানে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এসব কথা বলেন।
মীজানূর রহমান শেলীকে স্মরণ করতে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে একাডেমিক প্রেস অ্যান্ড পাবলিশার্স লাইব্রেরি (এপিপিএল)। সহযোগিতায় ছিল ড. মীজানূর রহমান শেলী পরিষদ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘ব্রিটিশের রাষ্ট্র, পাকিস্তানের রাষ্ট্র এবং এখন বাংলাদেশের রাষ্ট্রের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা বৈরী সম্পর্ক হয়েছে এবং এই রাষ্ট্রকে চিনতে মীজানূর রহমান শেলীর কাজ সাহায্য করে। রাষ্ট্রকে তিনি জানার চেষ্টা করেছিলেন, যা আমাদের জানতে সাহায্য করে।’ তিনি আরও বলেন, এই রাষ্ট্রকে বদলাতে হবে। আর বদলানোর জন্য জ্ঞানের প্রয়োজন। উত্তেজিত হয়ে, আবেগ দিয়ে রাষ্ট্রকে ছোট করা হয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্রের চরিত্র বদলায়নি।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘আমরা এই উপলব্ধিতে পৌঁছেছি যে এই রাষ্ট্রকে বদলাতে হবে। এই বদলানো কথা দিয়ে, বক্তৃতা দিয়ে, উত্তেজনা প্রকাশ করে, হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে, আবেগ দিয়ে রাষ্ট্র ছোট হয়েছে। বড় রাষ্ট্র থেকে ছোট রাষ্ট্র হয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্রের যন্ত্রগুলো বদলায়নি। সে বদলানোর ক্ষেত্রে জ্ঞানের আড়ষ্টতা আছে। রাষ্ট্রের গোটা ব্যবস্থা ও বৈরী সম্পর্কের মধ্য দিয়ে আমাদের বড় হতো হচ্ছে।’
মীজানূর রহমানের সহপাঠী হিসেবে স্মৃতিচারণা করেন জাতীয় অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘১৯৫৩ সাল থেকে আমাদের বন্ধুত্ব। শেলীর বিভিন্ন বিষয়ের ওপর পড়াশোনা ছিল। সাহিত্য, সাধারণ জ্ঞান থেকে শুরু করে সে প্রচুর বই পড়ত স্কুলজীবন থেকেই। যেকোনো বিষয় নিয়ে প্রাসঙ্গিক ঘটনা বলে মজা করতে পারত।’
সভাপতির বক্তব্যে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক রহিম বক্স তালুকদার বলেন, ছাত্র হিসেবে শেলী যেমন কৃতী ছিলেন, তেমনি সরকারি কর্মকর্তা হিসেবেও তিনি কৃতিত্ব লাভ করেন। তাঁর কাছ থেকে এই রাষ্ট্রের যা যা নেওয়ার ছিল, তা রাষ্ট্র নিতে পারেনি।
অনুষ্ঠান থেকে বলা হয়, মীজানূর রহমান শেলী একাধারে পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা, সমাজবিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ ও রাজনীতি বিশ্লেষক। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। শিক্ষকতা ছেড়ে ১৯৬৭ সালে তিনি সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক রাজনীতির ওপর ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৮০ সালে সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরের পরিচালক থাকা অবস্থায় চাকরি থেকে অব্যাহতি নেন শেলী। তিনি তথ্য ও পানিসম্পদমন্ত্রী ছিলেন।
স্মরণসভা অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন লেখক জাকিউদ্দিন আহমেদ, সাবেক মন্ত্রী জাকারিয়া চৌধুরী, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী, সাবেক পররাষ্ট্রসচিব মহিউদ্দিন আহমদ প্রমুখ।