প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শিক্ষার্থীদের জন্য উপহার দেয়া একতলা দুটি বাস পরিত্যক্ত অবস্থায় গাছতলায় পড়ে নষ্ট হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। চীনা নরডিক ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের আওতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এ দুটি বাস কিনতে ব্যয় হয়েছে প্রায় এক কোটি টাকা। দুই বছর আগে ইঞ্জিনের সমস্যার কারণে ফেলে রাখা হয় বাস দুটি। তবে এখন বাস দুটিকে চলাচলের উপযোগী করতে হলে ইঞ্জিনসহ সিংহভাগ যন্ত্রাংশই পরিবর্তন করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন দপ্তরের দাবি, চীনা কোম্পানির বাস দুটির যন্ত্রাংশ দেশে সচরাচর পাওয়া যায় না বলেই মেরামতে এ দীর্ঘসূত্রতা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন দপ্তরের বর্তমান পরিচালকের দাবি, আগে যিনি পরিবহন পুলের পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন তিনি মেরামতের উদ্যোগ না নেয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে বাসের ইঞ্জিনের হাওয়া লোড নেয়ার সমস্যার কারণে ব্রেক ও গিয়ারে সমস্যা দেখা দেয়। ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে বাস দুটি বিআরটিসির ওয়ার্কশপে নিয়ে পরীক্ষা করলে বিআরটিসি কর্তৃপক্ষ প্রায় সাত লাখ টাকা বাসপ্রতি মেরামত মূল্য নির্ধারণ করে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ঐ সময় বাস মেরামত না করে যন্ত্রাংশ না পাওয়ার অজুহাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে এনে ফেলে রাখে। এ বছরের শুরুর দিকে বাস দুটি আবার মেরামত করার উদ্যোগ নেয়া হয়। বিআরটিসি, নিটল-টাটা, অশোক লেল্যান্ড কোম্পানিসহ কয়েকটি কোম্পানিকে বাস দুটি মেরামতের জন্য প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। গত মার্চে তারা বাস দুটি পর্যবেক্ষণ করে যায়। তাদের মধ্যে নিটল-টাটা কোম্পানি বাস দুটি মেরামত করতে অস্বীকৃতি জানায়। বিআরটিসি কর্তৃপক্ষ বাস দুটি মেরামত করতে প্রতিটি সাড়ে ১৩ লাখ টাকা এবং ব্যাটারি ও টায়ার বাবদ আরও প্রায় দুই লাখ টাকা বাজেট দেয়। আর অশোক লেল্যান্ড ১৬ লাখ টাকা করে বাস দুটি মেরামতের প্রস্তাব দেয়। যা গত দুই বছর আগে দেয়া মেরামত বাজেটের থেকে দ্বিগুণেরও বেশি।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ভবন সংলগ্ন প্রশাসনিক ভবনের পেছনে এবং কাঁঠালতলার বোটানিক্যাল গার্ডেনের পাশে বাস দুটি গত দু’বছর ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। নষ্ট ইঞ্জিনের অনেক যন্ত্রাংশ চুরিও হয়ে গেছে। বাসের দরজা, জানালা, বসার সিট ও টায়ার নষ্ট হয়ে গেছে। বাসের ভেতরে জন্ম নিয়েছে লতাপাতা-ঘাস। আর বাহিরের অংশের রং উঠে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন দপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী আজিজুর রহমান জানান, বিআরটিসি কর্তৃপক্ষসহ কয়েকটি কোম্পানিকে বাস দুটি মেরামতের জন্য প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। তাদের মধ্য থেকে একটি কোম্পানিকে বাস মেরামতের কাজ দেয়া হবে।
মেরামতে দীর্ঘসূত্রতার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবহন দপ্তরের পরিচালক আবদুল্লাহ আল মাসুদ বলেন, ‘আমি দেড় বছর আগে দায়িত্ব নিয়েছি। তার অনেক আগে থেকেই বাস দুটি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। আগের প্রশাসক কেন এ উদ্যোগ নেয়নি তা জানি না। তখন মেরামত করলে হয়ত শুধু ইঞ্জিন পরিবর্তন করলেই হতো। মেরামত খরচ পাঁচ লাখ টাকার মধ্যেই হয়ে যেত। এখন বাস দুটি ঠিক করতে একটি বাসের ক্রয়মূল্যের সমান খরচ হচ্ছে।’