জাতি-ধর্মের ভেদাভেদহীন মানব সমাজের স্বপ্ন দেখেন তিনি। তথাকথিত ধর্ম ও জাতি বিষয়ে কোনওদিনই বিশ্বাস ছিল না তাঁর। জাতি-ধর্মের কচকচানি থেকে ঊর্ধ্বে ওঠে মানুষ হওয়ার শিক্ষা তিনি পেয়েছিলেন পরিবারের লোকজনের কাছ থেকেই। সেই মতো ২০১০ সালে নিজেকে ‘জাতি-ধর্মহীন’ ঘোষণা করার আবেদন করেছিলেন সরকারের কাছে। দীর্ঘ ন’বছর লড়াইয়ের পর নিজের দাবির প্রেক্ষিতে সরকারি স্বীকৃতি পেলেন তিনি।
তামিলনাড়ুর তিরুপাত্তুরের বাসিন্দা স্নেহা পার্থিবরাজা। বছর পঁয়ত্রিশের স্নেহা পেশায় আইনজীবী। সম্প্রতি তিরুপাত্তুরের তহশিলদার টি এস সাথিয়ামুর্তি স্নেহার হাতে তুলে দিলেন সরকারি শংসাপত্র। সেখানে লেখা, ‘তিনি কোনও জাতি বা ধর্মের অন্তর্গত নন।’ তিনিই ভারতবর্ষের প্রথম নাগরিক যিনি এই ধরনের কোনও শংসাপত্র পেলেন।
এই শংসাপত্র পাওয়ার পর এক সংবাদমাধ্যমকে স্নেহা বলেছেন, ‘‘জাতপাতে বিশ্বাসীরা যদি সরকার থেকে শংসাপত্র পেয়ে থাকেন, তাহলে আমরা যাঁরা জাতি ধর্মে বিশ্বাসী নই তাঁরা কেন পাব না?’’ তিনি আরও জানিয়েছেন, ২০১০ সালে করা তাঁর আবেদন খারিজ করে দেন সরকারি কর্তারা। কিন্তু তিনি ২০১৭ সালে ফের নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন সরকারি কর্তাদের কাছে। যেহেতু স্নেহা সামাজিক শ্রেণিভিত্তিক কোনও সরকারি সুযোগসুবিধা ভোগ করেন না, তাই তাঁর আবেদন গ্রহণ করতে বাধ্য হয় প্রশাসন।
স্নেহাকে শংসাপত্র দেওয়া নিয়ে তিরুপাত্তুরের সাব-কালেক্টর বি প্রিয়ঙ্কা পঙ্কজাম বলেছেন, ‘‘আমরা তাঁর স্কুল কলেজের সমস্ত নথি খতিয়ে দেখেছি। সেই সব নথিতে কাস্ট ও রিলিজিয়ন এই দু’টি কলাম সর্বত্র ফাঁকা ছিল। তাই আমরা তাঁর দাবিকে স্বীকৃতি দিয়েছি। যদিও এর জন্য অন্য নাগরিকদের কোনও সুযোগসুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে হবে না।’’
এই লড়াইয়ে স্নেহা পাশে পেয়েছেন তাঁর স্বামী তথা লেখক কে পার্থিবরাজাকে। নিজেদের এই পরম্পরা পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে নিজেদের তিন মেয়ের স্কুলের ফর্মে কোনও রকমের জাতি বা ধর্মের উল্লেখ করেন না তাঁরা।
নিজের এই বিশ্বাসকে সম্বল করেই ধর্ম-জাতির বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছেন স্নেহা।