জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করার নিয়ম

মো. রহমত উল্লাহ্ |

প্রতিবার ২১শে ফেব্রুয়ারি আমাদের শহিদ দিবসে ও ১৫ই আগস্ট আমাদের জাতীয় শোক দিবসে সরকারি, আধাসরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার সাংবিধানিক বিধান আছে। তদুপরি কোন বিশেষ কারণে কোন এক বা একাধিক দিনে সরকারিভাবে শোক পালনের সিদ্ধান্ত হলে সেদিন বা দিনসমূহেও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখতে হয়। এককথায় সরকারিভাবে ঘোষিত শোকদিবসে যেখানেই জাতীয় পতাকা উত্তলন করা হবে সেখানেই তা অর্ধনঅমিত রাখতে হবে। কিন্তু অনেকেই এই অর্ধনমিত করার নিয়মটি সঠিকভাবে জানেন না বিধায় মানতে পারেন না। সাধারণ ভাবে কেউ কেউ মনে করেন জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত মানে পতাকা ডন্ডের অর্ধেক/মাঝামাঝি পরিমান নিচে বেঁধে রাখা। আসলে তা ঠিক নয়। তাই এই বিধানটি সঠিকভাবে সবারই জানা থাকা একান্ত আবশ্যক।   

জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত মানে পতাকাদন্ডের অর্ধেক/মাঝামাঝি পরিমান নিচে নামানো নয়। বরং পতাকার প্রস্থের সমপরিমান নিচে নামানো। তা সে পতাকাদন্ডটি যতই লম্বা হোক বা খাটো হোক। পতাকাদন্ডের মাপের সাথে পতাকা অর্ধনমিত করার মাপের কোন সম্পর্ক নেই। অর্ধনমিত করার মাপ নির্ভর করবে পতাকার প্রস্থের মাপের উপর। অর্থাৎ , যদি পতাকাটির প্রস্থের মাপ ৬ ফুট হয় তো ৬ ফুট নিচে নামিয়ে বাঁধতে হবে। পতাকাটির প্রস্থের মাপ যদি ৩ ফুট হয় তো ৩ ফুট নিচে নামিয়ে রাখতে হবে  এবং পতাকাটির প্রস্থ যদি ১.৫ ফুট হয় তো ১.৫ ফুট নিচে নামিয়ে রাখতে হবে। পতাকাটি নির্ধারিত দড়িতে বেঁধে প্রথমে দণ্ডের চূড়া পর্যন্ত তুলে তারপর নিয়মানুসারে মাপমত নামাতে হবে।  

সকালে সূর্যোদয়ের পরমূহুর্তে জাতীয় পতাকাটি ধীরে ধীরে পূর্ণ উত্তলন করে ৩০ সেকেন্ড রেখে সেল্যুট দিতে হবে। স্যালুট শেষ হলেই ধীরে ধীরে মাপমত (পতাকাটির প্রস্থের সমপরিমান) নিচে নামিয়ে বাঁধতে হবে। এটিই জাতীয় পতাকার অর্ধনমিতকরণ। এই অর্ধনমিত অবস্থায় পতাকাটি রাখতে হবে সারাদিন। এরপর বিকালে সূর্যাস্তের আগমূহুর্তে পতাকাটি পুনরায় পূর্ণ উত্তলন করে ৩০ সেকেন্ড রেখে ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ নামিয়ে ফেলতে হবে। প্রয়োজনে পরদিন আবার একইভাবে এই কাজ করতে হবে। রাতে জাতীয় পতাকা উত্তলিত বা অর্ধনমিত রাখা যাবে না। জাতীয় শোকদিবসে জাতীয় পতাকা উত্তলনের সময় বা অর্ধনমিত করার সময় জাতীয় সংগীত পরিবেশিত হবে না।     

জাতীয় শোকদিবসে কালো পতাকা পূর্ণ উত্তলিত রাখতে হবে। জাতীয় পতাকা ও কালো পতাকা পাশাপাশি থাকলে কোনভাবেই  কালো পতাকা জাতীয় পতাকার উর্ধ্বে বা সমউচ্চতায় রাখা যাবে না। কালো পতাকা অবশ্যই জাতীয় পতাকার চেয়ে নিচে রাখতে হবে। সেজন্য কালো পতাকার দন্ডটি জাতীয় পতাকার দন্ডের চেয়ে ততটুকু খাটো রাখতে হবে যাতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত হলেও কালো পতাকা নিচে থাকে। দু'টি পতাকাদন্ড পাশাপাশি স্থাপিত হলে জাতীয় পতাকার দন্ডটি (উঁচু দন্ডটি) ডান পাশে রাখতে হবে। অর্থাৎ জাতীয় পতাকার দিকে মুখ করে দাঁড়ালে আমাদের ডানহাত যেদিকে থাকবে সেদিকে জাতীয় পতাকার দন্ডটি স্থাপিত করতে হবে। দুইয়ের অধিক পতাকাদন্ড পাশাপাশি স্থাপন করা হলে জাতীয় পতাকার উঁচু দন্ডটি মাঝে স্থাপন করতে হবে। সকল পতাকাদন্ড অবশ্যই সোজাভাবে দন্ডায়মান রাখতে হবে। কালো পতাকাটি জাতীয় পতাকার চেয়ে ছোট হতে হবে। পাশাপাশি উত্তলিত কোন পতাকাই জাতীয় পতাকার চেয়ে বড় রাখা যাবে না।                                                                        

আকার ভেদে ছোট-বড় বিভিন্ন ভবনে উত্তলনের জন্য জাতীয় পতাকার মাপ তিন রকম: (ক) দৈর্ঘ্য ১০ ফুট ও প্রস্থ ৬ ফুট। (খ) দৈর্ঘ্য ৫ ফুট ও প্রস্থ ৩ ফুট। (গ) দৈর্ঘ্য ২.৫ ফুট ও প্রস্থ ১.৫ ফুট। এবং শুধুমাত্র  অনুমোদিত মোটর গাড়িতে উত্তলনের জন্য জাতীয় পতাকার মাপ: (ক) দৈর্ঘ্য ১৫ ইঞ্চি ও প্রস্থ ৯ ইঞ্চি। (খ) দৈর্ঘ্য ১০ ইঞ্চি ও প্রস্থ ৬ ইঞ্চি। (গ) ৫ ইঞ্চি ও প্রস্থ ৩ ইঞ্চি। জাতীয় পতাকার জমিন হবে গাঢ় সবুজ, বৃত্ত হবে রক্ত লাল। সবুজ জনিনের মাঝের লাল বৃত্তটির ব্যাসার্ধ হবে পতাকার দৈর্ঘ্যের এক-পঞ্চমাংশ।       

লেখক : অধ্যক্ষ, কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা। 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0051782131195068