জাতীয় বাজেটে মাদরাসা শিক্ষা ও ধর্ম প্রসঙ্গ

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

গত ১৩ জুন বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট উত্থাপিত হয়। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অর্থমন্ত্রী অসুস্থ থাকায় তাঁর পক্ষে বাজেট বক্তৃতা পাঠ করেন তিনি। দীর্ঘ ১২৮ পৃষ্ঠার বাজেট বিবরণীতে আগামী অর্থবছরে রাষ্ট্রের সম্ভাব্য আয়-ব্যয়ের হিসাবের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন বিগত সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নচিত্র তুলে ধরা হয়েছে। প্রায় প্রতিটি খাতের বর্তমান চিত্র তুলে ধরে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সরকারের পরিকল্পনা ও প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়েছে। ২৬৫ ধারার বাজেট বক্তৃতার ৮১ ও ৮২ নম্বর ধারায় মাদরাসা শিক্ষা এবং ১৭৯ নম্বর ধারায় ধর্ম বিষয়ে বলা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৮ জুন) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। নিবন্ধটি লিখেছেন আতাউর রহমান খসরু । 

‘মাদরাসা শিক্ষা’ উপশিরোনামাধীন ৮১ ও ৮২ নম্বর ধারায় মাদরাসা শিক্ষা বিষয়ে বলা হয়েছে, সরকার মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়ন ও আধুনিকায়নে কাজ করে যাচ্ছে। সাধারণ শিক্ষার সঙ্গে মাদরাসা শিক্ষার যে বৈষম্য রয়েছে, তা দূর করতে দাখিল ও ইবতেদায়ি স্তরে বিনা মূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হচ্ছে। ১৮০০ মাদরাসার নতুন ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। মাদরাসাগুলোর অবকাঠামো উন্নয়ন এবং শ্রেণিকক্ষগুলোতে মাল্টিমিডিয়া স্থাপন করা হবে বলেও অঙ্গীকার করা হয়েছে। সরকারের এ উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য। তবে মাদরাসাগুলোর শিক্ষক ও আধুনিক শিক্ষা উপকরণের সংকট নিরসনে সরকারের আরো বেশি মনোযোগ আশা করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। অভিযোগ রয়েছে, স্কুল শিক্ষকদের তুলনায় মাদরাসা শিক্ষকরা বেতন স্কেলে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন, সে বিষয়ে কোনো বক্তব্য নেই।

উচ্চ আদালতের রায়ের পরও কেন বিষয়টি সমাধান হচ্ছে না এবং এ বিষয়ে সরকারের পরিকল্পনা কী, তা তুলে ধরা হয়নি, যা মাদরাসা শিক্ষকদের হতাশ করবে কোনো সন্দেহ নেই। অবশ্য বাজেটে কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষার জন্য বাজেট পাঁচ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে সাত হাজার ৪৫৪ কোটি টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে অতিরিক্ত বরাদ্দের কতটা মাদরাসা পাবে তা স্পষ্ট নয়। সুখের খবর হলো, আগামী অর্থবছরে যে সাত হাজার প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হবে বলে ঘোষণা এসেছে, তার মধ্যে বিভিন্ন স্তরের ৫৫১টি মাদরাসাও রয়েছে। এতে ১০ হাজার শিক্ষক এমপিওভুক্ত হবেন। এর বাইরে আরো ২০ হাজার মাদরাসা শিক্ষককে এমপিওভুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানাচ্ছে বিভিন্ন গণমাধ্যম। কওমি শিক্ষা সনদের স্বীকৃতি বিগত সরকারের একটি বহুল প্রশংসিত কাজ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সদিচ্ছায় আলেম-উলামাদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত স্বীকৃতি আইন জাতীয় সংসদে পাস হয়, যা ‘আল-হাইআতুল উলয়া লিল জামিআতিল কওমি বাংলাদেশ’-এর অধীন ‘কওমি মাদরাসাসমূহের দাওরায়ে হাদিসের (তাকমিল) সনদকে মাস্টার ডিগ্রির (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি) সমমান প্রদান আইন, ২০১৮’ নামে অভিহিত। কওমি শিক্ষা সনদের স্বীকৃতি প্রদানের উদ্দেশ্য সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বারবার বলেছেন, তিনি কওমি শিক্ষার্থীদের মূলধারায় একীভূত করতে চান। তাদের সামাজিক অবস্থানের অগ্রগতি চান। সমাজের এই বিপুলসংখ্যক মানুষকে পেছনে ফেলে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব নয় বলেও তিনি মন্তব্য করেন। সেই হিসেবে বর্তমান বাজেটে কওমি শিক্ষাধারার মূলধারায় সংযুক্ত করা এবং কওমি ধারার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জীবনমানের উন্নয়নে সরকারের পরিকল্পনা ও প্রস্তাবনা প্রত্যাশিত ছিল। তবে দুঃখজনক ব্যাপার হলো, এ ব্যাপারে চলতি বাজেটে কোনো আলোচনাই নেই।

১৭৯ নম্বর ধারায় হজযাত্রীদের বিড়ম্বনা কমাতে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরা হয়েছে। এটা সত্য, সরকারের প্রচেষ্টায় হজযাত্রীদের বিড়ম্বনা অনেকটাই কমেছে। আগামী দিনে ঢাকায় ইমিগ্রেশনের কাজ সম্পন্ন করা গেলে তা আরো কমে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত বাস্তবতা হলো, হজ ব্যবস্থাপনার নৈরাজ্য কাঙ্ক্ষিত স্তরে নামিয়ে আনা যায়নি। এ ক্ষেত্রে বাজেটে পরিকল্পনা তুলে ধরতে পারতেন অর্থমন্ত্রী। একই ধারায় ইসলামের শিক্ষা ও সংস্কৃতির বিকাশে বাংলাদেশের সব জেলা ও উপজেলায় ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপনের কাজ চলছে বলেও জানানো হয়েছে। সন্দেহ নেই, এসব মসজিদ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপিত হলে এবং তা যথাযথভাবে পরিচালিত হলে বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সূচনা হবে। তাই এ প্রকল্পের দ্রুত বাস্তবায়ন প্রয়োজন।

বিশালায়তন এই বাজেটে ধর্ম ও ধর্মীয় খাতের বাজেট যে খুবই অপ্রতুল, তা যে কেউ স্বীকার করবেন। বিশেষত ধর্মীয় খাতের উন্নয়নে সরকারের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার অনুপস্থিতি হতাশ করবে এ দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষকে। তারা মনে করে, ধর্মীয় খাতে বাজেটের পরিধি আরো বড় হতে পারত। ইসলামী শিক্ষার প্রচার, প্রসার, উন্নয়ন ও আধুনিকায়নে বর্তমান সরকারের অঙ্গীকার পূরণ তো আবশ্যকও। তারা আরো মনে করে, বাজেটে উল্লিখিত বিষয়গুলোর পাশাপাশি ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের কার্যক্রমের সম্প্রসারণ, মসজিদভিত্তিক গণশিক্ষা, মসজিদভিত্তিক পাঠাগার ও দারুল আরকাম মাদরাসা প্রকল্পের বর্তমান অবস্থা ও অগ্রগতি বিষয়ে আলোচনা হতে পারত। এ ছাড়া সারা দেশের মসজিদ-মন্দিরসহ ধর্মীয় উপসনালয়ের বিদ্যুৎ বিল মওফুক এ দেশে সাধারণ মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি। সে বিষয়েও ইতিবাচক ঘোষণা আসতে পারত এবারের বাজেটে।

লেখক : আলেম ও সাংবাদিক


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ - dainik shiksha প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ তীব্র তাপপ্রবাহের ভেতরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার - dainik shiksha তীব্র তাপপ্রবাহের ভেতরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার - dainik shiksha স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন - dainik shiksha নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0049149990081787