মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করিয়ে দিতে চুক্তি হতো ৫-১০ লাখ টাকার। পরীক্ষা চলাকালীন অত্যাধুনিক ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে সেসব চাকরিপ্রার্থীদের দিতেন সমাধান। এমন একটি চক্রের মূলহোতা সোহেল রানা ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসসহ ধরাও পড়েছিলেন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাতে। তবে জামিনে বেরিয়ে এসে ফের গড়ে তোলেন সক্রিয় প্রশ্নফাঁস চক্র।
শনিবার (৮ ডিসেম্বর) দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়েজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান উপকমিশনার (ডিসি) মাসুদুর রহমান।
তিনি বলেন, আটকরা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ পরীক্ষাসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে সেটি সমাধানের জন্য ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করতেন। এসব পরীক্ষায় চুক্তি অনুযায়ী অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থীদের উত্তীর্ণ করতেই চক্রের কয়েকজন সদস্য পরীক্ষার্থী সেজে হলে ঢুকতেন। সেখানে প্রশ্নপত্র হাতে পাওয়া মাত্র ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে ছবি তুলে বাইরে থাকা চক্রের অন্য সদস্যের কাছে পাঠিয়ে দিতেন। এতে বাইরে থাকা সদস্যরা দ্রুত প্রশ্নপত্র সমাধান করে ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে চুক্তি হওয়া পরীক্ষার্থীদের কাছে পাঠিয়ে দিতেন।
মাসুদুর রহমান বলেন, আটক সোহেল রানা এর আগেও ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন। পরে তিনি কারাগার থেকে জামিনে বেরিয়ে এসে আবারও এই কাজ শুরু করেন। সোহেলই এই চক্রের মূলহোতা। মাহমুদুর, আনসারুল ও দেবাশীষ তার সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন।
ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস নিয়ে পরীক্ষার হলে ঢুকতে আয়োজকদের কোনও সম্পৃক্ততা রয়েছে কি না জানতে চাইলে মাসুদুর রহমান বলেন, এখনও কারও সম্পৃক্ততার তথ্য আমরা পাইনি। তবে আসামিদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বিস্তারিত জানা যাবে।
শুক্রবার (৭ ডিসেম্বর) দিনগত রাতে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ডিবির সিরিয়াস ক্রাইম বিভাগ আবারও আটক করে চক্রের মূলহোতা সোহেল রানাকে। একইসময় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে সংশ্লিষ্ট আরও ৬ জনকে আটক করা হয়।
তারা হলেন- মাহমুদুল, আনসারুল ইসলাম, দেবাশীষ এবং পরীক্ষার্থী রবিউল আউয়াল, রাজিউর রহমান ও রেজাউল করিম।
এসময় তাদের কাছ থেকে ৮টি প্রশ্নপত্র পাঠানোর ডিভাইস, ২৯টি ব্যাটারি, ৩টি পেনড্রাইভ, ৯টি ব্লুটুথ ডিভাইস, ৯টি বিভিন্ন অপারেটরের সিমকার্ড ও ৮টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। চক্রটি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থী রবিউল, রেজাউল ও রাজিউলের সঙ্গে ৫-১০ লাখ টাকার চুক্তি করেছিল। চূড়ান্ত নিয়োগের পর এই টাকা পরিশোধ করবে বলেও প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায় আসামিরা।