জালিয়াতি ও কাগজপত্র টেম্পারিং করে এমপিওভুক্ত হওয়ায় দুই শিক্ষকের এমপিও বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর। এ দুই শিক্ষক হলেন নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার কেল্লাবাড়ী কারিগরি ও ব্যবস্থাপনা কলেজের হিসাবরক্ষণ বিষয়ের প্রভাষক এম এ রেজা এবং উদ্যোক্তা উন্নয়ন বিষয়ের প্রভাষক মো: রোকনুজ্জামান।
কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিবকে ২ শিক্ষকের এমপিও বাতিলের বিষয়টি জানিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয় সূত্র।
চিঠিতে বলা হয়, নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার কেল্লাবাড়ী কারিগরি ও ব্যবস্থাপনা কলেজের অধ্যক্ষ মো: মোস্তাফিজুর রহমান তথ্য গোপন করে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অনুমোদিত হিসাব রক্ষণ ও উদ্যোক্তা স্পেশালাইজেশন পত্রটি টেম্পারিং করে কলেজটির হিসাব রক্ষণ বিষয়ের প্রভাষক এম এ রেজা এবং উদ্যোক্তা উন্নয়ন বিষয়ের প্রভাষক মো: রোকনুজ্জামানকে এমপিওভুক্ত করিয়েছেন বলে অভিযোগ এসেছে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরে।
অভিযোগে বলা হয়, হিসাবরক্ষণ ও উদ্যোক্তা স্পেশালাইজেশন পত্রটি টেম্পারিং করে ২০১২ খ্রিস্টাব্দের ৪ জুন তারিখকে ২০১০ খ্রিস্টাব্দের ১৬জুন করা হয়েছে। এর ফলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ২০১১ খ্রিস্টাব্দের ১৩ নভেম্বর জারি করা প্রজ্ঞাপনের আওতায় এ দুই প্রভাষক এমপিওভুক্ত হয়েছেন।
২০১১ খ্রিস্টাব্দের ১৩ নভেম্বর প্রজ্ঞাপন জারির পর হিসাবরক্ষণ ও উদ্যোক্তা স্পেশালাইজেশন পদ দুটি কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অনুমোদন পাওয়ায় কেল্লাবাড়ী কারিগরি ও ব্যবস্থাপনা কলেজের হিসাব রক্ষণ (১ম ও ২য়) এবং উদ্যোক্তা উন্নয়ন বিষয়ে প্রভাষক পদে এমপিওভুক্তির সুযোগ নেই। কিন্তু কলেজটির প্রধান এ পদগুলোতে প্রভাষক নিয়োগ দিয়েছেন।
এছাড়া কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অনুমোদিত হিসাবরক্ষণ ও উদ্যোক্তা স্পেশালাইজেশন পত্রটি টেম্পারিং করে কলেজটির হিসাবরক্ষণ বিষয়ের প্রভাষক এম এ রেজা এবং উদ্যোক্তা উন্নয়ন বিষয়ের প্রভাষক মো: রোকনুজ্জামানকে এমপিওভুক্ত করিয়েছেন তিনি। এ অভিযোগে কলেজটির অধক্ষ্যেকে ‘কেন তার বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা জারি করা হবে না’ মর্মে শোকজ নোটিস পাঠানো হয়। কিন্তু শোকজ নোটিসের কোন জবাব দেননি কেল্লাবাড়ী কারিগরি ও ব্যবস্থাপনা কলেজের অধ্যক্ষ মো: মোস্তাফিজুর রহমান।
অনুমোদন পত্র টেম্পারিংয়ের অভিযোগ তদন্তে শুনানির জন্য প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু অধ্যক্ষ মো: মোস্তাফিজুর রহমান শুনানিতে উপস্থিত হননি।
এছাড়া কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের থেকে ‘শিক্ষকদের এমপিও কেন বাতিল হবেনা এবং অধ্যক্ষের এমপিও কেন বন্ধ হবেনা’ তার ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠান প্রধানের জবাব সন্তোষজনক নয় বলে জানিয়েছে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর।
এর প্রেক্ষিতে গত ১ জুলাই কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরে লিখিত জবাব দিয়েছেন অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমান। অধিদপ্তরে দাখিল করা লিখিত জবাবে তিনি জানান, জালিয়াতির বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। হিসাব রক্ষণ ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন স্পেসালাইজেশনের কপিটি তিনি সত্যায়িত করেননি। তেরো এগারোর পর নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সুযোগ নেই জেনেও আবেদন পাঠানোর বিষয়ে তিনি ভুল স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তিনি আরও উল্লেখ করেন স্থানীয় রাজনৈতিক লোকের চাপে যাচাই বাছাই না করে সত্যায়িত করেছেন। এমপিওভুক্ত হবার পরেও তিনি তাদের এমপিও কেন বন্ধ করলেন না প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বেতন ভাতা বন্ধের এখতিয়ার কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের।
শুনানি প্রতিবেদনে বলা হয়, অধ্যক্ষের জবাব সন্তোষজনক নয়। প্রাপ্যতা না থাকলেও জাল পত্র সত্যায়িত করে তিনি প্রভাষকদের অবেদন দপ্তরে প্রেরণ করে এমপিওভুক্ত করান। দুইজন শিক্ষকের অবৈধ এমপিওভুক্তির বিষয়ে অধিদপ্তরকে জাননি তিনি। হিসাব রক্ষণ বিষয়ের প্রভাষক এম এ রেজা এবং উদ্যোক্তা উন্নয়ন বিষয়ের প্রভাষক মো: রোকনুজ্জামান জালিয়াতির সাথে সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করেছেন। প্রতিবেদনে মো: মোস্তাফিজুর রহমানের বক্তব্য সঠিক নয় বলেও উল্লেখ করা হয়।
৪৯তম এমপিও সভায় উপস্থাপন করা হলে, জালিয়াতি করে এমপিওভুক্ত হওয়ায় হিসাব রক্ষণ বিষয়ের প্রভাষক এম এ রেজা এবং উদ্যোক্তা উন্নয়ন বিষয়ের প্রভাষক মো: রোকনুজ্জামানের এমপিও বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার কেল্লাবাড়ী কারিগরি ও ব্যবস্থাপনা কলেজের হিসাবরক্ষণ বিষয়ের প্রভাষক এম এ রেজা এবং উদ্যোক্তা উন্নয়ন বিষয়ের প্রভাষক মো: রোকনুজ্জামানের এমপিও বাতিলের বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়।