ঝলসানো মুখ। সাদা ব্যান্ডেজে মোড়ানো দুই হাত। প্রথম দেখায় নিষ্প্রাণ মনে হলেও দু-একবার চোখের পলক ফেলে জানান দিচ্ছে নিজের অস্তিত্বের। নিস্তেজ দেহ প্রাণবন্ত হবে—সেই আশায় অপেক্ষায় স্বজনরা। এই হাল চট্টগ্রামে গ্যাসলাইন বিস্ফোরণে অগ্নিদগ্ধ হয়ে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা অর্পিতা রানী দেবীর।
তার ঠাঁই হয়েছে ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন ইউনিটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে। গতকাল সোমবার বিকেলে সেখানে গিয়ে এমন চিত্রই চোখে পড়ে। গত রবিবার সকালে অগ্নিদগ্ধ হয়ে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হলেও অবস্থার অবনতি হওয়ায় রাতেই তাকে ঢাকায় আনা হয়।
পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চট্টগ্রামের অপর্ণা চরণ সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী অর্পিতা। আগামী ২৭ নভেম্বর নবম শ্রেণির ফাইনাল পরীক্ষা তার। আর এখন হাসপাতালের বেডে শুয়ে জীবন বাঁচানোর পরীক্ষা দিচ্ছে অর্পিতা! বিস্ফোরণের সময় বাসায় বসে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিল সে।
তার মা-বাবা গ্রামের বাড়ি ছিলেন। বাসায় ছিল অর্পিতা, তার ছোট ভাই ও বড় মাসি। ছোট ভাই সকালের নাশতা আনতে বাইরে ছিল। অর্পিতা পড়ছিল আর মাসি ছিলেন প্রার্থনারত। ঠিক এমন সময় গ্যাসলাইন বিস্ফোরণ সব কিছু ওলটপালট করে দেয়। প্রাণবন্ত অর্পিতা ও তার মাসি ঢলে পড়েন। অর্পিতার মাসি চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
অর্পিতার শারীরিক পরিস্থিতি জানতে চাইলে কর্তব্যরত চিকিৎসক বলেন, ‘তার শরীরের ৩২ শতাংশ পুড়ে গেছে। সাধারণত শরীরের ২০ শতাংশের বেশি অংশ পুড়ে গেলে আমরা আশঙ্কাজনক হিসেবে বিবেচনা করে চিকিৎসা দিই। তবে শঙ্কার বিষয় হলো, তার শ্বাসনালিও পুড়ে গেছে। মুহূর্তেই যেকোনো বিপদ ঘটে যেতে পারে। এক সপ্তাহ না গেলে কিছুই বলা যাবে না।’
অর্পিতার বাবা কাজল কান্তি নাথ বলেন, ‘লেখাপড়ায় অনেক ভালো আমার অর্পিতা। পরীক্ষায় ভালো ফল করার জন্য পড়ছিল। ঠিক সেই সময় সব কিছু ওলটপালট হয়ে গেল। জানি না মেয়েটাকে বাঁচাতে পারব কি না। চিকিৎসার কোনো ত্রুটি হচ্ছে না।’