মানবজীবনে একটি অত্যাবশ্যকীয় কাজ হল, অর্থ উপার্জন করা। অর্থ উপার্জনের জন্য প্রয়োজন একটি পেশা, যে পেশা থেকে একজন মানুষ অর্থ উপার্জন করতে পারবে। সেই পেশাটা প্রধানত দু’রকমের হতে পারে- ১. চাকরি ২. ব্যবসা।
বর্তমানে আমাদের সমাজে দেখা যাচ্ছে, একটি বিশেষ চাকরি পাওয়ার জন্য আমরা প্রায় সবাই উঠেপড়ে লেগেছি। আর সেই চাকরিটি হচ্ছে, বিসিএস ক্যাডার; এ যেন আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ, যা পেলে আমাদের সব দুঃখ দূর হয়ে যাবে, জীবনের সব মুশকিল আছান হয়ে যাবে। অনেকের কাছে জীবনের অন্তিম ইচ্ছায় পরিণত হয়েছে এ চাকরিটি। মানুষ স্বভাবতই ভোগবিলাসী। বুধবার (২৬ জুন) যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত এ নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। নিবন্ধটি লিখেছেন হাসান তাসনিম শাওন।
সমাজে টিকে থাকতে হলে তার দরকার সম্মান, অর্থ, সামাজিক মর্যাদা, ক্ষমতা, নিরাপত্তা ইত্যাদি। আর এসবের অসীম আকাক্সক্ষার জন্যই একজন ছাত্র বিসিএস ক্যাডার হতে চায়। কিন্তু জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে চেষ্টা করার পরও অনেকেই পারছে না কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে। এতে বাকি জীবন হতাশাগ্রস্ত হয়ে কাটাচ্ছে অনেককেই।
আমি মনে করি, ‘হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা’ নামক বিসিএসের পেছনে ছোটা উচিত নয় আমাদের ছাত্র সমাজের। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্যে। বৈশ্বিক অবস্থার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে দরকার সৃজনশীল কিছু করা। আমাদের ছাত্র সমাজের এমন চাকরি প্রতিযোগিতায় ‘ইঁদুর দৌড়ের’ ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাগ্রহণে অনাগ্রহ তৈরি হচ্ছে।
একজন শিক্ষার্থী প্রথম বর্ষেই লাইব্রেরির দিকে ধাবমান হয় বিসিএসের পড়াশোনা করার উদ্দেশ্যে। তার উদ্দেশ্য থাকে শুধু একটি চাকরি পাওয়া। তাই তো অনেক সময় তার আচরণ-ব্যবহারে প্রকৃত শিক্ষার ছাপটি পাওয়া যায় না। শিক্ষা হয়ে ওঠে চাকরি পাওয়ার একমাত্র মাধ্যম। তাই তো শিক্ষা সার্টিফিকেট হয়ে বের হচ্ছে, জ্ঞান হয়ে নয়। বিসিএস কোনো মন্দ বিষয় নয়। মন্দ বিষয় হল, আমরা শুধু একটি কাঠামোর প্রতি অন্ধ হয়ে যাচ্ছি। বিসিএস ছাড়াও যে আরও অনেক কিছু করার আছে সেই দরজাটি কখনও খোলার চেষ্টা করছি না বা সাহস করছি না।
এজন্য কর্মমুখী শিক্ষার মাধ্যমে বিসিএস নামক চাপ কমিয়ে আনা দরকার। আমাদের দরকার মানসিকতার পরিবর্তন; দরকার চাকরিভিত্তিক পড়াশোনা না করে জীবনভিত্তিক পড়াশোনা করা। অন্য যে কোনো পেশাকে সমান শ্রদ্ধা ও সম্মান করা। সব সময় একটা কথা মনে রাখা দরকার- জীবনের জন্য চাকরি, চাকরির জন্য জীবন নয়।
শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়