এমপিওভুক্তির প্রত্যাশা কি অযৌক্তিক?

মো. সিদ্দিকুর রহমান |

শিক্ষা যে সর্বোৎকৃষ্ট বিনিয়োগ এ উপলব্ধিবোধ বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কর্মকাণ্ডে পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ ভাবনা থেকে প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বিনামূল্যে বই বিতরণ, প্রাথমিক শিক্ষা ও অনান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণসহ অসংখ্য উদ্যোগ বর্তমান সরকারের কার্যক্রমে দেখা যায়। শিক্ষা ক্ষেত্রে এসকল ঐতিহাসিক ও যুগান্তকারী উদ্যোগের ফলে বর্তমান সরকার শিক্ষাবান্ধব সরকার হিসেবে পরিচিত।

শিক্ষা ক্ষেত্রে বিশাল অর্জন সত্ত্বেও শিক্ষার্থীরা আজও কাঙ্খিত মানসম্মত শিক্ষা লাভ করতে পারেনি। তার অন্যতম কারন একটি জঘন্য দুষ্টচক্র স্বাধীনতার দীর্ঘ সময় পরেও মেধাবী চৌকষ তরুণদের শিক্ষকতা পেশা থেকে দূরে ঠেলে দিয়েছেন। তারাই যাদের অন্য কোন চাকরি করার সুযোগ নেই তাদের পণ্ডিতি করার সুযোগ করে দিয়েছেন। শুধুমাত্র প্রাথমিক শিক্ষা জাতীয়করণ করায় কিছু স্বল্প মেধাবী শিক্ষক প্রাথমিক শিক্ষায় এসেছেন। 

সকল পেশার মত শিক্ষকতা পেশাও জীবিকা অর্জনের মাধ্যম। শিক্ষকরা তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে স্বাচ্ছন্দে বসবাস করে এ মহান পেশায় মনোযোগী হবেন সংশ্লিষ্টদের এ দৃষ্টিভঙ্গি থাকা প্রয়োজন। 

শিক্ষকদের অন্নবস্ত্র, চিকিৎসা, বাসস্থান ও পরিবারের সদস্যদের শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত না করে আগামী প্রজন্মকে মানসম্মত শিক্ষা দেওয়ার অবাস্তব স্বপ্ন জাতি আর কত সময়ক্ষেপণ করে দেখবে জানিনা! শীঘ্রই মানসম্মত শিক্ষার স্বপ্ন বাস্তবায়নে শিক্ষকদের চাহিদাকে অবহেলা করার সুযোগ নেই।

পাকিস্তান আমলে একজন ছাত্র সংগঠনকর্মী হিসেবে বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলাম। সেদিনের রাজপথের একটি স্লোগান আজ বেশি বেশি মনে পড়ছে। তা হল “কেউ খাবেতো কেউ খাবেনা, তা হবেনা, তা হবেনা।” 

স্বাধীনতার দীর্ঘ সময় পরেও সবচেয়ে বেশি বৈষম্য বেড়েছে শিক্ষাক্ষেত্রে। শিশুশিক্ষায় আছে ১১ ভাগে বিভক্ত।  শিশুদের শিক্ষকদের বেতন হয়েছে সর্বনিস্ন ১০০০ থেকে ৫০০০০ টাকা পর্যন্ত। মাধ্যমিকে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন ১৬হাজার থেকে ৩০হাজার টাকা। বেশি আয়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো হয়তো বেশি পেয়ে থাকেন। সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বেতন লক্ষাধিক টাকার কমবেশি। 

অপরদিকে তৃণমূলের ননএমপিও শিক্ষকরা অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান থেকে তেমন কোন টাকা পান না। সরকারি টাকার ছোয়া থেকেও বঞ্চিত। বর্তমানে বাংলাদেশে ৫২৪২টি স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ননএমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে। বিদ্যালয়ের সার্বিক শিক্ষা পরিবেশ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার যাবতীয় শর্তপূরণ করে এসকল বিদ্যালয়গুলো স্বীকৃতিপ্রাপ্ত হয়েছে।স্বীকৃতিপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানে ২০-২৫ বছর শিক্ষকতা করেও এমপিওভুক্ত হতে পারেননি অনেকেই। 

১০ বছর যাবত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি বন্ধ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০১৮ খ্রিস্টাব্দের ৫ জানুয়ারি শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির প্রতিশ্রুতি দেন। অথচ শিক্ষাবান্ধব সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের পরিবর্তে চলছে সময়ক্ষেপণের পাশাপাশি শর্তের নামে নানা অপকৌশল। 

২০১৮ খ্রিস্টাব্দের ৫ জানুয়ারি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এমপিওভুক্তির প্রতিশ্রুতি সকল স্বীকৃতিপ্রাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এমপিওভুক্তির দাবিতে ১০ জুন থেকে রাজপথে নেমেছেন শিক্ষকরা। কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে শিক্ষক নেতারা গ্রেপ্তার হয়েছেন। শুধূ তাই নয় শিক্ষকরা পুলিশিবাধা, বৃষ্টি, রৌদ্র ও ভ্যাপসা গরম, রাতে মশার কামড় খেয়ে কুকুর বিড়ালের মত রাজপথের ২০ দিন লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের দিন পরিবার পরিজন ছেড়ে রাজপথে নামাজ আদায়, ভুখা মিছিল এবং প্রতীকী অনশন করেছেন। ২২ জুন মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে স্বারকলিপি প্রদান করার পরেও প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সরকারের কোন পদক্ষেপ না থাকায় ২৫ জুন থেকে আমরণ অনশনে যেতে বাধ্য হয়েছেন শিক্ষকরা।

মানসম্মত শিক্ষা বাস্তবায়নে যেখানে কাড়িকাড়ি শর্ত আরোপ করা প্রয়োজন সরকারি ও এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরকারি অর্থ টাকা খেয়ে যারা স্বচ্ছল বা মোটামুটি জীবিকা অর্জন করছেন তাদের। অথচ বিস্ময়ের সাথে লক্ষ করছি এখানেও তেলে মাথায় তেল দেয়ার প্রবনতা। যারা অর্থের অভাবে জীর্নশীর্ন দিনাতিকাল পার করছেন তাদের শর্ত।  শর্তের এ ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র পরিহার করে সরকারি স্বীকৃতিকে গুরুত্ব দিয়ে ননএমপিও শিক্ষকদের এ প্রত্যাশা কালক্ষেপণ করা মোটেই সমীচিন নয়। 

প্রাথমিক শিক্ষকদের বৈষম্য দূরীকরণের প্রস্তাব পিপড়ার মত ধীর গতিতে হাটতে হাটতে মন্ত্রণালয়ে প্রবেশ করেছে গত সপ্তাহে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেতৃত্বে মাঝে মন্ত্রী মহোদয়ের সাথে বসার আনন্দ উপভোগ করেছে বলে মনে হল। শিক্ষক প্রতিনিধিদের মধ্যে নাসরিন আক্তার বিলম্বের জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করলেও মন্ত্রী মহোদয় শিক্ষকদের উপর দায় চাপালেন। মন্ত্রী মহোদয় এক ধাপ বৈষম্য দূর করার ব্যবস্থা শীঘ্রই করবেন আশ্বাস দিলেন। এ বিষয়ে নেতৃবৃন্দের প্রতিবাদের কণ্ঠ একেবারেই নিরব। এ নিস্তব্ধতা মন্তীমহোদয়ের সাথে একত্মতা ভুলার মত নয়।

শিক্ষকদের মাঝে বৈষম্য সৃষ্টি করে শিক্ষার মানউন্নয়ন সম্ভব নয়। সহকারি শিক্ষকদের প্রধান শিক্ষকদের একধাপ নিচে বেতন প্রত্যাশা অযৌক্তিক নয়। তারাতো প্রধান শিক্ষকদের সমান বা বেশি দাবি করেননা। তবে কেন এ বিলম্ব ও বাহানা। 

পাকিস্তান আমলে কতিপয় রাজনৈতিক নেতা বৈষম্যের পক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধিতা করায় ঘৃনিত হয়েছেন। নেতৃবৃন্দ যথাযথ বৈষম্যদূরীকরণে ব্যার্থ হলে আস্তাকুড়ে যেতে হবে। 

ননএমপিও শিক্ষকদের সরকারের কাছে একদম নগন্য চাওয়া এমপিওভুক্তিকরণ। এমপিও শিক্ষাক্ষেত্রে সকল বৈষম্য দূর হোক। জাতি গড়ার কারিগর শিক্ষকদের বৈষম্য সৃষ্টি করার ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস আজকের প্রত্যাশা।

মো. সিদ্দিকুর রহমান:  আহ্বায়ক, প্রাথমিক শিক্ষক অধিকার সুরক্ষা ফোরাম। 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0039041042327881