ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের দুটি ভবনের মধ্যে একটিকে ব্যবহার অনুপযোগী ও ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয় ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে ভবনটির ছাদের পলেস্তারা খসে আহত হয় পাঁচজন। কিন্তু স্থানাভাবে ওই ভবনেই ঝুঁকি নিয়ে এখনো পাঠগ্রহণ করছে বিদ্যালয়ের অন্তত ৬০০ শিক্ষার্থী। চলতি বর্ষায় ভবনটিতে ফের বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত এ বিদ্যালয়ে বর্তমানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী সংখ্যা ১ হাজার ৫১। রয়েছেন ৩৫ জন শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী। প্রতিষ্ঠাকালে বিদ্যালয়ের উত্তর দিকে নির্মিত টিনের ঘরের স্থানে পাকা ভবন নির্মাণ করা হয় ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে। ১৪০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ২৯ ফুট প্রস্থের এ ভবনটিই বর্তমানে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এ ভবনে ১২টি কক্ষের মধ্যে আটটি শ্রেণিকক্ষ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। যেখানে নিয়মিত পাঠ নিচ্ছে ৬০০ শিক্ষার্থী। বাকি চারটি ব্যবহার করা হচ্ছে ল্যাব ও অফিস হিসেবে। এ ছাড়া বিদ্যালয়ের দক্ষিণে আরেকটি দ্বিতল ভবন রয়েছে। যেখানে মোট কক্ষ ছয়টি, এর চারটিতে পাঠদান করা হচ্ছে প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থীকে।
ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটির বিষয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানায়, ভবনের বিভিন্ন স্থানে ফাটল ধরেছে। প্রায়ই খসে পড়ছে ছাদের পলেস্তারা। এ অবস্থায় তারা সবসময়ই দুর্ঘটনার দুশ্চিন্তা নিয়ে ক্লাস করছে। শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগ থেকেও ভবনটি ব্যবহারে আপত্তি জানানো হয়েছে। কিন্তু অন্য উপায় না থাকায় তাদেরকে এখানেই ক্লাস করতে হচ্ছে।
নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী জানায়, ক্লাসে ঢোকার পর থেকে অধিকাংশ সময়ই তাদের দৃষ্টি ছাদের দিকেই থাকে। সবসময়ই তাদের মনে পলেস্তারা খসে পড়ার আতঙ্ক কাজ করে। বিশেষ করে ভবনটি ব্যবহারের অনুপযোগী ঘোষণা করার পর থেকে এ আতঙ্ক আরও বেড়ে গেছে।
শিক্ষকরা জানান, তাদের প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ১০০। কিন্তু শিক্ষার্থীর তুলনায় বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষের সংকট রয়েছে। ফলে চার বছর আগে ব্যবহার অনুপযোগী ঘোষণা হলেও ওই ভবনের শ্রেণিকক্ষে তাদেরকে পাঠদান করতে হচ্ছে। তা ছাড়া এখন যেভাবে বৃষ্টিপাত হচ্ছে, তাতে পলেস্তারা খসে পড়ার ঝুঁকি আরও বেড়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে অভিভাবকদের পাশপাশি তারাও আতঙ্কে আছেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইসাহক আলী বলেন, ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারিতে ঝিনাইদহ জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী এ বিদ্যালয়ে পরিদর্শনে আসেন। ওই সময় তিনি বিদ্যালয়ের উত্তর পাশের ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যবহার অনুপযোগী হিসেবে চিহ্নিত করেন। একই সঙ্গে তাদেরকে চিঠি দিয়ে ভবনটি ব্যবহার না করার জন্য জানিয়ে দেয়া হয়। পরবর্তীকালে মৃদু ভূমিকম্পে ভবনটির বেশকিছু স্থানে ফাটল দেখা দেয়। পলেস্তারা খসে পড়তে থাকে। এ অবস্থায় ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বরে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভবনটির বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
ইসাহক আলী আরও বলেন, পাঠগ্রহণের সময় শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা আতঙ্কের মধ্যে থাকে। কারণ মাঝে মধ্যেই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটির ছাদ থেকে পলেস্তারা খসে পড়ে। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ জুলাই ছাদ থেকে পলেস্তারা খসে পড়ে পাঁচজন মেয়ে গুরুতর আহত হয়। বর্তমানে এখানে নতুন একটি ভবন নির্মাণ ছাড়া এ ধরনের দুর্ঘটনার ঝুঁকি এড়ানোর অন্য কোনো উপায় নেই।
এ বিষয়ে কোটচাঁদপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রতন মিয়া জানান, বিদ্যালয়টির নতুন ভবন বরাদ্দের বিষয়ে চেষ্টা চলছে।