টাইমস্কেল সিলেকশন গ্রেড : মাধ্যমিক শিক্ষকদের কাছে আজও অধরা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের টাইমস্কেল-সিলেকশন গ্রেড ১৫ বছর ধরে ঝুলে আছে। এ কারণে প্রায় তিন হাজার শিক্ষক রয়েছেন নানামুখী হতাশায়। অসন্তোষ দানা বাঁধছে তাঁদের মনে। দাবি আদায়ের জন্য নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষকরা। টাইমস্কেল-সিলেকশন গ্রেড বাস্তবায়ন না হওয়ার পেছনে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের অবহেলা ও সমন্বয়হীনতাকে দুষছেন তাঁরা। শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন শিমুল নজরুল।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, ভুক্তভোগী শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকদের ন্যায্য টাইমস্কেল-সিলেকশন গ্রেড, যা তাঁরা বেতনস্কেল ২০০৯ অনুযায়ী পান, সেটাই আটকে আছে বছরের পর বছর। সরকারের অন্যান্য বিভাগে পদ না থাকলেও পদোন্নতি চলছে। অথচ সরকারি মাধ্যমিকে শত শত প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, সহকারী জেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তা ও আঞ্চলিক উপপরিচালক পদগুলো খালি রয়েছে দিনের পর দিন। প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন থাকার পরও তাঁদের পদোন্নতি ও পদবিন্যাস ঝুলে আছে।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহাব উদ্দীন মাহমুদ সালমী বলেন, নিয়োগের শর্ত অনুযায়ী ১৫ বছরে দুটি টাইমস্কেল পাওয়ার কথা থাকলেও সরকারি মাধ্যমিক স্কুলের অনেক শিক্ষক একটি টাইমস্কেলও পাননি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সমন্বয়হীনতার কারণে শিক্ষকরা বঞ্চিত হচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, সরকারি মাধ্যমিকের সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য ইতোমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরা হয়েছে। এ ব্যাপারে দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাস দেয়া হলেও কার্যকর উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। বকেয়া টাইমস্কেল-সিলেকশন গ্রেড, শূন্যপদে পদোন্নতি এবং কর্মরত শিক্ষকদের মর্যাদা অক্ষুণ্ন রেখে আত্তীকরণ বিধিমালা করা না হলে আন্দোলন ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় থাকবে না।

শিক্ষক নেতারা বলেন, সরকারিকরণ প্রক্রিয়ায় বেসরকারি শিক্ষকদের আত্তীকরণের সময় বর্তমানে কর্মরত সরাসরি নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের স্বার্থ সংরক্ষিত হচ্ছে না। বিশেষত, চাকরির সিনিয়রিটি নির্ধারণের ক্ষেত্রে তালগোল পাকানো অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। যেমন—সপ্তম গ্রেডের বেসরকারি প্রধান শিক্ষকরা আত্তীকরণ হচ্ছেন ষষ্ঠ গ্রেডে। যেখানে ১৩-১৪ বছরেও সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকরা প্রথম টাইমস্কেলই পাচ্ছেন না, সেখানে মাত্র আট বছরে সহকারী প্রধান শিক্ষক বনে যাওয়া বেসরকারি শিক্ষকরা সরকারিকরণের পরও সহকারী প্রধান শিক্ষকই থেকে যাচ্ছেন।

শিক্ষকরা জানান, শিক্ষানীতি ২০১০ অনুযায়ী মাধ্যমিক শিক্ষার জন্য আলাদা অধিদপ্তর না হওয়াই এর সমস্যাগুলোর মূল কারণ। সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকরা ন্যায্য অভিভাবকত্বহীনতায় ভুগছেন। আলাদা মাদরাসা ও কারিগরি অধিদপ্তর ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠিত হলেও শিক্ষানীতি প্রণয়নের ১০ বছর হতে চললেও স্বতন্ত্র মাধ্যমিক অধিদপ্তর বাস্তবায়নের দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেই। তাই মাধ্যমিক শিক্ষা ক্যাডার পরিচালিত মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমে তাঁরা শুধু শাসিত নন, শোষিতও হচ্ছেন। যেমন—মাধ্যমিকের জন্য নেওয়া প্রকল্পগুলোতে মাধ্যমিক শিক্ষকদের কোনো অংশগ্রহণ নেই শুধু প্রান্তিক প্রশিক্ষণ নেয়া ছাড়া। শিক্ষা বোর্ডগুলোতে মাধ্যমিক শিক্ষকদের পরীক্ষক হওয়া ছাড়া আর কোনো কর্মকাণ্ডে ভূমিকা নেই। মাধ্যমিক শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী হওয়ার পরও পেশাগত ডিগ্রি বিএড ও এমএড ডিগ্রিও অর্জন করে থাকেন। যথাযথ যোগ্যতা থাকার পরও মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে তাঁদের জন্য মাত্র তিনটি পদ সংরক্ষিত, তাও দীর্ঘদিন ধরে অনিয়মিত। মাধ্যমিক শিক্ষকদের মধ্য থেকে আসা আঞ্চলিক উপপরিচালকরা ২০ বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত। এমনকি সেসিপ প্রকল্প পরিচালকের বাতাবরণে আঞ্চলিক পরিচালকের পদও এখন কলেজ শিক্ষকদের দখলে।

দীর্ঘদিন ধরে দাবি আদায় না হওয়ায় বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির নেতারা আদালতের পথে হাঁটেন। ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ২ মে সুপ্রিম কোর্ট শিক্ষকদের পক্ষে রায় দেন। ওই সময় তিন মাসের মধ্যে রায় বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেন আদালত। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় আদালতের নির্দেশ এখনো বাস্তবায়ন করেনি।

এ ব্যাপারে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. গোলাম ফারুক বলেন, বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। সরকার পক্ষ ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছে। তাই আদালতের বিচারাধীন বিষয় নিয়ে কিছু বলতে চাই না। আদালতই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0028491020202637