১৫তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার ফল পরিবর্তনের নামে নিরীহ প্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায়ে তৎপরতা শুরু করেছে কয়েকেটি অসাধু চক্র। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন পোস্ট দিয়ে ‘ফেল থেকে পাস’ করানোর নামে প্রার্থীপ্রতি ৭ থেকে ১০ হাজার টাকা আদায়ের চেষ্টা করছে তারা। অনেক প্রার্থী না বুঝেই প্রতারকদের ফাঁদে পা দিচ্ছেন। তবে টাকা দিয়ে ফল পরিবর্তন করা সম্ভব নয় বলে দৈনিক শিক্ষাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান এস এম আশফাক হুসেন। এ ধরনের নজির দেখাতে পারলে চাকরি ছেড়ে দেয়ার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে চেয়ারম্যান জানান, প্রতারকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গত ১৯ মে প্রকাশিত ১৫তম শিক্ষক নিবন্ধনের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। প্রিলিমিনারিতে ৮ লাখ ৭৬ হাজার ৩৩ জন প্রার্থী অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন ১ লাখ ৫২ হাজার জন। অকৃতকার্য ৭ লাখের বেশি প্রার্থীকে টার্গেট করেই তৎপরতা চালাচ্ছে প্রতারক চক্রগুলো। নিবন্ধনের ফল প্রকাশের পর থেকেই ফেসবুকে নিবন্ধন প্রার্থীদের বিভিন্ন গ্রুপে কিছু পোস্ট নজরে এসেছে দৈনিক শিক্ষার। এ পোস্টগুলোতে অকৃতকার্য প্রার্থীদের দেখানো হচ্ছে ফল পরিবর্তনের আশা।
রাকিব শেখ নামের একটি আইডি থেকে ফেসবুকে দেয়া একটি পোস্টে ১৫তম শিক্ষক নিবন্ধনের প্রিলিমিনারিতে ফল পরিবর্তন করে টাকা আদায়ের চেষ্টা চলছে। পোস্টটিতে ফেল থেকে পাস করিয়ে দিবেন বলে শতভাগ গ্যারান্টি দিয়ে প্রার্থী প্রতি ফল পরিবর্তনের নামে চাওয়া হচ্ছে ৭ হাজার টাকা। এর মধ্যে ৪ হাজার টাকা দিতে হবে অগ্রিম। টাকা পাঠাতে দেয়া হয়েছে মোবাইল ব্যাংকিং সিস্টেমে নিবন্ধিত একটি ফোন নম্বর। ফল পরিবর্তনের পর বাকি টাকা পরিশোধের সুবিধা দেয়ার কথাও বলা হয়েছে ওই পোস্টে। এমনকি সাত হাজার টাকার বিনিময়ে ফেল করা প্রার্থীদের পাস করিয়ে মোবাইলে এসএমএস ও এনটিআরসিএর ওযেবসাইটে ফল পরিবর্তন করে দেয়ার নিশ্চয়তাও দেয়া হয়েছে।
১৫তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় ৭ লাখের বেশি প্রার্থী অকৃতকার্য হয়েছেন প্রিলিমিনারিতে। তাদের অনেকেই এসব প্রতারকদের টাকা দিচ্ছেন বা দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন নিবন্ধিত শিক্ষক হবার আশায়। কয়েকজন প্রার্থী জানান, এনটিআরসিএর কর্মকর্তাদের নাম ব্যবহার করে টাকা চাওয়া হচ্ছে। তারা কয়েকজন কর্মকর্তার নাম ব্যবহার করে প্রার্থীদের ফল পরিবর্তনের আশ্বাসও দিচ্ছেন।
তবে টাকা দিয়ে ফল পরিবর্তন করার বিষয়টি অসম্ভব বলে দৈনিক শিক্ষাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান এস এম আশফাক হুসেন। টাকা দিয়ে ফল পরিবর্তন করার নজির দেখাতে পারলে চাকরি ছেড়ে দেবেন দাবি করে চেয়ারম্যান জানান, কয়েকজন কর্মকর্তার নাম ব্যবহার করে টাকা আদায়ের চেষ্টা হচ্ছে, যা আমরাও জানতে পেরেছি। কিন্তু বিষয়টি সঠিক না। প্রতারকরা কর্মকর্তাদের নাম ব্যবহার করে প্রার্থীদের বিশ্বাস আদায়ের চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, টাকা দিয়ে ফল পরিবর্তন অসম্ভব। তৈরি করা ফল আমরা দেখার আগেই উত্তীর্ণ প্রার্থীরা মোবাইলে এসএমএস পান। প্রকাশের একটু আগেও ফল দেখতে পারি না আমরা।
এনটিআরসিএর সব কার্যক্রম স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত দাবি করে চেয়ারম্যান আশফাক হুসেন জানান, যেসব প্রতারক টাকা আদায়ের চেষ্টা করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর প্রার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যদি কেউ ফল পরিবর্তনের নামে টাকা চায় তাহলে বুঝবেন প্রতারণা। কারণ ফল পরিবর্তন সম্ভব নয়। টাকা চাইলে তাকে সাথে সাথে পুলিশে হস্তান্তর করুন।
আশফাক হুসেন আরও বলেন, যদি কোনো কর্মকর্তার নামে টাকা চাওয়া হয় তাহলে এনটিআরসিএকে বিষয়টি জানান। পুলিশের সহায়তা নিন। টাকা দিয়ে ফল পরিবর্তন সম্ভব নয়। ফল প্রক্রিয়ার পুরো বিষয়টি কম্পিউটার করে। কোনো পরীক্ষকও খাতা দেখেনি। ফল পরিবর্তনের আশায় বুক বাঁধলে নিজেই ক্ষতিগ্রস্থ হবেন বলে হুঁশিয়ার করেন তিনি।