টি-সেল কি আসলেই করোনার বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেবে?

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা যায় যে কোভিড-১৯ আক্রান্তদের দেহে যে এ্যান্টিবডি তৈরি হয় তা মাত্র তিন মাসের মধ্যে শরীর থেকে নেই হয়ে যেতে পারে।

অনেক বিজ্ঞানী বলেছিলেন করোনাভাইরাসে একবার সংক্রমিত হলে দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা খুব কম। কিন্তু এর এ্যান্টিবডি যদি মাত্র তিন মাস স্থায়ী হয়, তাহলে তো একবার করোনাভাইরাস সংক্রমণের তিন মাস পরেই আপনি আবার আক্রান্ত হতে পারেন। করোনাভাইরাসকে চিরতরে দূর করার সম্ভাবনাও তাহলে এক বিরাট ধাক্কা খাচ্ছে।

কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলছেন, তা নয়, তারা আশা রাখছেন মানুষের রক্তে যে 'টি-সেল' নামে রহস্যময় এক ধরনের শ্বেতকণিকা আছে - তার ওপর। বলা হচ্ছে, টি-সেলও মানবদেহে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি করে এবং তা অনেক বেশি দীর্ঘস্থায়ী হয়। শনিবার (২৫ জুলাই) বিবিসি অনলাইনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। 

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, এমনকি, যার দেহে করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর কোন এ্যান্টিবডি তৈরি হয়নি - তার দেহেও টি-সেল করোনাভাইরাসকে চিনে রাখা এবং ধ্বংস করার ক্ষমতা অর্জন করে। একাধিক জরিপে এমন প্রমাণ পাওয়া গেছে।

ফ্রান্সিস ক্রিক ইনস্টিটিউটের একটি গবেষকদলের প্রধান এবং লন্ডনের কিংস কলেজের ইমিউনোরজির অধ্যাপক এ্যাড্রিয়ান হেডে বলছেন, ২০০২ সালে যে সার্স ভাইরাস (এটিও এক ধরণের করোনাভাইরাস) ছড়িয়েছিল - তাতে যারা আক্রান্ত হয়েছিলেন তাদের দেহে কয়েক বছর পরও গবেষকরা টি-সেলের অস্তিত্ব পেয়েছিলেন।

"তার মানে হলো এই লোকেরা সেরে ওঠার অনেক পরেও টি-সেল বহন করছিলেন - এবং এটা আমাদের চিন্তার সাথে মিলে যাচ্ছে।"

অনেকের দেহেই এ্যান্টিবডি নেই, কিন্তু টি-সেল আছে
বেশ কিছুকাল ধরেই এমন আভাস পাচ্ছিলেন বিজ্ঞানীরা।

তারা এমন বেশ কিছু কোভিড-১৯ রোগ পেয়েছেন - যারা কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছেন, তার পর সেরে উঠেছেন, কিন্তু বিস্ময়করভাবে তাদের দেহে কোন এ্যান্টিবডির অস্তিত্ব পাওয়া যায় নি।


এর পর এমন কিছু কোভিড-১৯ রোগীর সন্ধানও পাওয়া যেতে থাকে যাদের দেহের এ্যান্টিবডিগুলো কয়েক মাসের মধ্যেই অদৃশ্য হয়ে গেছে।

তখন বিজ্ঞানীদের ধারণা হয় যে করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করতে হলে তা হয়তো আসবে টি-সেলের মতো কিছু থেকে।

টি-সেল কী?
টি-সেল হচ্ছে মানুষের রক্তের মধ্যে থাকে এমন একটি রোগপ্রতিরোধী কোষ।

এর প্রধান কাজ হলো মানবদেহে কোন প্যাথোজেন (অর্থাৎ রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস) বা কোন সংক্রমিত কোষ ঢুকে পড়লে তাকে চিহ্নিত করা এবং মেরে ফেলা।

টি সেল। ছবি: সংগৃহীত

টি-সেলের ওপরের অংশে যে প্রোটিন থাকে তা দিয়ে সে অনুপ্রবেশকারীর গায়ের প্রোটিনের সাথে নিজেকে সেঁটে দেয় এবং তাকে ধ্বংস করে।


প্রতিটি টি সেলেরই বিশেষ ক্ষমতা আছে নির্দিষ্ট কিছু টার্গেটকে চিহ্নিত করার ।

এই টি-সেল মানবদেহে বছরের পর বছর ধরে সক্রিয় থাকে । ফলে এরা আগে আক্রমণ করেছিল এমন শত্রূদের "মনে রাখতে" পারে - তারা আবার অনুপ্রবেশ করেছে এমন টের পেলেই তাদের ওপর আক্রমণ চালায়।

টি-সেল ও কোভিড-১৯
একাধিক জরিপে দেখা গেছে - যারা কোভিড-১৯এ আক্রান্ত হয়েছেন তাদের অনেকের দেহে এই ভাইরাসকে আক্রমণ করেছে এমন টি-সেল পাওয়া যায়।

এমনকি যাদের দেহে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হবার পর এ্যান্টিবডি পাওয়া যায়নি - তাদের রক্তেও টি-সেল পাওয়া গেছে।

তার মানে দাঁড়ায়, করোনাভাইরাস প্রতিরোধের ক্ষমতা আছে এমন লোকের সংখ্যা আসলে হয়তো আগে যা ভাবা হয়েছিল তার চেয়ে অনেক বেশি।

সবচেয়ে অদ্ভূত ব্যাপার হলো - করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর অনেক বছর আগে নেয়া রক্তের নমুনাতেও এমন ধরণের টি-সেলের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে - যার কোভিড-১৯ ভাইরাসের প্রোটিন চিহ্নিত করার বিশেষ ক্ষমতা আছে।

তার মানে হলো, চীনে নতুন করোনাভাইরাসের আবির্ভাবের অনেক আগে থেকেই অনেক মানুষের দেহে এটিকে অন্তত: কিছুটা প্রতিরোধ করার ক্ষমতা ছিল।

এর অনুপাতও কম নয়: বিজ্ঞানীরা বলছেন, যারা এখনো করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হননি এমন মানুষদের ৪০ থেকে ৬০ শতাংশের দেহে এই টি-সেল পাওয়া গেছে।

তার মানে টি-সেল হয়তো কোভিড-১৯ সংক্রমণ প্রতিরোধক্ষমতার এক গোপন উৎস - যা এতদিন অজানা ছিল।

অধ্যাপক হেডে বলছেন, "আমরা কোভিড-১৯ রোগীদের দেখেছি, এবং যারা করোনাভাইরাস সংক্রমিত হয়েছেন কিন্তু হাসপাতালে যাবার দরকার হয়নি এমন লোকদেরও দেখেছি - এবং এটা একেবারেই স্পষ্ট হয়ে গেছে যে এক্ষেত্রে টি-সেল সক্রিয় হয়েছে।"


অতি সম্প্রতি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষকদের আবিষ্কৃত যে টিকাটি প্রাথমিকভাবে "নিরাপদ এবং কার্যকর" বলে ঘোষিত হয় - সেটি মানবদেহে এ্যান্টিবডি এবং টি-সেল দুটোই উৎপন্ন করতে পারে বলে দেখা গেছে।

তবে টি-সেলের প্রতিরক্ষাও সবক্ষেত্রে কাজ করে না

সমস্যাটা হলো করোনাভাইরাসে যারা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন - তাদের ক্ষেত্রে কিন্তু টি-সেলের প্রতিরোধ তেমন কাজ করেনি।

অধ্যাপক হেডে বলছেন, এইডস রোগীদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, এইচআইভি ভাইরাস মানবদেহের টি-সেলগুলোকে মেরে ফেলছে। তবে কোভিড-১৯ ভাইরাসের হাতে টি-সেল মারা পড়ছে - এমন কোন প্রমাণ এখনো পাওয়া যায় নি।

কিন্তু গুরুতর অসুস্থ কোভিড-১৯ রোগীদের ক্ষেত্রে টি-সেল কিছু করতে পারছে না কেন?

অধ্যাপক হেডে বলছেন, এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা এর উত্তর জানেন না।

অনেকে বলছেন, বয়স্ক মানুষদের রক্তে টি-সেলের সংখ্যা কমে যায়, এবং সেটাই হয়তো কোভিড-১৯এ তাদের গুরুতর আক্রান্ত হওয়া বা মারা যাবার কারণ।

কোভিড-১৯এ মারা যাওয়া রোগীদের মৃতদেহ ব্যবচ্ছেদ করে দেখা গেছে যে তাদের প্লীহা (স্প্লিন) এবং লসিকা গ্রন্থি (লিম্ফ গ্ল্যান্ড) গুলোতে এক ধরণের পচন ধরেছে - যাকে বলে নেক্রোসিস।

এটা গুরুত্বপূর্ণ - কারণ মানবদেহের ঠিক এই অংশগুলোতেই টি-সেল বাস করে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি - dainik shiksha চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0057878494262695