টিউশনিতে গৃহকর্তার খপ্পরে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী

এস এম রানা |

চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানা এলাকার বাসিন্দা চন্দনা চৌধুরী (ছদ্মনাম) উচ্চশিক্ষিত ও স্মার্ট তরুণী। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এই ছাত্রী টিউশনি করেন।

আর টিউশনি করতে গিয়ে পড়েন গৃহকর্তা দুলাল দাসের (ছদ্মনাম) খপ্পরে। শারীরিক সম্পর্কের ছবি ধারণ করে তিনি বিপাকে ফেলেন তরুণীকে। ধারাবাহিকভাবে গৃহকর্তার ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে এক পর্যায়ে বিরক্ত হন এই তরুণী।
ঘটনার বিষয়ে নগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার (বন্দর) আসিফ মহিউদ্দীন বলেন, ‘অনেক ছাত্রী টিউশনি করেন। এটা দোষের কিছু নয়। কিন্তু শিক্ষার্থীর বাবা দুলাল দাস ওই তরুণীর কিছু স্পর্শকাতর ছবি তোলে তরুণীকে নিয়মিত ধর্ষণের চেষ্টা করেছিলেন। পরে গৃহকর্তাকে গোয়েন্দা কার্যালয়ে ধরে আনা হয়। ’

গোয়েন্দা কর্মকর্তা আসিফ মহিউদ্দীনের ভাষ্যমতে, চন্দনা চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন। নিজের শিক্ষা ব্যয় জোগাড় করতে তিনি টিউশনি করেন।

সেই সুবাদে কোতোয়ালী থানা এলাকার বাসিন্দা দুলাল দাসের সন্তানকে পড়ানোর দায়িত্ব নেন চন্দনা। দুলাল দাসের স্ত্রী একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় চাকরি করেন। সেই সুবাদে তিনি দিনের বেশির ভাগ সময়ই বাসায় থাকেন না। এ সুযোগে সন্তানকে পড়াতে আসা তরুণীর সঙ্গে বন্ধুত্ব করেন দুলাল দাস। বন্ধুত্ব একসময় গভীরতা পায়। এক পর্যায়ে দুলাল দাসের ডাকে সাড়া দেন চন্দনা চৌধুরী। দুলালের সন্তান স্কুলে যাওয়ার পর বাসা খালি থাকে। সেই সুযোগে চন্দনা চৌধুরী আর দুলাল দাস শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। আর শারীরিক সম্পর্কের সময় বেশ কিছু ছবি ও ভিডিও ধারণ করে রাখেন দুলাল। এভাবেই তাঁদের দিন যাচ্ছিল। কিন্তু এক পর্যায়ে চন্দনা চৌধুরী বুঝতে পারেন বিবাহিত দুলাল দাসের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক চালিয়ে নেওয়া ঠিক হচ্ছে না। তাই চন্দনা ধীরে ধীরে দুলাল দাসের কাছ থেকে দূরে সরে যেতে থাকেন। ওদিকে দুলাল বারবার ডাকছিলেন চন্দনাকে।
কিন্তু চন্দনা চৌধুরী আর দুলাল দাসের ডাকে সাড়া দিচ্ছেন না। এটা বুঝতে পেরে দুলাল তাঁদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফাঁস করে দেওয়ার হুমকি দেন চন্দনাকে। এতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন চন্দনা। দুলাল দাসের কাছে আর যাচ্ছেন না। তাই ক্ষিপ্ত হয়ে দুলাল দাস একদিন চন্দনার ফেসবুক ইনবক্সে তাঁরই স্পর্শকাতর ছবি পাঠিয়ে দেন। সেই সঙ্গে হুমকি দেন, যদি চন্দনা চৌধুরী সাড়া না দেন, তাহলে সব ছবি ফেসবুকসহ ইন্টারনেটে ছেড়ে দেবেন।

এমন হুমকির পর চন্দনা চৌধুরী গোয়েন্দা কার্যালয়ে গিয়ে দুলাল দাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন। গোয়েন্দা পুলিশ অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা যাচাই-বাছাই করেন। এরপর গোয়েন্দা কার্যালয়ে ডেকে পাঠান দুলাল দাসকে। গোয়েন্দা কার্যালয়ে ডাক পড়ার পরপরই দুলাল রাজনৈতিক তদবির শুরু করেন। নগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের একজন ফোন করেন গোয়েন্দা কার্যালয়ে। দুলালকে কেন ডাকা হয়েছে-জানতে চান গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের কাছে। পরে গোয়েন্দা কর্মকর্তা ওই আওয়ামী লীগ নেতাকে জানান, দুলাল দাসকে গোয়েন্দা কার্যালয়ে আসতেই হবে, না হলে গ্রেপ্তার করে আনা হবে।

তাতেও দুলাল দাস গড়িমসি করছিলেন। ফলে দুলালকে ধরে আনতে হয় গোয়েন্দা কার্যালয়ে। শেষে ওই কার্যালয়ে দুলাল দাসের স্ত্রীসহ দুই পরিবারের সবাইকে ডেকে আনা হয়। নিজের স্ত্রীর সামনে দুলাল দাস স্বীকার করেন তিনি বাসা খালি থাকার সুযোগে চন্দনা চৌধুরীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন। সেই ছবিও ধারণ করেছেন। স্বামীর মুখে এমন তথ্য শুনে দুঃখ-ক্ষোভে কাঁদতে শুরু করেন দুলালের স্ত্রী।

শেষে দুলাল দাসের মোবাইল ফোনসহ অন্যান্য ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস থেকে চন্দনা চৌধুরীর সব স্পর্শকাতর ছবি মুছে দেন গোয়েন্দারা। চন্দনা চৌধুরীর সব ছবি উদ্ধারের পর তিনি সামাজিক মর্যাদার কথা বিবেচনা করে মামলা করেননি দুলাল দাসের বিরুদ্ধে। তাই মুচলেকা নিয়ে দুলাল দাসকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

এ প্রসঙ্গে গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (বন্দর) আবু বকর সিদ্দিক  বলেন, ‘চন্দনা চৌধুরী মামলা করেননি। তাই দুলাল দাসকে কারাগারে পাঠানো যায়নি। ’

তাঁর মতে, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন মানেই নৈতিক অবক্ষয়। এ অবক্ষয় রোধ করতে না পারলে আগামী প্রজন্ম আরো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার এবং সম্পর্ক গড়তে সবাইকে বেশি সর্তক থাকতে হবে। 

 

সৌজন্যে: কালের কণ্ঠ


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে পরীক্ষার আগেই হবু শিক্ষকদের হাতে পৌঁছে যায় উত্তরপত্র: ডিবি - dainik shiksha পরীক্ষার আগেই হবু শিক্ষকদের হাতে পৌঁছে যায় উত্তরপত্র: ডিবি দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0030081272125244